মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিখদের একটি প্রতিবাদের ২০১৯ সালের ভিডিও, যাতে বিক্ষোভকারীদের খালিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দিতে শোনা যাচ্ছে, তা নতুন করে শেয়ার করা হচ্ছে এবং সেটিকে বর্তমানে চলা কৃষক প্রতিবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে প্রচার করা হচ্ছে। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডাপ্রবাসী সাংবাদিক তারেক ফতেহ এই ক্লিপটি শেয়ার করেছেন। তারেক ফতেহ ভারতীয় দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এর আগেও বুম ভুল তথ্য শেয়ার করার জন্য তারেকের তথ্য যাচাই করেছে।
ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের তৈরি করা তিনটি কৃষি আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকরা দেশের রাজধানীর সীমান্তে জড়ো হয়েছেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। বিভিন্ন
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় ভারতীয় দূতাবাসের সামনে খালিস্তান-পন্থীরা কৃষকদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
ভাইরাল হওয়া ক্লিপে শিখ বিক্ষোভকারীদের স্লোগান দিতে শোনা গেছে, "কাশ্মীর হবে পাকিস্তান, পাঞ্জাব হবে খালিস্তান, ইমরান খান জিন্দাবাদ"।
ফতাহ ভাইরাল হওয়া ক্লিপটি টুইট করেছেন এবং সঙ্গে ক্যাপশন দিয়েছেন, "#লন্ডনে শিখরা স্লোগান দিচ্ছে আল্লা-হো-আকবর" "#কাশ্মীর হবে #পাকিস্তান" "#পাঞ্জাব হবে #খালিস্তান" @ImranKhanRTI জিন্দাবাদ" পাকিস্তানের আইএসআই'র দৌলতে খুব শীঘ্রই জিহাদি খালিস্তানিরা আপনার প্রতিবেশী হচ্ছে"।
পোস্টটি দেখা যাবে
এখানে এবং আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
পোস্টটি দেখা যাবে
এখানে এবং আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট ওপিইন্ডিয়া ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির উপর হিন্দিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু ওই প্রতিবেদনে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি যে ভিডিওটি পুরানো এবং সাম্প্রতিক কৃষক বিক্ষোভের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
এই প্রতিবেদনটি প্রথমে যে শিরোনামের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল তার অনুবাদ, "স্লোগান দেওয়া হল আল্লা-হ আকবর, পাঞ্জাব হবে খালিস্তান, কাশ্মীর হবে পাকিস্তান আন্দোলনের নামে এই সব স্লোগান উঠল! এরা কেমন অন্নদাতা?" পরে ওয়েবসাইটে এই শিরোনাম বদলে দেওয়া হয় এবং লেখা হয়, "'আল্লা-হ আকবর, কাশ্মীর হবে পাকিস্তান' তারিক ফতেহ ভিডিও শেয়ার করলেন এবং জনতা মন্তব্য করল-' ওদের খালিস্তানি বলবেন না"।
প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
ফেসবুকে সার্চ করে আমরা দেখতে পাই ওই ভাইরাল ক্লিপটি মিথ্যে দাবির সঙ্গে ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
ভাইরাল হওয়া ক্লিপটকে গুরুত্বপূর্ণ অংশে ভেঙ্গে নিয়ে আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। এই সার্চ করার ফলে আমরা দেখতে পাই ভাইরাল হওয়া ক্লিপটি ২০১৯ সালের নভেম্বরের এবং এটি মোটেই সাম্প্রতিক নয়। আমরা দেখতে পাই ভাইরাল হওয়া ক্লিপটি নিউ ইয়র্কের ২০১৯ সালের এবং এটি মোটেই লন্ডনের নয় যেমনটা দাবি করা হয়েছে।
আমরা দেখতে পাই ২০১৯ সালে নভেম্বর মাসের
ফেসবুক পোস্টে এই ভাইরাল হওয়া ক্লিপটি আপলোড করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর উমর আবদুল জলিল এই নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার ফিডে একই ক্লিপ আপলোড করে এবং সঙ্গে উর্দুতে লেখা ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, " বাস্তবিক যিনি সম্মান দেন তিনিই আল্লাহ। যাকে তাঁর মনে হয় তিনি সম্মান করেন। আমাদের রাজনিতীবিদরা তার বিরোধী। অন্য দেশের মানুষরা তাঁর পক্ষে স্লোগান দিচ্ছেন।"
এই ক্লিপের স্লোগান এবং দৃশ্য ভাইরাল হওয়া ক্লিপের সঙ্গে মিলে যায়।
আর্কাইভ দেখার জন্য
এখানে ক্লিক করুন।
এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের হাতে যে প্ল্যাকার্ড রয়েছে তাতে লেখা রয়েছে "নিউ ইয়র্ক", "মোদী"। সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাও দেখা যাচ্ছে।
'মোদী, নিউ ইয়র্ক, কাশ্মীর, খালিস্তান' এ শব্দগুলি দিয়ে আমরা সার্চ করি এবং ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে (ইউএনজিএ) যখন প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছেন তখন কাশ্মীরের মানুষের মানবাধিকারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে মোদীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়।
এর পর আমরা 'ইউনাইটেড নেশনস', 'মোদী', 'খালিস্তান', 'কাশ্মীর' এই সব কিওয়ার্ড দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করি এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ওই প্রতিবাদস্থলের কিছু ফেসবুক ভিডিও দেখতে পাই। বিক্ষোভকারীদের পরনে একই টি-শার্ট এবং হাতে একই প্ল্যাকার্ড দেখতে পাই যেমনটা ভাইরাল হওয়া ক্লিপে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটির ১২ সেকেন্ডের মাথায় ভাইরাল হওয়া ক্লিপে যে রকম মোদী সংক্রান্ত পোস্টার দেখা গেছে, সে একই পোস্টার এবং পিছনে একই বাড়িঘর দেখতে পাই।
নিউ ইয়র্ক প্রতিবাদের ২০১৯ সালের ভিডিওতে যে সব পোস্টার, বিক্ষোভকারী এবং বাড়িঘর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, তা সবই ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সঙ্গে মিলে যায়।
সম্প্রতি চলা কৃষক বিক্ষোভ এবং তাতে অংশগ্রহণকারী প্রতিবাদীদের ঘিরে বিভিন্ন ভুয়ো খবর এবং পুরানো খালিস্তান সমর্থনকারীদের
পুরানো ছবি ও ভিডিও সাম্প্রতিক বলে মিথ্যে দাবি করে শেয়ার করা হয়েছে এবং বুম এর আগেও সেই সব ভুয়ো তথ্যের সত্যতা যাচাই করেছে এবং সেগুলিকে ভুয়ো প্রমাণ করেছে।
কৃষক বিক্ষোভ ঘিরে যেসব ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সে বিষয়ে বুমের থ্রেড ফলো করুন।