একটি ভিডিও ক্লিপে দেখানো একটি শিশুর কপালে তৃতীয় একটি চোখ থাকার ঘটনাটি ভুয়ো। ডিজিটাল পদ্ধতিতে জোড়াতালি দিয়ে সেটি তৈরি করা হয়েছে। ভারতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দাবি করা হচ্ছে যে, শিশুটির জন্ম জার্মানিতে।
১১ সেকেন্ডের ক্লিপটিতে একটি লোককে বাচ্চাটির সঙ্গে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। তারপর দেখা যাচ্ছে এক মহিলার হাত বাচ্চাটির গালে আলতো করে টোকা দিচ্ছে। তেলুগু ভাষায় লেখা ক্যাপশন সহ ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে। ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, "তিন চোখের একটি শিশুর জন্ম হয়েছে জার্মানিতে।"
দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে। ভিডিওটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে চেয়ে সেটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (৭৭০০৯০৬১১১) পাঠান এক পাঠক।
ফেসবুকে ভাইরাল
আমরা ফেসবুক সার্চ করি। দেখা যায়, সেখানেও ভিডিওটি ব্যাপক হারে শেয়ার করা হচ্ছে।
তেলুগু ক্যাপশন সমেত একই ভিডিও সেখানেও ভাইরাল হয়েছে। ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "বিস্ময়কর শিশু। এক বিস্ময়কর শিশুর জন্ম হয়েছে বিদেশে। যেমনটা বলেছিলেন পটুলুরি ভীরা ব্রহ্মেন্দ্রস্বামী।" ক্যাপশানটিতে নবম শতকের অন্ধ্র ঋষি পটুলুরি ভীরা ব্রহ্মেন্দ্রস্বামীর ও তাঁর বই 'কলাগনানম'-এর নাম ভিডিওটির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বইতে তাঁর বেশ কিছু ভবিষ্যৎ বাণী রয়েছে।
(তেলুগুতে লেখা - వింతశిశువు : పోతులూరి వీర బ్రహ్మేంద్రస్వామి చెప్పిన విధంగా విదేశంలో వింతశిశువు జననం..ముచ్చటగా మూడుకన్నులతో మూర్తీభవించిన త్రినేత్రుడు…జై శ్రీమన్నారాయణ)
আরও পড়ুন: মান্ধাতা আমলের টোটকাকে ভারতীয় ছাত্রের কোভিড-১৯ ওষুধ উদ্ভাবন বলা হল
তথ্য যাচাই
ভাইরাল ভিডিও ক্লিপটি বুম বিশ্লেষণ করে দেখে বাচ্চাটির কপালের অংশটা সম্পাদনা করে বদলানো হয়েছে। তিন চোখের ধাপ্পাবাজিটির জন্য তার বাঁ চোখের ছবিটি কপালের ওপর 'সুপারইম্পোজ' করে বসিয়ে দেওয়া হয়। ভিডিওটি খুঁটিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তৃতীয় চোখের নড়াচড়া বাঁ চোখের নড়াচড়ার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এক এক করে ভিডিওর ফ্রেমগুলি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, তৃতীয় চোখের ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্য বাঁ চোখের ছবির একটি কপি শিশুটির কপালের ওপর ডিজিটাল পদ্ধতি বসিয়ে দেওয়া হয়।
বুম ভিডিওটির উৎস জানতে পারেনি। কিন্তু গুগুলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় ওই ভাইরাল ক্লিপটি ৯ জুন ২০২০ তে এক টুইটার হ্যান্ডেল আপলোড করে। সেটির সঙ্গে চিনা ভাষায় দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "তিন চোখওয়ালা মানুষের আবির্ভাব হয়েছে।"
三只眼的人类出现了 pic.twitter.com/KEYegRRVYF
— 水镜先生(备用号) (@gmmj0709) July 9, 2020
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
'থ্রি আইড বেবি' (তিন চোখওয়ালা বাচ্চা), এই শব্দগুলি দিয়ে ইউটিউবে সার্চ করলে দেখা যায় যে, ভাইরাল ক্লিপটি সেখানে আপলোড করা হয়েছিল। সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ক্যাপশনে বলা হয়, "ক্র্যানিওফোকা ডুপ্লিকেশন, যাকে ডিপ্রোসোপাসও বলা হয়, হল একটি বিশেষ ধরনের অসুখ যাতে মুখের কিছু অংশ বা গোটা মুখটারই প্রতিলিপি তৈরি হয়ে যায় মাথায়। আমাদের হাসপাতালে ভর্তি-হওয়া এক বছরের ছেলেটিরও তাইই হয়েছে। তার বাঁ চোখটা তৃতীয় চোখ হিসেবে মাথায় দেখা দিয়েছে। তার মাথার গঠনও অস্বাভাবিক। ২ জানুয়ারি ২০১৮ সালে তার জন্মের পরই এই অস্বাভাবিকতাগুলি দেখা যায়।" এটি ভিডিওটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
আমরা দেখি এটি ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি কেস রিপোর্ট থেকে নেওয়া। রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছিল ওয়েস্ট অ্যাফ্রিকান জার্নাল অফ রেডিওলজিতে। জন্মগত কিছু জিনের সমস্যা রয়েছে এমনই এক শিশুর কথা বলা হয় ওই রিপোর্টে। তবে ওই মেডিক্যাল জার্নালে যে শিশুর কথা বলা হয়, সে কিন্তু ভাইরাল ক্লিপের শিশুটি নয়।
পড়ার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
তাছাড়া জার্মানিতে তিনটি চোখ সমেত কোনও শিশুর জন্ম সংক্রান্ত রিপোর্ট আমরা দেখতে পাইনি। ভাইরাল ক্লিপটি আগেও খণ্ডন করেছিল 'হোক্স অর ফ্যাক্ট' নামের এক তথ্য-যাচাই সংস্থা।
এই ধরনের কারসাজি-করা ক্লিপ বুম আগেও খারিজ করেছে। এক ফরাসি অ্যানিমেশন ফিল্মে একটি বাচ্চাকে ডানা মেলে উড়তে দেখানো হয়। সেটিকে এই বলে শেয়ার করা হয় যে, একটি ছেলে ডানা সমেত জন্মেছে।
আরও পড়ুন: অভাবনীয় চিতা ও গরুর বন্ধুত্বের ছবিটি দুই দশকের পুরনো