২০১৮ সালে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলা সংশোধানাগার থেকে ডঃ কাফিল খানের ছাড়া পাওয়ার পুরনো ভিডিওকে মিথ্যে দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
বুম ডাক্তার খানের আইনজীবী এবং মথুরা জেলের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট উভয়ের সঙ্গেই কথা বলে জেনেছে, ডাক্তার খানকে এখনও জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
কয়েকদিন ধরেই সোশাল মিডিয়ায় পুরনো ছবি শেয়ার করে ডঃ কাফিল খানের মুক্তি নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: ডাক্তার কাফিল খান ছাড়া পেলেন—ভাইরাল খবরটি ভুয়ো
ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায় রাতের অন্ধকারে ডঃ কাফিল খানকে জড়িয়ে ধরছেন বয়স্ক মহিলা। তার সঙ্গে রয়েছে তার অনুগামীরা। হাতে হলুদ গাঁদা ফুলের মালা রয়েছে তাদের কারও কারও।
ভিডিওটি শেয়ার করে করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''#ব্রেকিংনিউজ #ডাক্তার কাফিল খাঁন জামিন পেয়েছেন। #আমাদের সকলের চেষ্টার ফল আমরা পেয়েছি।#আলহামদুলিল্লাহ।''
২০১৭ সালে ডাক্তার কাফিল খানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে বিআরডি মেডিকেল কলেজে অক্সিজেনের অভাবে ৬০টি শিশুর মৃত্যুর সূত্রে। তাঁর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি, দুর্নীতি এবং কর্তব্যে অবহেলার যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, বিভাগীয় তদন্তের পর তাঁকে সেই সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয় দু বছর পরে, ২০১৯ সালে। অথচ ওই সব ভুল প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে আগেই তাঁর চিকিৎসক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং ৯ মাস জেলেও পুরে রাখা হয়। এ বিষয়ে আরও জানতে পড়ুন এখানে।
চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মুম্বই বাগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) প্রতিবাদ জমায়েতে অংশগ্রহণ করতে যাওয়ার পথে ডাক্তার কাফিল খানকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ টাস্ক ফোর্সের অফিসাররা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী এক জমায়েতে প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দেওয়ার দায়ে তাঁকে খোঁজা হচ্ছিল।
গ্রেফতারির পর ডাক্তার খানকে আলিগড়ে নিয়ে আসা হয় এবং তাঁকে মথুরা জেলে পুরে দেওয়া হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিন পান কিন্তু জেল-কর্তৃপক্ষ তাঁকে মুক্তি দেয়নি। এর তিন দিন পর ১৩ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশ সরকার জাতীয় নিরাপত্তা আইনে তাঁকে নতুন করে গ্রেফতার করে। তাঁর কারাবাসের মেয়াদ তিন মাস পূর্ণ হওয়ার পর ১২ মে কর্তৃপক্ষ ডাক্তার খানের আটক থাকার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে (এনএসএ) তাঁকে ৬ মাসের জন্য গ্রেফতার করা হয়, যার মধ্যে তিন মাস ইতিমধ্যেই তাঁর কারাবাস করা হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, এই আইনে এক বছর পর্যন্ত বিনা বিচারে কাউকে আটক করে রাখা যায়।
আরও পড়ুন: ফেসবুকে রোজ দু'শো কোটি বার 'জয় শ্রী রাম' লেখা হয়? ভুয়ো বক্তব্য ভাইরাল
তথ্য যাচাই
বুম ডঃ কাফিল খানের মুক্তি নিয়ে কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি। এর পর আমরা ডাক্তার খানকে যেখানে আটক রাখা হয়েছে, সেই মথুরা জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেখানকার সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট শৈলেন্দ্র কুমার মাইত্রে খবরটি ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেন। তিনি স্পষ্ট জানান, ডাক্তার খানকে এখনও মুক্তি দেওয়া হয়নি।
ডাক্তার খানের আইনজীবী ইরফান গাজির সঙ্গেও বুম যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, "আমি জানি না কেন লোকে এসব গুজব ছড়াচ্ছে, কারণ ডাক্তার খানের জামিনের আবেদনের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৭ জুলাই।"
বুম আরও দেখে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের। প্রথম গ্রফতারির ৮ মাস পর ২৮ এপ্রিল শনিবার রাতে গোরক্ষপুর জেল থেকে সে সময় ছাড়া পান তিনি।
তাঁর ছোট বোন জিনাতকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন তিনি। সেই ছবি ভাইরাল হয় গণমাধ্যমে ও সোশাল মিডিয়ায়। তাঁর পথ চেয়ে অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর স্ত্রী ডঃ সবিস্তা ও ১৮ মাসের মেয়ে জাবরিনা। পরে বাড়ি ফিরলে তাঁর মা আবেগঘন হয়ে পড়েন। পড়ুন টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও পোশাকে থাকা ঘনিষ্টজনের ছবির মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি ডঃ কাফিল খানের বাড়িতে ফেরার সময় তোলা ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত মিলেনিয়াম পোস্টের প্রতিবেদনে দেখা যাবে ছবিটি।
২৮ এপ্রিল ২০১৮ নিউজ ক্লিককে দেওয়া ইন্টারভিউ দেখুন নীচে। ৫৩ সেকেন্ড সময়ের পর ডঃ কফিল খানকে জেল থেকে একই রঙের পোশাকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।