এক আকাশে সূর্যের মতোই দুটি উজ্জ্বল মহাকাশীয় গোলকের ৬টি ছবির কোলাজ করে দাবি করা হচ্ছে, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত বরাবর এই যে মহাজাগতিক দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করা গেছে, এটি 'হান্টার্স মুন'-এরই উদাহরণ।
এই বার্তায় ভুল ভাবে দাবি করা হয়েছে যে, এই যে সূর্যের মতো বিভাময় দুটি সুবর্ণ গোলককে একসঙ্গে দেখার দৃষ্টিবিভ্রম, এদের একটি আসলে সূর্য, অন্যটি চাঁদ। বার্তাবাহী পোস্টগুলিতে কার্যত 'হান্টার্স মুন' এবং 'সানডগ' এই দুটি বিষয়কে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে, যে দুটির মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই এবং পোস্টে যেমন দৃষ্টিবিভ্রম তৈরি করা হয়েছে, তেমন কিছুই এতে ঘটে না।
বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও এই বার্তাটি পৌঁছেছে এবং তাতে ৬টি ছবির যে কোলাজ করা হয়েছে, তাতে পাঁচটি বিভিন্ন আকাশরেখা ধরা রয়েছে, যাতে 'হান্টার্স মুন' নামে পরিচিত সূর্যের মতোই দুটি আগ্নেয় গোলক দৃশ্যমান, যখন পৃথিবী তার অক্ষ পরিবর্তন করে। বার্তাটির আরও দাবি, এখানে চাঁদ সূর্যের আলোকে প্রতিবিম্বিত করে এবং সূর্যের মতোই উজ্জ্বল আকার গ্রহণ করে।
বার্তাটির বিবরণীতে লেখা: "আজ কানাডা-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের আকাশে একই সঙ্গে দুটি সূর্য আত্মপ্রকাশ করে, যার একটি আসল সূর্য, অন্যটি চাঁদ l এই ঘটনাটিকে 'হান্টার্স মুন' বলা হয়, এবং এটা তখনই ঘটে, যখন পৃথিবী তার অক্ষ পরিবর্তন করে l চাঁদ এবং সূর্য তো একই সঙ্গে জন্মেছে, আর সূর্যের আলোকে এত জোরালো ও তীব্রভাবে চাঁদ প্রতিবিম্বিত করে যে, তাকে একটা দ্বিতীয় সূর্য বলেই মনে হয় l দৃশ্যটা শেয়ার করুন! কী অপূর্ব!"
টুইটারেও এই একই দাবি সহ বার্তাটি ঘুরছে।
২১ জুন ভারতে যে সূর্যগ্রহণ দৃশ্যমান হয়, তার প্রেক্ষাপটেই হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাটি সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে। সকাল ৯টা ১৫ থেকে ৩টে ৪ মিনিট অবধি গ্রহণটি স্থায়ী হয়। আঙটি বা বলয়ের আকার বিশিষ্ট এই গ্রহণটি তখনই হয়, যখন চাঁদ পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করে। এই বলয়গ্রাস গ্রহণের সময় চাঁদ পুরো সূর্যটাকে ঢেকে দিতে পারে না, তার বাইরে একটি জ্বলন্ত আঙটি বা বলয় কিছু ক্ষণ দেখা যায়।
তথ্য যাচাই
কানাডা-আমেরিকার সীমান্ত আকাশে এ ভাবে দুটি সূর্যের আত্মপ্রকাশ এবং সেটা 'মুন হান্টার্স' নামে অভিহিত করার বার্তাটি বিভ্রান্তিকর এবং ভুলও। ২০১৫ সাল থেকেই যখনই এ ধরনের বলয়গ্রাস গ্রহণ হয়, তখনই ইন্টারনেটে এই ধরনের ছবি দিয়ে প্রচার চালানো হয়ে থাকে।
হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় ভুলবশত এটিকে 'মুন হান্টার্স' আখ্যা দেওয়া হয়, যদিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় কথাটা 'হান্টার্স মুন', এবং তার সঙ্গে এই বিষয়টির কোনও সম্পর্কই নেই।
এই ঘটনাটি ঘটে যখন চাঁদ জলবিষুবের(২২ বা ২৩ সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওয়েবসাইট
আর্থস্কাই অনুসারে, যখন কিছুটা সময়ের আগেই আকাশে উদিত হয় পূর্ণিমার চাঁদ, তখনই এই ব্যাপারটা ঘটে। সে সময় তার অবস্থান এবং আবহমণ্ডলের সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়ায় চাঁদে একটা কমলা রঙ দেখা দেয় এবং অন্য পূর্ণিমার চেয়ে চাঁদকে অনেক বড় দেখায়। তাই বলে সূর্যের আলো চাঁদ এত তীব্রভাবে প্রতিফলিত করে না যে, তাকে আর একটা সূর্যের মতো দেখাবে, যেমনটা নাকি এই বার্তায় দাবি করা হয়েছে। তাই 'হান্টার্স মুন'কে আর একটা সূর্যের মতো উজ্জ্বল ও আগ্নেয় দেখাবে, এই দৃষ্টিবিভ্রমের গল্পটা ভুয়ো।
ভাইরাল হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার বিবরণের কাছাকাছি যে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ব্যাপারটি তুলনীয়, তাকে বলা হয় 'সানডগ' বা 'পারহিলিয়াম', যাতে এক আকাশে দুই সূর্য দেখার কাছাকাছি বিভ্রম তৈরি হতে পারে।
এটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কারণে ঘটে, যখন সূর্যের এক বা দুই দিক থেকে আসা আলোর রঙিন বিন্দুগুলো বরফের স্ফটিকে প্রতিসরিত হয়। এ ব্যাপারে আরও বিশদে জানতে
মার্কিন জাতীয় আবহ পরিষেবার ওয়েবসাইট দেখতে পারেন। 'সানডগ'-এর একটি
নমুনা এখানেও দেখতে পারেন। তবে তার সঙ্গে ভাইরাল হওয়া ছবির কোনও সাদৃশ্য নেই।
ভাইরাল হওয়া ছবিগুলি হয় কম্পিউটারে ফোটোশপ করা হয়েছে, আর নয়তো ক্যামেরার লেন্সের গোলমালের জন্য ঘটেছে।
ফোটোগ্রাফিলাইফ অনুযায়ী এ ধরনের বিভ্রাট তখনই ঘটে, যখন সূর্যের মতো কোনও তীব্র আলোর উৎস চারপাশের পরিবেশের তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল হওয়ায় লেন্সে প্রবেশ করে এই কাণ্ডটা ঘটিয়ে দেয়। বুম নিজে থেকে এই ছবিগুলির যাথার্থ্য যাচাই করে দেখতে পারেনি।
একই ধরনের একটি দাবি ইতিপূর্বে তথ্য-যাচাইকারী সংস্থা
স্নোপস খারিজ করে দিয়েছে।