চতুরতা করে সম্পাদিত দিল্লি নির্বাচনের আগে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর ভাষণের একটি ভিডিও এই দাবি সহ এখন টুইটারে ঘুরছে যে, তাঁর ভাষণটি উদ্ভট এবং হাস্যকর।
সম্পাদিত ফুটেজটির প্রথম ভাগে, দর্শকদের উদ্দেশ্যে রাহুল গান্ধী একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, জানতে চান মাথার ওপরে এত ঈগল উড়ছে কেন। কথা বলতে বলতে উনি হাত তুলে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করেন। তারপরেই একটি ছোট ক্লিপে পাখি উড়তে দেখা যায়। ফুটেজের দ্বিতীয় ভাগে, উনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) ও বিজেপির নাম উল্লেখ করে বলেন বেকারত্বের জন্য তাঁরাই দায়ী।
দু'টি ক্লিপ এমন চালাকি করে জোড়া এবং তাদের ক্রম এমন ভাবে বদলে দেওয়া হয়েছে যে, ফুটেজটি দেখলে মনে হবে পাখিদের কর্মহীনতার জন্য বিজেপি সরকারকে দায়ী করছেন রাহুল।
ওই সম্পাদিত ফুটেজটি টুইট করে পরে আবশ্য ডিলিট করে দেন বিজেপির যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হর্ষ সাঙ্গভি। ওই ধরনের উদ্ভট কথা বলার জন্য উনি রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষও করেন। সাঙ্গভি লেখেন, "কেউ তো ওনাকে থামান।"
ওই একই ফুটেজ হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকেও ঘুরছে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত, ফুটেজটি ফেসবুকে ১.২ মিলিয়ন (১২ লক্ষ বার দেখা হয়েছিল। ভিডিওটির নাম দেওয়া হয়, "পাপ্পুর কমেডি শো"।
ফুটেজটির সঙ্গে দেওয়া হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ঈগলগুলি এখানে উড়ে বেড়াচ্ছে কেন? কারণ, কোনও চাকরি পাচ্ছে না। আর তার জন্য দায়ী নরেন্দ্র মোদী ও আরএসএস—রাহুল গান্ধী।"
(হিন্দিতে মূল ক্যাপশন: ये चीले यहाँ क्यूँ उड़ रहे है क्योंकि इनको रोजगार नहीं मिल रहा ये बेरोजगार है इसका कारण है नरेंद्र मोदी, RSS- राहुल गांधी")
ফুটেজটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেটি বুমের হেল্পলাইনেও আসে।
আরও পড়ুন: সুধীর চৌধুরীর মন্তব্যের জেরে উত্তেজিত দিল্লির জনতা জি নিউজের দফতর ভাঙচুর করেনি
তথ্য যাচাই
বুম জানতে পারে যে, ভিডিওটি হাসির খোরাক হিসেবেই তৈরি করা হয়। রাহুল গান্ধী উড়ন্ত ঈগল আর বেকারত্বের মধ্যে কোনও সম্পর্কের কথা বলেননি। ভিডিওটির নীচের বাঁদিকের কোণে, 'বিইঙ্গ বাকলোল' লোগোটি লক্ষ করা যায়। বিইঙ্গ বাকলোল হল ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে এমন একটি সংস্থা। হাসির বিষয়বস্তু তৈরি করে থাকে তারা।
প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে রাহুল গান্ধীর ওই ভাষণের ভিডিও সামনে আসে। ৫ ফেব্রুয়ারি, উনি নতুন দিল্লির কোন্ডলিতে এক নির্বাচনী জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
ভাইরাল ক্লিপটি তৈরি করার জন্য ভাষণের কয়েকটি অংশ এলোমেলো করা হয়।
তাঁর ভাষণের গোড়াতেই, কিভাবে বিগত পাঁচ বছরে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে, তার উল্লেখ করেন রাহুল গান্ধী। বছর দশেকের কচিকাঁচাদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করতেও দেখা যায় তাঁকে। তারপর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে উনি জানতে চান, "ওই বিঘ্ন ঘটার পেছনে কি কারণ থাকতে পারে?"
ঈগল ওড়ার উল্লেখ
ভিডিওটির ৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের মাথায়, রাহুল গান্ধী ঈগলের প্রসঙ্গ তোলেন। উনি তুলনা করে দেখাতে চান যে গরিব মানুষরা রয়েছেন খারাপ অবস্থার মধ্যে আর প্রধানমন্ত্রী মোদী বড়লোকদের কর ছাড় দিচ্ছেন। উনি বলেন, "আচ্ছা, ভাইসব, বলুন তো ঈগলরা এখানে কেন উড়ছে। তারা এখানে কেন উড়ছে? কেউ কি বলতে পারেন কেন ঈগলরা এখানে উড়ছে। এই আবর্জনা সরাতে কত হাজার কোটি টাকা লাগবে? ভারতের সবচেয়ে ধনীদের জন্য নরেন্দ্র মোদী ১,৩০,০০০ কোটি টাকা কর মোকুব করে দিয়েছেন। আপনাদের মত মানুষরা ২৪x৭ নোংরার মধ্যে থাকতে বাধ্য হন আর ধনীরা শান্তির প্রাসাদে থাকে।"
গত পাঁচ বছরে চাকরির অভাব
তাঁর ভাষণে রাহুল গান্ধী জোর দিয়ে বলেন যে, তরুণরা বিভ্রান্ত বোধ করছেন। "তাঁরা অনেক বছর ধরে পড়াশোনা করেছেন। তাঁরা স্কুলে গেছেন, কলেজ আর ইউনিভারসিটিতে গেছেন, এবং পরীক্ষায় বসেছেন। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তাঁদের কোনও উপার্জন নেই। আর দেশের তরুণরা যখন সামনে কোনও পথ দেখতে পান না, তখন তাঁরা ক্ষুব্ধ হন।"
৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের মাথায়, কিভাবে তরুণদের জন্য উপার্জন হীনতার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার উল্লেখ করেন উনি। ঠিক সেই অংশটি ভাইরাল ভিডিওর ২০ সেকেন্ডের মাথায় ব্যবহার করা হয়।
নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি, আরএসএস প্রসঙ্গ
৩ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের মাথায় রাহুল গান্ধীকে বলতে শোনা যায়, "এর পেছনে কারণ কি? অনেকেই বলবেন কারণটা হলেন নরেন্দ্র মোদী। কারণটা হল আএসএস আর বিজেপি। আমি কিন্তু অন্য ভাবে দেখতে চাই। সবচেয়ে বড় কারণ হল তরুণদের সামনে কোনও লক্ষ্য নেই। বেকারত্বকে তাঁরা ভয় পান।"
যেখানে নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি ও আরএসএস-এর উল্লেখ করেছেন রাহুল গান্ধী, সেই অংশটি কমিক ভাইরাল ক্লিপের ২৪ সেকেন্ডের মাথায় জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
ফেসবুকে আপলোড-করা সেদিনকার আসল ভিডিও নীচে দেওয়া হল।