সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে চিকিত্সাকর্মীরা যে মুখাবরণী পরেন, সেটি ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি জানিয়ে বলা হচ্ছে, তিনটি পরতে ভাগ করা এই মুখাবরণীর শাদা ও রঙিন অংশটির তাত্পর্য আলাদা-আলাদা। এই বক্তব্যটি বিভ্রান্তিকর।
পোস্টের ভাইরাল হওয়া ছবিতে মুখাবরণী পরা দু জনকে দেখানো হয়েছে এই বলে যে, আবরণীর রঙিন এবং শাদা, দুটি দিকই পৃথক কারণে বাইরের দিকে রেখে পরতে হবে।
বার্তাটিতে জানানো হয়েছে, আবরণীর রঙিন অংশটি বাইরের দিকে থাকবে, যদি আপনি ইতিমধ্যেই সংক্রামিত হয়ে থাকেন এবং যাতে আপনার ভাইরাস অন্যদের সংক্রামিত করতে না পারে। আর শাদা ফিল্টার অংশটি বাইরের দিকে রাখতে হবে, যদি আপনি সংক্রামিত না হয়ে থাকেন এবং আপনার শরীরে ভাইরাসের প্রবেশ রোধ করতে চান।
বুম এ ব্যাপারে এক চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, বার্তাটি বিভ্রান্তিকর। অনেক দিন ধরেই এ দেশে এবং বিদেশেও বায়ু-দূষণ থেকে বাঁচতে লোকেরা এ ধরনের আবরণী ব্যবহার করে আসছে এবং এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধেও তাই করছে।
বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও নীচের ছবিটি পাঠিয়ে এই বার্তার সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ এসেছে:
ফেসবুকেও এই পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম মুখাবরণ কীভাবে পরা উচিত, তা নিয়ে অনলাইনে খোঁজ লাগালে বেশ কয়েকটি ভিডিও ও প্রতিবেদন নজরে এসেছে।
যেমন সানফ্রান্সিসকোর জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মুখাবরণের রঙিন দিকটা বাইরের দিকে রাখতে হবে। আবরণীর ফিল্টার বা ছাঁকনি অংশটা নাকের কাছে থাকবে। তবে বিভাগের ওয়েবসাইটে বারবার স্বাস্থ্যসম্মত ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং হাত পরিষ্কার করে ধোয়ার ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
টাইম ম্যাগাজিনের একটি ভিডিওতেও আবরণীটি পরার সঠিক পদ্ধতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা কথা বলেছেন। তাঁদের বক্তব্য— আবরণীর রঙিন দিকটা সবসময়েই বাইরের দিকে রেখে পরতে হবে, তা সে পরিধানকারী সুস্থ হোন বা ইতিমধ্যেই সংক্রামিত।
কেরালার এক জরুরি বিভাগের চিকিত্সক ডাঃ জোনাথন ফার্নান্ডেজও আবরণী পরার 'বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি' সংক্রান্ত বার্তাটিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। একের পর এক টুইটে তিনি আবরণী পরার সঠিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেছেন:
#thread
— Jonathan 👨⚕️⚕️ (@just1doctorwala) January 31, 2020
Everytime there is a new epidemic different WhatsApp forwards pop up. This particular one i have seen at least 3 times in the last 4 years
Short answer
The information in this picture is WRONG & FALSE#FactCheck#coronavirusindia #coronarvirus #CoronavirusOutbreak pic.twitter.com/P67Yms9k0n
ডাঃ ফার্নান্ডেজ তাঁর টুইটে জানিয়েছেন, "বহুল ব্যবহৃত এই মুখাবরণীগুলো সবচেয়ে নিরাপদ নয়। তুলনায় এন-৯৫ আবরণীগুলি দামি হলেও ভাইরাসবাহী কণা প্রতিরোধে বেশি কার্যকর।" তিনি আরও জানান, সাধারণ সার্জিকাল মাস্কগুলো সচরাচর যিনি পরে রয়েছেন, তাঁর জন্য, আশপাশের লোকেদের জন্য নয়l তিনি জোরে সঙ্গেই বলেন যে, "এই আবরণীগুলো পরার একটাই পদ্ধতি— রঙিন দিকটা বাইরের দিকে থাকবে।"
বুম ডাঃ ফার্নান্ডেজের কাছে জানতে চায়, কেন তিনি এন-৯৫ আবরণীর উপর জোর দিচ্ছেন! জবাবে তিনি বলেন, তাঁর নিজের পিতৃদেবও ওই সাধারণ আবরণীই ব্যবহার করছিলেন হোয়াট্স্যাপ বার্তা বিশ্বাস করে এবং তাঁকেও তিনি বার্তাটি ফরোয়ার্ড করেন।
তাঁর কথায়: "আবরণী পরার উদ্দেশ্য হলো মুখের চারপাশ শক্ত করে এঁটে দেওয়া, যাতে শুধু শ্বাস নেওয়ার মতো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। কেবল এন-৯৫ আবরণীই এটা সফলভাবে করতে পারে, অন্য বাজার-চলতি আবরণী নয়। সাধারণ আবরণীগুলি জলীয় কণার প্রবেশ ঠেকাতে পারে, কিন্তু তারা মাইক্রোব বা অণুর মতো ক্ষুদ্র পদার্থের প্রবেশ রোধ করতে পারে না। এন-৯৫ সে জায়গায় ০.২ মাইক্রনের চেয়েও ক্ষুদ্র পদার্থকণার প্রবেশ ৯৫% রোধ করার জন্যই তৈরি হয়েছে।"
ভারত মুখাবরণীর রফতানি নিষিদ্ধ করেছে
৩ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ভারত দেশে তৃতীয় করোনাভাইরাস আক্রান্তের অস্তিত্ব স্বীকার করেছে। তিন জন আক্রান্তই কেরালার বাসিন্দা, যারা চিনের উহান থেকে ভারতে পৌঁছেছে। ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসে ৮০০র বেশি মানুষ মারা গেছে এবং শুধু চিনেই ৩৮ হাজারের বেশি লোক সংক্রামিত হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ ভারত সরকার মুখাবরণীর রফতানি নিষিদ্ধ করেছে।