জম্মুর রজৌরি জেলায় এক ব্যক্তি দুই মহিলাকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে, দু বছর আগের এরকম একটা ভিডিও জিইয়ে তুলে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, এই ঘটনাটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের। সেই সঙ্গে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে, এ থেকেই নাকি প্রমান মেলে পাকিস্তানে হিন্দুরা কী অবস্থায় রয়েছে।
১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের এই অস্বস্তিকর ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি একটি খোলা জায়গায় দুই মহিলাকে গালাগাল দিচ্ছে এবং লাঠি দিয়ে মারছে। লোকটি দুই মহিলার একজনকে জিগ্যেস করছে, "আর দ্বিতীয় বার যাবি?" জবাবে মহিলাটি বলছে, "না, না, যাব না। এবারের মতো মাফ করে দে।"
ভিডিওটি দেখতে অস্বস্তি হতে পারে ভেবে বুম সেটি এই প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত করেনি।
ভিডিওটির যে ক্যাপশন হিন্দিতে দেওয়া হয়েছে, তার অনুবাদ, "ইমাম, কামরা, আফরা আর স্বরা। এরা পাকিস্তানে বসবাসকারী চার বোন। ওদের কষ্টের প্রতি দয়া করে সহানুভূতি দেখান। যদি কিছু অনুভব করেন, সেটা প্রকাশ করুন। আপনারা রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য সহানুভূতি দেখাচ্ছেন! তাহলে হিন্দুদের ব্যাপারে এত উদাসীন, বীতশ্রদ্ধ কেন? সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) এবং এনআরসি-কে (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) সমর্থন করুন।"
(হিন্দিতে মূল পোস্ট: इमाम , कामरा, अरफ़ा, स्वरा, ये पाकिस्तान में हिंदू बहनें हैं, इन बहनों का दुःख दर्द समझ, आये तो कुछ व्यक्त भी कर देना, रोहिंग्या व बांग्लादेशी घुसपेठियों, से तो बहुत याराना है, हिंदुओं से इतनी घृणा क्यों है ? #CAA_NRC_support)
অন্য একটি ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানের এই হিন্দুরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায় বলে তাদের এভাবে নিগ্রহ করা হচ্ছে।
বুম দেখেছে, ভিডিওয় ছড়ানো দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কারণ নিগৃহীত এই মহিলারা সকলেই মুসলিম, আর ঘটনাটি পাকিস্তানের নয়, জম্মুর রজৌরি জেলার এবং নিগ্রহকারীর নাম পবন কুমার ওরফে পাম্মা।
ভিডিওটি পুনরায় টুইট করেছেন দিল্লির সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত প্যাটেলউমরাও , যার এর আগে ছড়ানো একাধিক সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধিমূলক ভুয়ো খবরের পর্দাফাঁস করেছে বুম।
আমরা ওই একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে অনুসন্ধান করে দেখেছি, সেখানে ভিডিওটি ভুয়ো ক্যাপশন সহ অনেকে শেয়ার করছে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে খোঁজখবর চালিয়ে দেখেছে, ২ বছর আগে এটি ডেইলি হান্ট নামে এক সংবাদ-মাধ্যমে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়। সেই খবরের সূত্র অনুসরণ করে আমরা দেখি, ২০১৮ সালের জুন মাসে এটি প্রকাশিত হয় এবং সে সময় অনেকেই টুইটে ভিডিওটির স্ক্রিনশট শেয়ার করে।
এমনই একজনের টুইটে লেখা হয়, ঘটনাটি জম্মুর রজৌরি জেলায় ২০১৮ সালের ১৩ জুন ঘটেছিল এবং পুলিশ নিগ্রহকারী ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে রণবীর পেনাল কোডের (যা ভারতীয় দণ্ডবিধির পরিবর্তে কেবল জম্মু-কাশ্মীরে প্রযোজ্য হতো) প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলাও করে।
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হওয়ার পর ওই রণবীর পেনাল কোডকে সরিয়ে ভারতীয় দণ্ডবিধিই সেখানে বলবৎ হয়েছে। টুইটটি নীচে দেখুন।
Merciless beating of two Rajouri Ladies.Accused Pawan Kumar @ Pamma wanted in case FIR No.307/2018 u/s 452/354/325/323/34 RPC Police Station Rajouri arrested in a midnight raid from a hideout in Kathua District . Well done @JmuKmrPolice @ManhasYougal @RAJOURIPOLICE @ManhasYougal pic.twitter.com/2KjWYGvgeE
— Guftar Ahmed (@GuftarAhmedCh) June 21, 2018
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সংবাদপত্রে প্রকাশিত পিটিআই সংবাদসংস্থার খবর অনুযায়ী, "সোশাল মিডিয়ায় সোমবার ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওয় রজৌরির বাসিন্দা পবন কুমারকে (ওরফে পাম্মা) দেখা গেছে, সাকিনা বেগম(৪৫) ও তাঁর মেয়ে আবিদা কওসরকে(২০) সে ক্রমাগত লাথি মারছে এবং একটা কাঠের লাঠি দিয়ে মারছে। নেটিজেনরা ঘটনাটির তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং পবন কুমারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।"
পিটিআই-কে এক পুলিশ অফিসার জানান, "মহিলারা অভিযোগ করেন, একটা বাথরুম ব্যবহার করার জন্য লোকটি তাঁদের এ ভাবে মারধর করেছে, কিন্তু লোকটি জানায় যে ওই দুই মহিলা নাকি তার ছেলেকে চড়-চাপড় মেরেছে।"
জম্মু পুলিশের মিডিয়া কেন্দ্র থেকেও ঘটনাটি নিয়ে একটি টুইট বুম-এর নজরে এসেছে।
J&K Police of Rajouri district managed to arrest main accused wanted in the case of merciless beating of mother - daughter duo, a video of which is also viral on social media from a hideout in Kathua in Mahreen tehsil of Police Station Raj Bagh during the mid- night of today . pic.twitter.com/pFgiF5B1lT
— Police Media Centre Jammu (@ZPHQJammu) June 21, 2018
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, রণবীর পেনাল কোডের বিভিন্ন ধারায় পবন কুমারকে অভিযুক্ত করা হয়, যেমন আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিয়ে বাড়ির মধ্যে অনধিকার প্রবেশ, হামলা চালানো বা আটকে রাখা (৪৫২ ধারা), শ্লীলতা হানির উদ্দেশ্য নিয়ে মহিলাকে মারধর করা বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করা (৩৫৪ ধারা), ইচ্ছাকৃতভাবে আহত করা (৩২৫ ধারা) এবং অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে কয়েকজন মিলে হামলা চালানো (৩৪ ধারা) ইত্যাদি।