বেশ কিছু সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী দাবি করেছেন যে, পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ধর্ষণের ঘটনা ভারতে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-এর ২০১৮ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে বুম দেখে দাবিটি মিথ্যে। এনসিআরবি হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সংস্থা।
২০১৮-র পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছর পশ্চিমবঙ্গে ১,০৬৯ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই সংখ্যা, শীর্ষে-থাকা মধ্যপ্রদেশের চেয়ে কম। পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধের (Rape Case) হার (প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায়) ২.৩, যা বেশ কম। সেই তুলনায় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ধর্ষণ সংক্রান্ত (Rape Crime) অপরাধের হার হল ১৬.১, যা ভারতে সর্বোচ্চ।
গ্রাফিকটিতে লেখা হয়েছে, "বাংলায় নেই মা বোনেদের সম্মান ২০১৮ NCRB তথ্য অনুযায়ী দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সব থেকে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে । নারী সুরক্ষায় মমতা ডাহা ফেল।"
নিচে গ্রাফিকটি দেওয়া হল।
ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টটি নিচে দেওয়া হল।
ভারতে ধর্ষণের ক্ষেত্রে, মধ্যপ্রদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে। সে রাজ্যে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ৫,৪৩৩টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়। আর ধর্ষণের শিকারের সংখ্যা ছিল ৫,৪৫০। পশ্চিমবঙ্গে ১,০৬০টি ঘটনা ঘটে। আর ধর্ষরণের শিকার হন একই সংখ্যক মহিলা। ২০১৮-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে ধর্ষণের হার ছিল ১৩.৮।
এনসিআরবি-র দেওয়া, ২০১৮ সালে কয়েকটি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ধর্ষণের সংখ্যা, নির্যাতিতার সংখ্যা ও ধর্ষণের হার নিচে দেওয়া হল।
সামগ্রিকভাবে, ভারতীয় দন্ডবিধির নানা ধারায় ও অন্যান্য আইনের আওতায়, নারী নির্যাতনের ৩০,৩৯৪টি ঘটনা ঘটে পশ্চিমবঙ্গে। নির্যাতিতার সংখ্যা ছিল ৩০,৯২১। ভারতে নারী নির্যাতনের ঘটনার ৮% ঘটে পশ্চিমবঙ্গে। ওই সংক্রান্ত অপরাধের হার ছিল ৬৪.৪। উত্তরপ্রদেশে ঘটে ৬২,৪৫১ ঘটনা, নির্যাতিতার সংখ্যা ছিল ৫৯,৪৪৫, আর হার ছিল ৫৫.৭। মহারাষ্ট্রে ঘটে ৩৫,৪৯৭টি ঘটনা, নির্যাতিতার সংখ্যা ছিল ৩৬,৩০১, আর অপরাধের হার ছিল ৬০.৯।
সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা আরও কিছু দাবি করেছেন। তাঁরা অভিযোগ করছেন যে, মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের প্রশাসন বেশ শিথিল। এনসিআরবি-র ২০১৮-র রিপোর্টে ক্রমবর্ধমান অ্যাসিড আক্রমণ, ধর্ষণের চেষ্টা ও শাস্তির কম হারের পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে টুইটারে ওই দাবি করা হয়।
বুম দেখে, ওই অভিযোগগুলি সত্য। পশ্চিমবঙ্গে কোর্টের দ্বারা শাস্তির হার ৫.৩%। দেখা যায়, ৬,৬১১টি মামলার নিষ্পত্তি হলেও, সাজা দেওয়া হয় ৩৪৮টি ক্ষেত্রে।
পশ্চিমবঙ্গে ৯৪৪টি ধর্ষণের চেষ্টা নথিভুক্ত হয়। নির্যাতিতার সংখ্যা ছিল ৯৫৮। আর এই অপরাধের হার ছিল ২, যা সর্বভারতীয় স্তরে ছিল দ্বিতীয়। এই অপরাধের ৩.৭ হার নিয়ে, অসম পশ্চিমবঙ্গের থেকে এগিয়ে ছিল।
তাছাড়া সারা ভারতে ১৩১টি অ্যাসিড আক্রমণের ৩৬টি ঘটনাই ঘটে পশ্চিমবঙ্গে। সারা ভারতে ১৩৬ জন মহিলা অ্যাসিড আক্রমণের (Acid Attack) শিকার হন। তার মধ্যে ৩৮ জন হলেন পশ্চিমবঙ্গের।
এনসিআরবি-র ২০১৯-এর রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের কোনও পরিসংখ্যান নেই। কারণ, রাজ্য সময় তথ্য জমা দেয়নি।
এনসিআরবি-র ২০১৮-র রিপোর্ট পড়ুন এখানে।আরও পড়ুন: