২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলা সংশোধানাগার থেকে ডঃ কাফিল খান ছাড়া পাওয়ার পর প্রেসকে বাইট দেওয়ার পুরনো ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে তিনি জামিন পেয়েছেন। সূত্রে খবর ২৭ জুলাইয়ের নির্ধারিত জামিনের শুনানির দিন পিছিয়ে হয়েছে ৫ অগস্ট।
কয়েকদিন ধরেই সোশাল মিডিয়ায় পুরনো ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে ডঃ কাফিল খানের মুক্তি নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। বুম ডাক্তার খানের আইনজীবী এবং মথুরা জেলের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট সঙ্গে আগেই কথা বলে জেনেছে, ডাক্তার খানকে এখনও জেলেই রয়েছেন।
ভাইরাল হওয়া ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে ডঃ কাফিল খানকে প্রেসের সামনে বাইট দিতে দেখা যায়।
পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''ডাক্তার কাফিল খান জামিন পেলেন''
ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মুম্বই বাগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) প্রতিবাদ জমায়েতে অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার পথে ডাক্তার কাফিল খানকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের অফিসাররা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী এক জমায়েতে প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দেওয়ার দায়ে তাঁকে খোঁজা হচ্ছিল।
গ্রেফতারির পর ডাক্তার খানকে আলিগড়ে নিয়ে আসা হয় এবং তাঁকে মথুরা জেলে পুরে দেওয়া হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিন পান কিন্তু জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দেয়নি। এর তিন দিন পর ১৩ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশ সরকার জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তাঁকে নতুন করে গ্রেফতার করে। তাঁর কারাবাসের মেয়াদ তিন মাস পূর্ণ হওয়ার পর ১২ মে কর্তৃপক্ষ ডাক্তার খানের আটক থাকার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) তাঁকে ৬ মাসের জন্য গ্রেফতার করা হয়, যার মধ্যে তিন মাস ইতিমধ্যেই তাঁর কারাবাস করা হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, এই আইনে এক বছর পর্যন্ত বিনা বিচারে কাউকে আটক করে রাখা যায়।
আরও পড়ুন: ডঃ কাফিল খান জামিন পেলেন বলে শেয়ার হল পুরনো ভিডিও
তথ্য যাচাই
বুম এই খবরের সত্যতা জানতে ইন্টারনেটে খোঁজ চালায়, কিন্তু এ ধরনের কোনও সংবাদ সেখানে পাওয়া যায়নি। এর পর আমরা ডাক্তার খানকে যেখানে আটক রাখা হয়েছে, সেই মথুরা জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেখানকার সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট শৈলেন্দ্র কুমার মাইত্রে খবরটি ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেন। তিনি স্পষ্ট জানান, ডাক্তার খানকে এখনও মুক্তি দেওয়া হয়নি।
ডাক্তার খানের আইনজীবী ইরফান গাজির সঙ্গেও বুম যোগাযোগ করে এবং তিনিও খবরটি ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, "আমি জানি না কেন লোকে এসব গুজব ছড়াচ্ছে।''
ডাক্তার খানের জামিনের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য হয়েছিল সোমবার ২৭ জুলাই। সূত্রে খবর, তা পিছয়ে করা হয়েছে ৫ অগস্ট।
বুম কিওয়ার্ড সার্চ করে সিধি বাত ও নিউজনেশন১৮ নামে দুটি ইউটিউব চ্যানেলে ২৮ এপ্রিল ২০১৮ আপলোড করা দুটি ভিডিওর হদিস পায়। ওই দিনই উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেল থেকে ছাড়া পান তিনি।
ভিডিও দুটিতে সাংবাদিকদের সামনে বাইট দিতে দেখা যায় ডঃ কাফিল খানকে। সিধি বাত-এর ভিডিওটির ৪১ সেকেন্ড সময় থেকে দেখা যাবে ডঃ কাফিল খান প্রেসকে বাইট দিচ্ছেন।
২০১৭ সালে ডাক্তার কাফিল খানকে প্রথমবার গ্রেফতার করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে বিআরডি মেডিকেল কলেজে অক্সিজেনের অভাবে ৬০টি শিশুর মৃত্যুর সূত্রে। তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি, দুর্নীতি এবং কর্তব্যে অবহেলার যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, বিভাগীয় তদন্তের পর তাঁকে সেই সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয় দু বছর পরে, ২০১৯ সালে। অথচ ওই সব ভুল প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে আগেই তাঁর চিকিৎসক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং ৯ মাস কারাবাসে থাকেন। বিস্তারিত পড়ুন।
আরও পড়ুন: রাম মন্দিরের নক্সা বলে ৬ বছরের পুরনো থ্রি-ডি অ্যানিমেশন ভিডিও ভাইরাল