নিট ২০২০ পরীক্ষায় শীর্ষস্থান অধিকারী আকাঙ্ক্ষা সিংয়ের নামের একটি ভুয়ো টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অভিযোগ করা হয়, ওই একই পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শোয়েব আফাতাবকে নিয়ে মিডিয়ায় যে মাতামাতি হচ্ছে, ধর্মীয় বৈষম্যের কারণেই তাঁকে নিয়ে সেটা হচ্ছে না।
বুম অবশ্য নিশ্চিত ভাবে জেনেছে যে আকাঙ্ক্ষা সোশ্যাল মিডিয়ায় অংশ নেন না এবং তাঁর নামে যে টুইটার হ্যান্ডেলটি আছে সেটি ভুয়ো।
২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর নিট পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। দু'জন পরীক্ষার্থী পুরো নম্বর, অর্থাৎ ৭২০-র মধ্যে ৭২০, পান। ওড়িশার রৌরকেলার শোয়েব আফতাব প্রথন স্থান অধিকার করেন এবং তাঁর পরের স্থানেই রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরের আকাঙ্ক্ষা সিং।
ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির এক আধিকারিক পিটিআইকে জানিয়েছেন যে, নিট টাই-ব্রেকিং পদ্ধতির মাধ্যমে সিংকে দ্বিতীয় স্থান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টাই-ব্রেকিং পদ্ধতিতে একই নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে র্যা ঙ্কিং করার সময় চারটি বিষয় দেখা হয়— জীব বিজ্ঞান ও রসায়নে প্রাপ্ত নম্বর, ভুল উত্তরের সংখ্যা এবং পরীক্ষার্থীর বয়স। এ ক্ষেত্রে যেহেতু আফতাব এবং সিং পুরো নম্বর পেয়েছেন তাই অন্য তিনটি বিষয়ে তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব হয়নি। তাই তাঁদের বয়সের তুলনা করা হয়। যেহেতু আফতাবের বয়স ১৮ তাই তাঁকে প্রথম স্থান দেওয়া হয় এবং সিং'র বয়স ১৭ তাই তাঁকে দেওয়া হয় দ্বিতীয় স্থান।
দুজনেই '৭২০ তে ৭২০' পাওয়া সত্ত্বেও আফতাবকে প্রথম স্থান দেওয়ার বিষয়ে বহু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী প্রশ্ন তুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু দক্ষিণপন্থী ব্যবহারকারী এই ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়েছেন।
@AkankshaSinghIN নামের ভুয়ো টুইটার হ্যান্ডলটি ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর অর্থাৎ নিট এর ফল বেরোনোর এক দিন পর তৈরি করা হয়। বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য ভুয়ো হ্যান্ডেলটিতে আকাঙ্ক্ষার ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। যে দিন হ্যান্ডেলটি তৈরি হয়েছে, সে দিনই অ্যাকাউন্টটি থেকে দুটি সাম্প্রদায়িক টুইট করা হয়। তাতে প্রশ্ন করা হয়, আফতাব মিডিয়ার এত মনোযোগ পাচ্ছেন এবং তিনি তাঁর ধর্মের জন্য সেই মনোযোগ পাচ্ছেন না। মজার ঘটনা হল এই ভুয়ো হ্যান্ডেলের বায়োতে 'টপার' শব্দটির ভুল বানান লেখা হয়েছে।
আর্কাইভ দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
প্রথম টুইটের বাংলা অনুবাদ, "এনইইটির পরীক্ষায় আমি ও শোয়েব দুজনেই প্রথম হয়েছি। কিন্তু গণমাধ্যমে সর্বত্র শুধু শোয়েবের নাম দেখা যাচ্ছে। আমার দোষ কী? আমি একজন মেয়ে আর হিন্দু তাই???#এনইইটিরেজাল্ট২০২০।"
দ্বিতীয় টুইটে লেখা হয়, "আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় কখনো অংশগ্রহণ করিনি কিন্তু আজ খুব দুঃখের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দিলাম। আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা অন্যায়, আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং আমিও সফল হয়েছি।"
আমরা দেখতে পাই বহু টুইটার ইউজার এই ভুয়ো হ্যান্ডেলটিকে বিশ্বাস করেছেন এবং টুইট করে নিজেদের অসন্তোষ জানিয়েছেন।
আর্কাইভ করা আছে এখানে।
সিংয়ের বাবা জানালেন, " এটি একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট, আকাঙ্ক্ষার টুইটার বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো অ্যাকাউন্ট নেই।"
বুম আকাঙ্ক্ষা সিংয়ের বাবা রাজেন্দ্র কুমার রাওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জোর দিয়ে জানান যে, (@AkankshaSinghIN) অ্যাকাউন্টটি ভুয়ো এবং এটি মোটেই তাঁর মেয়ের নয়। রাও আরও বলেন যে, আকাঙ্ক্ষা কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নেই বা তার কোনও অ্যাকাউন্টও নেই। তিনি আরও জানান যে, তাঁরা স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রাও বুমকে বলেন, "আকাঙ্ক্ষা টুইটারে নেই। ওই অ্যাকাউন্টটি ভুয়ো। এমনকি ইন্সটাগ্রাম বা অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় আকাঙ্ক্ষার কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। আমরা উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরের কাসিয়া থানায় একটি অভযোগ দায়ের করেছি এবং জানিয়েছি যে এটি একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট যাতে আকাঙ্ক্ষার নাম ব্যবহার করা হয়েছে।" এক ইউজার এই ব্যাপারে কুশিনগর পুলিশকে ট্যাগ করে একটি পোস্ট করলে কুশিনগর পুলিশ তার উত্তর দেয়। তাঁদের দেওয়া উত্তরের বাংলা অনুবাদ, "সাইবার সেল এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।"