মধ্যপ্রদেশে পুলিশ হেফাজতে থাকা এক ধর্ষণে অভিযুক্তের ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ছবি অনেক নেটিজেন উত্তরপ্রদেশের হাথরসের দলিত তরুণীর ধর্ষণ ও খুনের অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন বলে ভুল করেছেন।
পোস্টগুলিতে এই ছবিটির সঙ্গে আরও একটি ছবি রয়েছে, যাতে অভিযুক্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। দুটি ছবিই ভাইরাল হয়েছে— সঙ্গে ক্যাপশন রয়েছে যে, ১৪ সেপ্টেম্বর হাথরসে যে দলিত তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে, তার মূল ষড়যন্ত্রীদের মধ্যে এক জন কংগ্রেস নেতা রয়েছে এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ওই তরুণী দু'সপ্তাহ আগে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে মারা গেছেন। তাঁর উপর হওয়া অকথ্য অত্যাচার এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে লুকিয়ে তাঁর শেষকৃত্য করার ফলে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
হাথরসের ঘটনায় অভিযুক্তদের নাম রামু, সন্দীপ, তার কাকা রবি এবং বন্ধু লবকুশ বলে জানা গেছে। চার জন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভাইরাল পোস্টে যে অভিযুক্তকে দেখা যাচ্ছে, সে মধ্যপ্রদেশের সিকান্দার খান। তাকে সেপ্টেম্বর মাসে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। বুম সাতনার কংগ্রেস কমিটির জেলা সভাপতি মাকসুদ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, অভিযুক্ত তাঁদের পার্টির সদস্য নয়।
ইংরেজি এবং তেলুগু ভাষায় লেখা ভাইরাল হওয়া পোস্টে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "সমীর খান। উত্তরপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা। এই লোকটি এক দলিত মহিলার উপর অত্যাচার করেছে। আপনারা এর প্রতিবাদ করতে চান না কি?" আর্কাইভ দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
নীচে তেলুগু ভাষায় লেখা এরকমই একটি পোস্ট দেওয়া হল। (ক্যাপশনের বাংলা অনুবাদ, "সমীর খান, এই কংগ্রেস নেতাকে উত্তরপ্রদেশের দলিত তরুণীর ধর্ষণ কাণ্ডে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে যে, অভিযুক্তকে কোর্টে তোলার পর ১৫ দিনের রিমান্ডে রাখার আদেশ হয়েছে। এ বার আমাকে বলুন কে দলিতদের ধর্ষণ করে! কাল পর্যন্ত যারা অজস্র পোস্ট পাঠিয়েছ তারা আমাকে বলো আমাদের কি এদের এনকাউন্টার করা উচিত নয়? এ বার ওই সব পোস্ট রেখে দাও। এই ব্যক্তি যে এক জন দলিত তরুণীকে শেষ করেছে তার এনকাউন্টার করা হোক। কেউ কথা বলবে না, কেউ কথা বলবে না?!")
তথ্য যাচাই
বুম ওই ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সিকান্দার খানের পুলিশি হেফাজতে থাকার ছবিটি দেখতে পায় সঙ্গে পাঞ্জাব কেশরীর মধ্যপ্রদেশ ব্যুরোর একটি নতুন প্রতিবেদন দেখতে পায় যাতে ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে সিকান্দার খান এক জন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা, যার বিরুদ্ধে এক নাবালিকা যৌন হেনস্থার অভিযোগ করায়—এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে সাতনা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, অভিযুক্ত ওই নাবালিকার সঙ্গে প্রথমে ফেসবুকে বন্ধুত্ব করে এবং পরে বহু বার তার যৌন শোষণ করে। অভিযুক্ত আপত্তিকর ভিডিও তুলে মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেলও করে।
নিউজ ১৮'র একটি প্রতিবেদন অনুসারে অভিযুক্তকে প্রিভেনশন অব চিল্ড্রেন এগেনস্ট সেক্সুয়াল অফেন্সের (পস্কো) ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে সাতনার সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ রিয়াজ ইকবাল জানিয়েছেন যে, কোর্টে পেশ করার পর তাকে পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে ওই ব্যক্তি নিজেকে কংগ্রেস নেতা হিসাবে দাবি করেছে এবং কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তার ছবিও রয়েছে।
একটি প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে সাতনা পুলিশ জানিয়েছে যে, অভিযুক্ত চারটি নামের আড়ালে এইসব কাজ করছিল—আতিক, সমির, সিকান্দার খান এবং গিনি খান।
অভিযুক্তের কংগ্রেস যোগে প্রশ্ন উঠেছে
ভাইরাল হওয়া সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে খান কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দেখানো হয়েছে, কিন্তু তা সত্যি কি না, পরিষ্কার করে জানা যায়নি। বুম সাতনার কংগ্রেস কমিটির জেলা সভাপতি মাকসুদ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, "সিকান্দার খান কোনও নেতা নয়। সে কোনো পদাধিকারীও নয়, এমনকি সে কংগ্রেসের পার্টির সদস্যও নয়। বিজেপি ধর্ষণের অভিযোগে সাম্প্রদায়িক রং লাগাতে অভিযুক্তের সঙ্গে কংগ্রসের যোগ আছে বলছে।" অভিযুক্তের সঙ্গে কংগ্রেস বিধায়ক রাজেন্দ্র কুমার সিংহের ছবির ব্যাপারে আহমেদকে যখন প্রশ্ন করা হয় তিনি উত্তরে বলেন, "রাজেন্দ্র সিংহের জন্মদিনে সিকান্দার খান এই পোস্টারগুলি প্রকাশ করেছিল এবং তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপারে কংগ্রেস দল কোনও ভাবেই দায়ী নয়।"