একটি বালক একটি হরিণ ছানাকে নদীতে জলে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করছে এরকম দৃশ্যের এক সেট ছবিকে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি অসমে বন্যার ঘটনা। বুম দেখে ছবিগুলি বাংলাদেশের এবং অন্তত ৮ বছর পুরনো।
ছবিতে দেখা যায় একটি যুবক ছেলে প্লাবনের সময় নদী থেকে একটি হরিন ছানেক উদ্ধার করছে। ছবিতে দেখা যায়, ছেলেটি হরিন শাবককে এক হাতে জলের উপরে তুলে রেখেছে।
ছবিটিকে ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "আসামে বন্যায়ে ভেসে যাওয়া এই হরিণ শাবক টিকে নিজের জীবনের পরোয়া না করে বাঁচালো এই ছোট্ট বালকটি, বাস্তব জীবনের বাহুবলী একেই বলে"
তথ্য যাচাই
বুম কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এই ছবিগুলি সহ আটটি ছবির সম্মিলিত একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পায়।
সেই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "বেলাল এটা কি করেছে?? ছবি গুলো দেখুন! ঠান্ডা জলের স্রোত ও জলের গভীরতা উপেক্ষা করে বেলাল ঝাঁপ দিলো নদীতে। বাঁচালো ফুটফুটে একটি চিত্রা হরিণ ছানাকে? বেলাল কি মানুষ ?? আমার তো মনে হয় ও মানুষ না। কারন মানুষ আর বেলাল এক কথা নয় ?? আমি বেলাল হতে চাই। আমাকে সাহায্য করো বেলাল। ধন্যবাদ বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফার হাসিবুল ওহাবকে যে আমাকে বেলাল হবার অনুপ্রেরনা দিলো।"
বুম কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখে এই নিয়ে ২০১৪ সালের বেশ কতকগুলি প্রতিবেদন রয়েছে। এই ছবিগুলি নিয়ে ডেইলি মেল -র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "একটি হরিণকে নিজের মাথার উপরে তুলে ধরে সে প্লাবিত নদীতে এগিয়ে যাচ্ছিল।"
ডেইলি মেল'এ এই ছবিগুলির স্বত্ব দেওয়া হয়েছে হাসিবুল ওয়াহাবকে এবং কেটার নিউজ এজেন্সিকে। যদিও ইন্টারনেটে কেটার নিউজ এজেন্সি সার্চ করে কিছু পাওয়া যায়নি।
বুম হাসিবুল ওয়াহাদ এই নাম দিয়ে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম এবং লিঙ্কড ইনে অনুসন্ধান করে এবং এই নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুঁজে পায়। ওয়াহাব লিঙ্কড ইন প্রোফাইলে নিজস্ব ব্লগের লিঙ্কটিও রেখেছিল।
হাসিবুল ওয়াহাব-এর ২০১৪ এর আর্কাইভে বুম ১৯ মার্চ ২০১৪ এই তারিখের এই পোস্ট খুঁজে পায়। এই পোস্টে ওয়াহাব বলে যে সে বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়ে এই ছবিগুলি তুলেছিল নোয়াখালির নিঝুম দ্বীপে। ওয়াহাব আরও বলে এই ছবিগুলি সে ২৩ জুন ২০১২ এই তারিখে তোলা।
ওয়াহাব বলে, ছবিতে থাকা বালকটির নাম আব্দুল মান্নান, ছবি তুলার সময় তার বয়স ছিল ১৫ বছর। ওয়াহাব বলে যে আব্দুল হরিণটিকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করছিল না, সে আসলে প্লাবিত খালের অন্যপাড়ে থাকা দলের সাথে হরিণকে মিলিয়ে দিয়েছিল।
"আমি হরিণটিকে বৃষ্টির মধ্যে খালের ধারে কাদায় একা আঁটকে থাকতে দেখেছি। আমি এই হরিণ শাবকটিকে একহাতে মাথার উপরে তুলে ধরি এবং অন্য পাড়ে থাকা হরিণের দলের সাথে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্লাবিত জলের মধ্যে দিয়ে খাল পার হতে থাকি।" আব্দুল ওয়াহাবকে বলেছিল সে।
ওয়াহাব একটি ছবিকে তাঁর ব্লগে পোস্ট করেছে, সেই ছবিটি ভুয়ো দাবি সহ ভাইরাল হওয়া ছবির সাথে মিলে যায়।
নীচে ভুয়ো দাবি সহ ছবি (বাঁ দিকে) এবং হাসিবুল ওয়াহাবের ব্লগে থাকা ছবির (ডান দিকে) একটি তুলনা করা হল।
বুম ওয়াহাবের ব্লগে থাকা ছবির এক্সিফ ডেটা পরীক্ষা করে দেখে এবং জানতে পারা যায় এই ছবিটি ক্যানন ইওএস রেবেল টি২আই (Canon EOS REBEL T2i) ক্যামেরা দিয়ে তুলেছিল। তারিখ ছিল ২৩ জুন ২০১২ সাল, সময় দুপুর ৩ টা ২৮ মিনিট। এই ডেটাতে চিত্রগ্রাহকের ইমেল আইডিও ছিল যা ওয়াহাবের ব্লগে থাকা মেল আইডির সাথে মিলে যায়।
ঘটনা প্রসঙ্গে বলা যায়, এই নয় যে প্রথমবার এই ছবিটি ভুয়ো দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ২০১৬ সালে অসম সরকার এই একই ছবিকে বন্যা নিয়ে তাদের অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টে ব্যবহার করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ কে জমা দিয়েছিল। "একটা বড় ভুল হয়ে গিয়েছিল, আমরা স্বীকার করছি। আসলে এর সাথে কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের মিল থাকায় জেলা কমিশনাররা এই ছবিটি ফরওয়ার্ড করেছিল," নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বরিষ্ঠ আধিকারিক জানায় পিটিআইকে।