জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার লাইব্রেরিতে নিরীহ ছাত্রদের ওপর পুলিশের নৃশংস লাঠিচার্জের যে ভিডিও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে যে ছাত্রদের মার খেতে দেখা যাচ্ছে, তাদের এক জনের পোশাক নাকি ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ফ্রেন্ডস কলোনির সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া দুষ্কৃতীর সঙ্গে এক। সেই দুষ্কৃতী একটা বাইকে আগুন লাগাচ্ছিল। এই 'মিল'-এর ভিত্তিতেই অনেকে টুইটারে দাবি করলেন, জামিয়ার এই ছাত্রই ফ্রেন্ডস কলোনির দুষ্কৃতী। অনুমানটি তথ্যগত ভাবে ভুল। বুম দুটো ফুটেজ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে দুই ব্যক্তির মধ্যে দৃশ্যত স্পষ্ট ফারাক রয়েছে।
২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি আনঅফিশিয়াল জামিয়া হ্যান্ডল থেকে জামিয়ায় লাঠিচার্জের সিসিটিভি ফুটেজ টুইটারে প্রকাশ করা হয়। তার ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল: "ভিডিওটি দেখুন এবং বুঝুন, দিল্লি পুলিশের হাতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্রদের কী নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছিল। লাইব্রেরিতে পাঠরত ছাত্রদের আক্রমণ করল পুলিশ, অকারণেই নৃশংশ ভাবে মারধর করল। #জামিয়াপ্রোটেস্টস।''
Watch this and realise what kind of trauma and brutality #JamiaMilliaIslamia students faced on the hands of @DelhiPolice.
— Jamia Millia Islamia (@jamiamillia_) February 16, 2020
Students studying in library are being attacked and brutalised for no fault of theirs.#JamiaProtests pic.twitter.com/1yxRK0Ic7b
সিসিটিভি ফুটেজের টাইম অ্যান্ড ডেট স্ট্যাম্প দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ভিডিওটি ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের। সে দিনই জামিয়ার নিকটবর্তী ফ্রেন্ডস কলোনিতে বিপুল অশান্তি হয়, অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা একটি বাইক ও বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: না, জামিয়ায় গুলিবিদ্ধ ছাত্রের ক্ষত ভুয়ো নয়
সেই ঘটনার ক্লিপটি গত ২৩ ডিসেম্বর অনেকেই শেয়ার করেন। তাঁদের মধ্যে নিউজ ১৮-এর সাংবাদিক সাহিল মেঙ্ঘানিও ছিলেন।
#BREAKING THREAD #CAA
— Saahil Murli Menghani (@saahilmenghani) December 23, 2019
-JAMIA's 1st day, 1st violence mystery resolved.
-4 videos CAPTURE rioters setting bus on fire
-They weren't COPS, they were TRAINED hired RIOTERS.
-Videos captures petrol, rioters, act of fire, precision & PRE-PLANNING
1/4 👇🏻👇🏻https://t.co/B7UEqvvpRo
কিছু ক্ষণের মধ্যেই বহু লোক দাবি করতে আরম্ভ করেন যে এই দুষ্কৃতীদেরই জামিয়ার লাইব্রেরিতে লেখাপড়া করতে দেখা গিয়েছে, এবং পুলিশ এদের ওপরই লাঠিচার্জ করেছে। এই দাবির ভিত্তি ছিল একটিমাত্র অনুমান: তাদের একই রকম জ্যাকেট পরতে দেখা গিয়েছে, এবং মুখ ঢাকার জন্য একই রকম রুমাল ব্যবহার করা হয়েছে।
Yea .. the guy you see in a sweater with stripes on his arm, he is a student .. first he went out of the Jamia campus for his SUPW period and then later returned for his Library .. Police shouldn't have stopped him from his curricular activities !! pic.twitter.com/GJciwX0wtt
— Yo Yo Funny Singh (@moronhumor) February 16, 2020
দুটি ফুটেজ থেকে এই দুজনের ছবি নিয়ে তার মধ্যে তুলনা করে দাবি করা হয়েছে যে দুজনের পোশাক এবং রুমাল একই রকম।
তথ্য যাচাই
বুম এই দুটি ফুটেজের মধ্যে তুলনা করে দেখে, এবং বুঝতে পারে, একই রকম পোশাকের যে অনুমানের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ দাবিটি করা হচ্ছে, সেটি আসলে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।
দুটি ছবিকে পাশাপাশি তুলনা করে আমরা দুটি স্পষ্ট অমিল চিহ্নিত করতে পারি।
১. দুষ্কৃতীর পরনে একটি জ্যাকেট, আর জামিয়ার ছাত্র একটি হুডি পরে আছেন।
২. দুষ্কৃতীর জ্যাকেটের হাতে লাল ও সাদা স্ট্রাইপ রয়েছে, জামিয়ার ছাত্রের হুডির হাতে রয়েছে শুধু সাদা স্ট্রাইপ।
এমনকি, দুজনের পরনের রুমালও আলাদা। দুষ্কৃতীর রুমালটি নীল রঙের, আর জামিয়ার ছাত্রের রুমালটি সাদা।
বিবিসি ও দ্য কুইন্ট জামিয়ার ভিডিওতে থাকা ছাত্রটিকে মহম্মদ সলমন খান বলে চিহ্নিত করেছে। তিনি জামিয়ায় পিএইচডি গবেষক। কুইন্টের একটি ভিডিও ইন্টারভিউয়ে খানকে একই হুডি পরিহিত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। এবং স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ফ্রেন্ডস কলোনির দুষ্কৃতীর জ্যাকেটে যে লাল স্ট্রাইপ ছিল, খানের হুডির আস্তিনে তা নেই।
বুম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সে দিন সন্ধ্যায় পুলিশ ক্যাম্পাসে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করায় তিনি মুখ ঢাকার জন্য রুমাল ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি আরও দাবি করেন যে লাইব্রেরির ফুটেজটি যে সময় নেওয়া, তিনি তার অন্তত পাঁচ ঘণ্টা আগে থেকেই ক্যাম্পাসে ছিলেন।
ফ্রেন্ডস কলোনিতে যে সময় অশান্তি চলছিল, খান তখন কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন, বুম তা নিরপেক্ষ ভাবে জানতে পারেনি। কিন্তু, দুষ্কৃতী ও খানের পোশাক একই, অতএব তিনিই ফ্রেন্ডস কলোনিতে বাইকে আগুন ধরাচ্ছিলেন, এই দাবিটি মিথ্যে।
আরও পড়ুন: জামিয়া কাণ্ড: কী ভাবে সোশাল মিডিয়ার একটি গুজব নিউজ-১৮-এ জায়গা করে নিল
আরও পড়ুন: জামিয়াতে গুলি ছোঁড়া নিয়ে রিপাবলিক টিভির ভুল খবর, বন্দুকবাজকে বলল সিএএ বিরোধী