সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভুয়ো চিঠিতে দাবি করা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি জেপি নাড্ডাকে লেখা একটি চিঠিতে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহকে তুলে ধরতে বলেছেন।
২৪৩ টি আসনের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে মঙ্গলবারের ফলে নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ ও বিজেপির এনডিএ জোট পেয়েছে ১২৫ টি আসন। তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে ইউপিএ জোট পেয়েছে ১১০ টি আসন। ৭৫ টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আরজেডি। এই প্রেক্ষিতে ভাইরাল হয়েছে চিঠিটি। যদিও নীতীশ কুমারই বিহারে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবে বলে বিজেপি সূত্রে খবর।
নাড্ডাকে উদ্দেশ করে লেখা ভুয়ো চিঠিতে লেখা হয়েছে, "আমি আপনাকে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ভারতীয় জনতা পার্টি একমাত্র দল, যেখানে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে চলা হয়। তিন জন প্রার্থীর মধ্যে গিরিরাজ সিংহ-এর প্রতি আমার সমর্থন আছে। রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গিরিরাজ সিং-এর অবদান অসাধারণ এবং প্রশংসনীয়...।"
বুম তাদের হোয়্যাটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নাম্বারে (৭৭০০৯০৬১১১)এই চিঠিটি পায়। চিঠিটি সত্যি কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।
আমরা টুইটার ইউজারের করা একটি টুইট খুঁজে পাই, যাতে ওই ভুয়ো চিঠিটি টুইট করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী মোদী নীতীশ কুমারের পরিবর্তে সিংহকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চান।
তথ্য যাচাই
অনেকগুলি ব্যাকরণগত ভুলসমেত বুম ভাইরাল হওয়া চিঠিতে অনেকগুলি অসঙ্গতি খুঁজে পায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বাক্ষরের সঙ্গে তাঁর আসল স্বাক্ষর মেলে না। এ ছাড়া চিঠিতে দেখানো ন্যাশনাল চিহ্নের রঙ মেলে না। আমরা আরও দেখি যে এই ভাইরাল হওয়া চিঠিটির সঙ্গে এর আগে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভুয়ো চিঠির সঙ্গে মিল আছে। প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ও হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের জন্য সমর্থন করার জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন— এরকম বিভিন্ন মিথ্যে দাবি ওই সব ভুয়ো চিঠিতে করা হয়েছিল।
নাগরিকদের লেখা চিঠির উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর লেখা চিঠির সঙ্গে ভাইরাল হওয়া চিঠির মধ্যে অনেকগুলি ফারাক খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন প্রধানমন্ত্রী হরিয়ানার ১১ বছরের এক ছাত্রকে উত্তর দিয়েছেন।
এই চিঠিটিতে অনেকগুলি ব্যাকরণগত ভুল আছে, যেমন গিরিরাজ সিংহ-এর অবদানের কথা বলতে গিয়ে সিং কথাটির পর ঊর্ধ্বকমা দেওয়া হয়নি। এবং 'মাইলস্টোন' শব্দটি আলাদা ভাবে অর্থাৎ 'মাইল স্টোন' লেখা হয়েছে।
সবচেয়ে বড় অসঙ্গতি দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্বাক্ষরে। আসল চিঠিতে এন অক্ষরে কোনো বাঁকানো ভাব নেই এবং ভুয়ো চিঠিতে এন অক্ষরটি বাকানো লেখা হয়েছে। এন অক্ষরের চারপাশে যে বৃত্তাকার ছাঁদ আছে তাও আলাদা।
ভুয়ো চিঠিতে জাতীয় চিহ্নের রঙ কালো এবং সাদা। প্রধানমন্ত্রীর লেখা আসল চিঠিতে তা নয়। চিঠিটি দেখে মনে হয় এটি একটি ফটোকপি যাতে খুব সহজে কারচুপি করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর লেখা আসল চিঠিতে যে চিহ্ন দেখা যায় তা সোনালি আর ভুয়ো চিঠিতে যে চিহ্ন দেখা যাচ্ছে তা সাদা কালো।
ভুয়ো চিঠিতে উপরে ডানদিকে 'নিউ দিল্লি' লেখার পর শালীবাহন শক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তারিখ লেখা নেই। শক সম্বাৎ হল ভারতের জাতীয় ক্যালেন্ডার এবং প্রধানমন্ত্রীর লেখা চিঠিতে সাধারণত গ্রেগরিয়ান পদ্ধতির ক্যালেন্ডারের তারিখের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ীও তারিখ লেখা হয়।
সম্প্রতি আগস্টে সুরেশ রায়না বা মহেন্দ্র সিং ধোনির মত ক্রিকেটারকে লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে আমরা দেখতে পাই 'নিউ দিল্লি' কথাটির পর শালিবাহন শক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তারিখ লেখা হয়েছে।
তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী মোদী বিজেপি সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডাকে বিহারের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহকে বিহারের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরতে বলে কোনও চিঠি লিখেছেন, সে বিষয়ে আমরা কোনও নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাইনি।