কর্নাটকে মেডিক্যাল, ডেন্টাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠক্রমের রাজ্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় যে সব ছাত্রছাত্রীরা বসেছিল, তাদের মধ্যে ৫০০০ জনেরও বেশি ছেলেমেয়ের কোভিড-১৯ টেস্ট পজিটিভ এসেছে বলে দাবি করে একটি স্ক্রিনশটে নিউজ১৮-এর একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেওয়া হয়েছে। এটি একেবারেই মিথ্যে।
একটি ভাইরাল হওয়া ছবিতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে, যে সব ছাত্র-ছাত্রী কর্নাটকের কনসর্টিয়াম অব মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডেন্টাল কলেজ অব কর্নাটক আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এন্ট্রান্স টেস্ট পরীক্ষায় বসেছিল, তারা কোভিড-১৯ টেস্টে পজিটিভ হয়েছে এবং তারা তাদের পরিবারে্র অন্য সদস্যদের মধ্যেও এই অসুখ ছড়িয়েছে ও তার ফলে ৫৭ জন অভিভাবকের মৃত্যু হয়েছে।
এই ভুয়ো স্ক্রিনশটটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে এটিকে মর্ফ করে নিউজ১৮-এর একটি ওয়েব স্টোরির আকারে তৈরি করা হয়েছে। যারা কর্ণাটকের সিইটি পরীক্ষায় বসেছিল, তাদের মধ্যে ৬০ জনের কোভিড-১৯ ধরা পড়া বিষয়ে এনডিটিভি-র একটি আসল প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট এই মেসেজের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার পর পরীক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে— এই কথাটা প্রতিষ্ঠা করাই পোস্টটির মূল উদ্দেশ্য। সেপ্টেম্বরে জয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংএন্ট্রান্স (জেইই) এক্সাম এবং ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (এনইইটি) আয়োজন করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত করেছে, এবং সুপ্রিম কোর্ট যাতে ছাড়পত্র দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে টুইটারে ছাত্ররা যে প্রচার করছে, এই ভুয়ো পোস্টগুলি তারই অংশ। ১৭ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রবেশিকা পরীক্ষা আরও পিছানোর বিরুদ্ধে রায় দেয়। কেন্দ্রও ২৫ অগস্ট জানায়, পরীক্ষা আর পিছোবে না। ছয়টি রাজ্যর মন্ত্রীরা বর্তমানে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে পরীক্ষার তারিখ পিছনোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছেন।
নিউজ১৮-এর প্রতিবেদনের নকলে যে ভুয়ো খবরটি তৈরি করা হয়েছে, তাতে অজস্র ভুল আছে। সিওএমডিইকে ইউজিএনইটি: ৫৭ জন পরীক্ষার্থীর মৃত্যু, ৫৩৭১ জন পরীক্ষার্থীর কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে এবং ৮৪৫৬ জনকে কোয়রান্টিন করা হয়েছে। শিরোনামে সিওএমইডিকে'র বদলে সিওএমডিইকে লেখা হয়েছে।
অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ইউনিয়নের জাতীয় সহসভাপতি আশুতোষ কুমার এই ভুয়ো নিউজ১৮ স্ক্রিনশটটি এবং এনডিটিভি-র স্ক্রিনশট টুইট করেছেন। এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় যে ৮০,০০০ ছাত্রছাত্রী বসেছিল, তিনি তাদের সঙ্গে তুলনা করেন জেইই ও এনইইটি এবং বিভিন্ন বার্ষিক পরীক্ষায় বসতে চলা ২৮ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে।
This is what happened when only 80,000 candidates appeared for exams all over India just think when 28 Lac students will be appearing what will be the condition!
— Ashutosh kumar (@ashutoshaisa) August 21, 2020
Still they say student cannot decide their welfare.#ProtestAgainstExamsInCOVID pic.twitter.com/PIve4OHlh2
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
জেইই ও এনইইটি পিছিয়ে দেওয়ার দাবিকে যাঁরা সমর্থন করেন, তাঁরা অনেকেই এই ভুয়ো দাবি সমেত স্ক্রিনশটটি পোস্টটি করেন।
This is an current suitation of #comedk2020 aspirants capacity of 50k+ after giving their exam during this pandamic... Then think about Jee Neet aspirant of capacity of 3+ million.. @DrRPNishank @PMOIndia @DG_NTA @iRaviTiwari @ishkarnBHANDARI #ProtestAgainstExamsInCOVID pic.twitter.com/fyvcPU16QX
— SIVA GANESH (@sivaganesh1504) August 21, 2020
#INDIAunitedtoPostponeJEE_NEET @Swamy39 @DrRPNishank @PMOIndia @narendramodi After the biggest failure of COMEDK UGET 2020,how can we push our lives and our family members into death funerals. Why you want to kill us. Are we your enemies???? Whole democracy wants Justice. pic.twitter.com/1mDHTwpeQS
— Sangram Bhanja (@bhanjasangram1) August 22, 2020
আরও পড়ুন: এটি সেনাদের গালওয়ান উপত্যকায় গণেশ পুজো করার ভিডিও নয়
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে নিউজ১৮-এর ছবিটি এডিট করা হয়েছে এবং সেটি মিথ্যে। আর এনডিটিভির প্রতিবেদনটি ভুল ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
সিওএমইডিকে'র পরীক্ষায় যারা বসেছিল বা তাদের বাবা-মায়ের কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে, এই বিষয়ে সার্চ করে আমরা কিছু খুঁজে পাইনি। আমরা নিউজ১৮-এর ওয়েবসাইটেও খুঁজে দেখি, যদি কোভিড-১৯ মৃত্যু সম্পর্কে তারা কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে।
আমরা এই স্ক্রিনশটটি খুব ভাল করে লক্ষ করে দেখতে পাই এটি নিউজ১৮-এর অন্য একটি প্রতিবেদনের উপর এডিট করে বসানো হয়েছে। আসল প্রতিবেদনটি ছিল সিওএমইডিকে ইউজিইটি'র উত্তর ২৩ আগস্ট প্রকাশিত হবে, সেই বিষয়ে।
ভুয়ো স্ক্রিনশট এবং খবরের আসল প্রতিবেদন, দুই জায়গাতেই ৪ টে বেজে ৫৬ মিনিটের একই টাইমস্ট্যাম্প রয়েছে।
কোভিড-১৯ রোগীদের পরীক্ষায় বসার বিষয়ে এন ডি টি ভির প্রতিবেদন
এনডিটিভি-র প্রতিবেদনটি সিওএমইডিকে-র পরীক্ষা বিষয়ে ছিল না। তবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কী ভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিইটি পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং তারা কী ভাবে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনেছে।
এই প্রতিবেদনটি ভুল ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার ছাত্রছাত্রী সিইটি পরীক্ষায় বসেছে এবং তাদের মধ্যে ৬০ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কী ভাবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে তারাও পরীক্ষায় বসতে পারে।
আরও পড়ুন: স্বামীর পকেট থেকে 'গৃহবধূর মাস মাইনে' ভাইরাল হল ২০১২ সালের খবর