চিনের বিরুদ্ধে ভারতকে সমর্থন করে বিভিন্ন দেশের নেতাদের মন্তব্য দিয়ে তৈরি যে ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছে তা আসলে মিথ্যে। পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকের কাছে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে (এলএসি) দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ আরম্ভ হয়। তার পরই এই গ্রাফিকটি ভাইরাল হয়। সোমবার রাতে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার এক কর্নেল সহ দুই ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়েছেন খবরে প্রকাশ করা হলেও মঙ্গলবার রাতে সেনা সূত্রে জানানো হয় গুরুতর আহত আরও ১৭ জন সেনা ঠান্ডার কারণে মারা গিয়েছেন।
পোস্টকার্ড নিউজ নামে একটি ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইট গ্রাফিকটি শেয়ার করে। রাশিয়া, জাপান, আমেরিকা এবং ইজরায়েলের রাষ্ট্রপ্রধানদের ভুয়ো মন্তব্য দিয়ে গ্রাফিকটি তৈরি করা হয়।
বুম এর আগে পোস্টকার্ড এবং তার
প্রতিষ্ঠাতা মহেশ হেগড়ের
শেয়ার করা বেশ কিছু ভুল তথ্যের তথ্য যাচাই করেছে এবং সেগুলিকে মিথ্যে প্রমাণ করেছে।
গ্রাফিকটিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ছবি দেখা যাচ্ছে, সঙ্গে তাঁদের মন্তব্য, "যারা ভারতকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে, তাদের আগে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।"
বুমের হোয়্যাটস অ্যাপ হেল্পলাইন নাম্বারে (৭৭০০৯০৬১১১) এই ছবিটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
ফেসবুক
পোস্টকার্ড নিউজ এই ভাইরাল হওয়া গ্রাফিক মেসেজটি ২০২০ সালের ৩০ মে পোস্ট করে।
আর্কাইভ দেখার জন্য
এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
চিন ও ভারতের মধ্যেকার সাম্প্রতিক দ্বন্দের বিষয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিঞ্জো আবে এবং ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু— বুম এই চার জন রাষ্ট্রনেতার করা সাম্প্রতিক মন্তব্য অনুসন্ধান করে। এই বিষয়ে এই দেশগুলির প্রতিক্রিয়াও আমরা যাচাই করে দেখি। এই চার জন রাষ্ট্রনেতা বা তাঁদের দেশের কোনও সরকারি মন্তব্য আমরা দেখতে পাইনি।
এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত ভারত-চিন সম্পর্কের বিষয়ে এই দেশ এবং তার রাষ্ট্রনেতাদের করা মন্তব্য এখানে দেওয়া হল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গ্রাফিকটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য বলে উদ্ধৃত করা হয়, "ভারত আমাদের বন্ধু এবং আমরা সব সময় ভারতের সঙ্গে আছি।"
গুগল সার্চ করে আমরা দেখতে পাই ২০২০ সালের ২৭ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেন এবং ভারত ও চিনের সীমান্ত সমস্যা সমধানের জন্য মধ্যস্থতা করতে রাজি আছেন বলে জানান। তবে চিন এবং ভারত, দুই দেশই প্রস্তাবটি
প্রত্যাখ্যান করেছে।
এক দিন পরে ট্রাম্প দাবি করেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে এবং মোদি জানিয়েছেন, "চিনের সঙ্গে যা চলছে তা একেবারেই ভালো লাগছে না।"
২০২০ সালের ২ জুন মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে সীমান্ত এবং অন্যান্য বিষয়ে টেলিফোনে কথাবার্তা হয় বলে বিভিন্ন
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।
তবে আমরা ট্রাম্পের এমন কোনও মন্তব্য পাইনি যাতে তিনি বলেছেন, "ভারত আমাদের বন্ধু এবং আমরা সবসময় ভারতের সঙ্গে আছি।" যেমনটা ২০২০ সালের ৩০ মে পোস্ট করা ভাইরাল গ্রাফিক মেসেজে দাবি করা হয়েছে।
রাশিয়া
গ্রাফিক মেসেজটিতে দেখা গেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, "আমরা সব সময় ভারতের সঙ্গে আছি।"
২০২০ সালের ১ জুন লাদাখে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে(এলআসি) চলা উত্তেজনা বিষয়ে রাশিয়া চিন্তিত বলে জানিয়েছিল। ভারতে রাশিয়ার উপরাষ্ট্রদূত রোমান বাবুশকিন ইকোনমিক টাইমসকে দেওয়া
মন্তব্যে তা জানিয়েছেন।
বাবুশকিন বলেছেন, "এলএসির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা বিলক্ষণ চিন্তিত। তবে আমরা জানি দুই দেশের মধ্যে হটলাইন, বিশেষ প্রতিনিধিদের মধ্যে পারস্পরিক কথাবার্তা এবং বিভিন্ন সামিট ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে। এই সব ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতীয় এবং চিনা বন্ধুরা পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে নিতে পারবে।"
এ ছাড়া চিন সীমান্তে তৈরি হওয়া উত্তেজনা বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন "আমরা সব সময় ভারতের সঙ্গে আছি" বলে কোনও মন্তব্য করেছেন বলে আমরা কোথাও দেখতে পাইনি।
ইজরায়েল ও জাপান
গ্রাফিক মেসেজে দেখা গেছে যে জাপানের শিনজো আবে এবং ইজরায়েলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, "চিন যদি ভারত আক্রমণ করে, তবে সেখান থেকেই চিনের পতন শুরু হবে। আমরা ভারতের সঙ্গে আছি।" এবং "যারা ভারত আক্রমণের কথা ভাবছে, তাদের আগে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।"
বুম এ রকম কোনও সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান পায়নি, এমনকি স্থানীয় ভাষাতেও এই সংক্রান্ত কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি যাতে দেখা গেছে জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে বা ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই ধরনের কোনও মন্তব্য করেছেন।
এই ভুয়ো উদ্ধৃতিগুলি দিয়ে আমরা ফেসবুকে কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং দেখতে পাই এই বিভ্রান্তিকর গ্রাফিকটি আগেও ভাইরাল হয়েছে এবং এটা ২০১৮ সালেও দেখা গেছে।
আর্কাইভ দেখার জন্য
এখানে ক্লিক করুন।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর বুম এই সংক্রান্ত বহু ভুল তথ্য যাচাই করেছে এবং সেইসঙ্গে এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন অনেক পুরনো ছবিও
ভুয়ো বলে প্রমাণ করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে চিন ভারত আক্রমণ করায় ১৫৮ জন সৈন্য মারা গেছে।