প্যারিসের শহরতলি ক্লিশেতে একটি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদ বিরোধিতার তিন বছরের পুরানো ছবি নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে ফ্রান্সে সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটার পর ফ্রান্সে মুসলিমদের প্রার্থনা করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
৪ মিনিট ১১ সেকেন্ড লম্বা ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার এক পাশে মুসলমানরা প্রার্থনা করছেন এবং রাস্তার উল্টো দিকে হাতে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা নিয়ে প্রতিবাদ-বিরোধীরা দাঁড়িয়ে আছেন।
বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে পড়াতে গিয়ে ফ্রান্সের এক শিক্ষক নবী হজরত মহম্মদের আপত্তিকর কার্টুন দেখান এবং তার ফলে ওই শিক্ষকের মাথা কেটে তাঁকে হত্যা করা হয়। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকে ফ্রান্স সম্পর্কে নানা ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এই আক্রমণের প্রতিবাদে সারা বিশ্বে ইসলামপন্থী উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর বিরুদ্ধে, বহু মানুষকে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। মাকরঁ ঘটনাটিকে "ইসলামপন্থী আতঙ্কবাদীদের" কাজ বলে বর্ণনা করেছেন।
ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে যে ক্যপশন দেওয়া হয়েছে তার অনুবাদ, "ফ্রান্সে নামাজ পড়ার সময় মুসলমানদের এই ভাবে হেনস্থা করা হয়। যে কোনও ধর্মের ক্ষেত্রেই তা ভুল।"
পোস্টটি দেখতে
এখানে এবং আর্কাইভ দেখতে
এখানে ক্লিক করুন।
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন- फ्रांस मे मुस्लिमो को नमाज पढ़ते हुए कैसे परेशान किया जा रहा है, धर्म कोई भी मगर ये गलत है।)
ফেসবুকে ভাইরাল
ফেসবুকে একই ক্যাপশন দিয়ে সার্চ করে আমরা সেখানেও দেখতে পাই ভিডিওটি একই মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির একটি গুরুত্বপূর্ন ফ্রেম দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০১৭ সালের কিছু সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই। ওই
প্রতিবেদনগুলিতে বলা হয়েছে ঘটনাটি প্যারিসের শহরতলি ক্লিশেতে ঘটে। সেখানে একটি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রায় ২০০ জন মুসলমান খোলা রাস্তায় তাঁদের শুক্রবারের নামাজ পড়ছিলেন। সেই সময় দক্ষিণপন্থী মেয়র রেমি মোজে একটি মিছিল নিয়ে তাঁদের দিকে অগ্রসর হন।
ভাইরাল ক্লিপের সঙ্গে মিলে যায় এ রকম একটি ছবি আমরা ইন্দোনেশিয়ার ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বরের একটি
প্রতিবেদনে দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদনের শিরোনামের অনুবাদ, "ফ্রান্সে প্রতিবাদীরা মুসলমানদের শুক্রবারের নামাজে বাধা দিল।"
ওই প্রতিবেদনের মধ্যে ইউটিউব ভিডিও ছিল যা এখন মুছে দেওয়া হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর মতো ওই ভিডিওতেও দেখানো হয় শুক্রবারের নামাজের সমাবেশের সামনে প্রতিবাদীরা চিৎকার করে গান গাইছে।
আমরা দেখতে পাই ২০১৮ সালে ইউটিউবে ওই একই ভিডিও আপলোড করা হয় সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়, "প্যারিসে ফান্সের জাতীয়তাবাদীদের দেখা গেল মুসলমানদের খোলা জায়গায় প্রার্থনা করার বিরোধিতা করতে।" একই ঘটনা পরম্পরা ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছে।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে রাশিয়া টুডের আপলোড করা ক্লিপেও একই জায়গায় একই প্রতিবাদসভা দেখতে পাওয়া গেছে। ওই ক্লিপটি আপলোড করা হয় যে ক্যাপশনের সঙ্গে, "একটি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে প্যারিসের উত্তর-পশ্চিম শহরতলিতে ক্লিশ-লা গার্নের টাউন হলের বাইরে প্রায় ২০০০ মুসলমান জনসমক্ষে শুক্রবারের নামাজ পড়ার জন্য জড়ো হন।"
বামে: ভাইরাল ক্লিপের দৃশ্য, ডানে: নভেম্বর ২০১৭ প্রতিবেদনের ছবি
২০১৭ সালে ক্লিশেতে ওই মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা এবং তার প্রতিবাদ সংক্রান্ত বহু
ক্লিপ মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্রান্সে প্যারিসের শিক্ষকের মাথা কেটে খুনের ঘটনার পর ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন বহু ভিডিও এবং ছবি মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে এবং বুম এর আগে এই ধরনের ছবি এবং ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে এবং সেগুলিকে মিথ্যে বলে প্রমাণ করেছে।