একটি টুইটের স্ক্রিনশটে দাবি করা হয়েছে যে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী) দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি চিনের প্রেসিডেন্টকে তাঁর বস বলে উল্লেখ করেছেন। এটি একটি ভুয়ো টুইট।
বুম আনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখল এই স্ক্রিনশটটির মধ্যে অনেক কারচুপি রয়েছে। তা থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি আসল টুইট নয়। টুইটটিতে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর তারিখ দেখা যাচ্ছে। ইয়েচুরি ওই সময় টুইটারে ছিলেন না। ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর তারিখটি তাঁর টুইটারে যোগ দেওয়ার আগের সময়।
১৫ জুন পূর্ব লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলে ভারতীয় ও চিনা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়। তার পর থেকে ভারত-চিন পারস্পরিক সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর করা সীতারাম ইয়েচুরির টুইটে লেখা হয়, "চিনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই(এম)'র সঙ্গে সম্পর্ককে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। আমার বসের সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমার কাছে খুব আনন্দের। তিনি ভারতের জন্য আমাকে যেসব কর্মসূচি দিয়েছেন তা সফল করার চেষ্টা করব। #বেজিং ট্রিপ লাল সেলাম!"
স্ক্রিনশটের সঙ্গে ইয়েচুরির একটি ছবি দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁকে শি চিনফিংয়েকর সঙ্গে করমর্দন করতে দেখা যাচ্ছে। ইয়েচুরি এবং চিনফিং, দুজনেই কমিউনিস্ট আদর্শের অনুসারী দলের নেতা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ চলছে, তার অংশ হিসাবে এই স্ক্রিনশটটি শেয়ার করা হয়েছে। অনেকেই চিনা দ্রব্য বর্জনের জন্য প্রচার করছেন।
এই টুইটের স্ক্রিনশটটি সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই শেয়ার করেছেন এবং তাঁরা সঙ্গে যে ক্যাপশন দিয়েছেন তাতে দাবি করেছেন চিনকে সমর্থন করার জন্য দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ইয়েচুরিকে গ্রেফতার করা উচিত। পোস্টটির আর্কাইভ
এখানে দেখতে পাবেন।
ইয়েচুরি শি জিংপিংকে নিজের বস বলে উল্লেখ করায় এক জন খুব অবাকও হয়েছেন। পোস্টটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
বিভিন্ন ফেসবুক পেজে এই ছবিটি শেয়ার করা এবং দাবি করা হয়েছে যে সীমান্তে এ রকম সমস্যা চলা সত্ত্বেও সিপিআই(এম) চিনকে সমর্থন করছে। পোস্টটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: 'গ্লোবাল টাইমস' জানিয়েছে ৩০ জন চিনের সেনা নিহত—এই বার্তাটি ভুয়ো
তথ্য যাচাই
টুইটটির তারিখ রয়েছে ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর এবং টুইটারে সীতারাম ইয়েচুরির টুইটের অ্যাডভান্স সার্চ করে আমরা কিছুই খুঁজে পাইনি।
টুইটারের অ্যানালাটিক টুল টুইটনমিতে সার্চ করে আমরা দেখতে পাই ইয়েচুরি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট খুলেছেন ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর অর্থাৎ স্ক্রিনশটে যে তারিখ দেখা যাচ্ছে তার পর। এ থেকেই বোঝা যায় এই টুইটটি ভুয়ো।
২০১৫ সালের স্ক্রিনশট ও ইয়েচুরির করা সাম্প্রতিক টুইট দেখলে কারচুপিটা আরও পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে। সীতারাম ইয়েচুরির আসল টুইটটিতে দেখা যাচ্ছে, তাঁর প্রোফাইল পিকচার এবং টুইটের লেখাটি বাঁ-দিকে এক সরলরেখায় রয়েছে, অর্থাৎ প্রোফাইল পিকচার ও লেখা লেফট-অ্যালাইনড। এটাই টুইটারের ফরম্যাট। নকল টুইটটিতে প্রোফাইল পিকচারটি লেখার তুলনায় সামান্য ডান দিকে সরে রয়েছে।
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আসল ছবিটি খুঁজে পায়, এবং তার থেকেই আমরা দ্য হিন্দু সংবাদপত্রে প্রকাশিত 'পজিটিভ সিগন্যালস ইমার্জ ফ্রম ইয়েচুরিজ মিটিং উইথ চায়নাস টপ লিডার্স' শীর্ষক একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাই।
প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর চিনে এই দুই নেতার সাক্ষাৎ হয়েছিল, যদিও ইয়েচুরি সে বিষয়ে কোনও টুইট করেননি।
সীতারাম ইয়েচুরি শি জিংপিংকে নিজের বস বলে উল্লেখ করছেন, এমন কোনও সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান আমরা পাইনি।