গুজরাতের সুরাতে ঘটা একটি বিচলিতকর ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি আর এক জনকে মারধর করছেন, এবং একটি গাড়ির বনেটের ওপর ফেলা থুতু চাটতে বাধ্য করছেন। যিনি মারধর করছেন, তাকে একটি গাড়ির বনেটের উপর বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটিতে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে শেয়ার করা হয়েছে। বুম সুরাট পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এবং তারা জানায়, এই ঘটনায় অভিযুক্ত এবং নিগৃহীত, দু'জনেই মুসলমান— ঘটনাটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনও সম্পর্ক নেই।
ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি আর এক জনকে হিংস্র ভাবে ধাক্কা দিচ্ছে ও মারছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কাকুতিমিনতি করছে। এর পর নিগ্রহকারী একটি গাড়ির বনেটের উপর থুতু ফেলেন, এবং নিগৃহীতকে তা খেতে বাধ্য করেন।
এই ক্লিপটি সাম্প্রদায়িক ক্যাপশনের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে যে, নিগৃহীত এক জন মুসলমান। তাকে এক জন হিন্দু মারধর করেছেন এবং রমজানে রোজা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য তাকে থুতু খেতে বাধ্য করা হয়েছে। সদ্য শেষ হল রমজান মাস। এই মাসে দেশের সর্বত্র মুসলমানরা ইদ-উল-ফিতরের আগে এক মাস ধরে রোজা করেন, অর্থাৎ উপবাস পালন করেন।
ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এক জন মুসলমানকে এক জন #হিন্দুর থুতু চাটতে বাধ্য করা হল। সম্ভবত রমজানের উপবাস ভাঙ্গার জন্যই। গাড়ির উইন্ডশিল্ড দেখে বোঝা যাচ্ছে, ঘটনাটি সুরাটের।
পাঠককে নিজস্ব বিবেচনা অনুসারে ভিডিওটি দেখা বা না দেখার সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
ভিডিওটি দেখা যাবে এখানে। আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকে ভাইরাল
একই ক্যাপশন দিয়ে আমরা ফেসবুকে সার্চ করি এবং দেখতে পাই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ওই একই মিথ্যে ক্যাপশন দিয়ে শেয়ার করা হয়েছে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
দ্য মিলি গেজেট নামে দিল্লির একটি পাক্ষিক সংবাদপত্র মিথ্যে দাবির সঙ্গে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি প্রথম শেয়ার করে। পরে ক্যাপশনে আপডেট করে জানানো হয় যে ঘটনাটি ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই পোস্টে আগের ক্যাপশন গুলিতে ঘটনাটির উপর সাম্প্রদায়িক রঙ চড়ানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন: না, জোড়-বিজোড় নীতিতে স্কুল খোলা নিয়ে রাহুল গাঁধী কোনও টুইট করেননি
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে জানতে পারে যে ঘটনাটি সুরাতের। শহরে কোভিড-১৯'র জন্য লকডাউন থাকা সত্ত্বেও বাইরে বেরনোর কারণে এক ব্যক্তিকে মারধর করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক যোগাযোগ থাকার কথা সুরাত পুলিশ একেবারেই অস্বীকার করেছে। তারা আরও জানিয়েছে যে, ভিডিওটি ৬ এপ্রিলের এবং রমজান মাস শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগের ঘটনা।
ভিডিওটির সূত্র ধরে আমরা 'সুরাট', 'ম্যান বিটেন', 'স্পিট' ইত্যাদি কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং কিছু সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের সন্ধান পাই। সেই প্রতিবেদনগুলি থেকে জানতে পারি যে ঘটনাটি গুজরাত রাজ্যের সুরাতের লিম্বায়ত অঞ্চলে ঘটে।
এবিপি নিউজের গুজরাতি ভাষার চ্যানেল এবিপি অস্মিতা ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল এই ঘটনাটির উপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং অভিযুক্তকে সলমন বলে শনাক্ত করে এবং তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানায়।এর পর বুম লিম্বায়ত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পুলিশ জানায় যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ নেই। তারা আরও জানায় যে দুপক্ষই একই ধর্মের ছিলেন।
২০২০ সালের ৮ এপ্রিল টিভি ৯ গুজরাটি তে প্রকাশিত আরও একটি সংবাদ প্রতিবেদনে ঘটনাটি দেখানো হয়।