একটি ছবিতে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে এক মহিলাকে আলিঙ্গন করতে দেখা যাচ্ছে, ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং ছবিটিতে উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে যে, ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে সে এক জন নকশালপন্থী, যে হাথরসের নীপিড়িতার আত্মীয় হিসাবে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়েছে।
বুম মৃতার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের নিশ্চিত ভাবে জানান যে, ছবিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে তিনি তাঁর মা। আমরা রাজকুমারী বনসলের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। ভুয়ো ক্যাপশনে ছবির মহিলাকে রাজকুমারী বনসল বলেই দাবি করা হয়েছে। তিনিও আমাদের নিশ্চিত ভাবে জানান যে, যে দিন কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন, সেদিন রাজকুমারী সেখানে ছিলেন না।
২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের হাথরসের আক্রান্ত দলিত তরুণী সফদরজং হাসপাতালে মারা যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। ২০২০ সালের ১৪ জুন উচ্চবর্ণের চার দুষ্কৃতি ওই তরুণীর ধর্ষণ করে এবং নৃশংস ভাবে তাঁকে মারধর করে।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী এক মহিলাকে আলিঙ্গন করছেন যাঁকে ক্যামেরায় পিছন থেকে দেখ যাচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া ছবিটির সঙ্গে হিন্দিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "এই ফোটোশুট মনে আছে? প্রিয়ঙ্কা গাঁধী কি নকশাল ভাবীকে চিনতেন? প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কেন শুধু নকশাল ভাবীকে আলিঙ্গন করলেন, মাকে নয় কেন? আজ তক নিউজ শুধু ভাবীর সাক্ষাৎকার নিল?#কংগ্রেসউইথনকশাল"।
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনঃ याद है ये फोटोशूट ... क्या प्रियंका नक्सली भाभी को जानती थी ??? क्यों प्रियंका ने सिर्फ नक्सली भाभी को गले लागया माँ को नही ??? आजतक न्यूज ने भाभी का ही इंटरव्यू क्यों लिया #CongressWithNaxals)
নীচে ভাইরাল হওয়া পোস্টটি দেওয়া হল এবং এখানে ক্লিক করলে আর্কাইভ দেখতে পাবেন।
একই দাবির সঙ্গে ছবিটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হয়েছে।
বুম তার হেল্পলাইন নাম্বারে এই ছবিটির তথ্য যাচাই করার জন্য একটি অনুরোধও পায়।
আরও পড়ুন: এগুলি কি মানব-শূকর সংকর শাবকের ছবি?
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, এখন ভাইরাল হওয়া ছবিটি ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর যখন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা হাথরসের আক্রান্তের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তখন তোলা হয়েছিল।
অক্টোবরের ৪ তারিখ এই একই ছবি এবিপি লাইভে দেখানো হয় যেখানে পিটিআইকে কৃতজ্ঞতাও জানানো হয়। ওই ছবিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়, "প্রিয়ঙ্কা গাঁধী শোকতপ্ত পরিবারের এক সদস্যকে জড়িয়ে ধরেন এবং তাঁদের নৈতিক ও মানবিক সমর্থন যোগান। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা এই কংগ্রেস নেতাকে আজ চালকের আসনে দেখা যায়। তিনি তাঁর ভাই রাহুল গান্ধীকে আজ হাথরসে নিয়ে যান।" (পিটিআই ফোটো)।
পিটিআই-এর ছবিতে ওই মহিলার সঙ্গে আক্রান্তের কী সম্পর্ক, তা উল্লেখ করা ছিল না তাই আমরা আক্রান্তের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিই।
বুম মৃতার এক ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তিনি আমাদের নিশ্চিত করে জানান যে, ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি তাঁর মা।
নীপিড়িতার ভাই বুমকে বলেন, "যে মহিলাকে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী আলিঙ্গন করছেন, তিনি আর কেউ নন, আমার মা। এই ছবিটি সম্পর্কে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়েছে যেগুলির কোনোটাই সত্যি নয়।"
এর পর আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া 'নকশাল ভাবী' দাবির ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করি। তিনি জানান, যে ভদ্রমহিলাকে 'নকশাল ভাবী' বলে বর্ণনা করা হচ্ছে তিনি আসলে জব্বলপুরের একজন চিকিৎসক। তিনি আরও জানান যে, ওই চিকিৎসক ৪ অক্টোবর হাথরস পৌঁছান এবং জব্বলপুর যাওয়ার আগে তাঁদের সঙ্গে কয়েক দিন ছিলেন।
ভাই বুমকে জানান, "উনি ঘটনাটি সম্পর্কে পড়েছিলেন তাই আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের এক জন চিকিৎসক।"
বুম তার পর রাজকুমারী বনসলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ভাইরাল হওয়া পোস্টে তাঁকেই প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সঙ্গে ছবিতে দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। ড. বনসল জব্বলপুর মেডিকেল কলেজের এক জন শিক্ষিকা।
ডঃ বনসল আমাদের বলেন যে, ৩ অক্টোবর যখন কংগ্রেস নেতৃত্ব হাথরসে ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান তখন তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি বুমকে বলেন, "আমি হাথরস পৌঁছাই ৪ অক্টোবর এবং তারপর কয়েক দিন ওখানে ছিলাম। আর আমি কখনও শাড়ি পরি না বা ঘোমটায় মুখ ঢাকি না। প্রশাসন যখন ওই পরিবারকে বাইরের কারোর সঙ্গে কথা বলতে বারণ করে, আমি তখন জব্বলপুর ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা দিই।"
তিনি আরও বিস্তারিত ভাবে জানান যে আক্রান্তের পরিবারের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই এবং তিনি হাথরসে গিয়েছিলেন শুধু মানবিকতার খাতিরে। বনসল বলেন, "আমি ওখানে যাই কারণ ঘটনাটি সম্পর্কে পড়ে আমি খুবই প্রভাবিত হই। তাঁদের পরিবারের লোকেদের নিয়েও আমি চিন্তিত ছিলাম। আমি ৬ অক্টোবর ফিরে আসি।"
তাঁর সঙ্গে নকশাল যোগাযোগের যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বুমকে জানান যে, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই সব অভিযোগ কোথা থেকে এসেছে সে সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা নেই। তিনি আমাদের আরও বলেন যে, তিনি জব্বলপুরের সাইবার সেলে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বুম হাথরসের ঘটনা সম্পর্কিত অনেকগুলি খবরের তথ্য যাচাই করেছে। এখানে সেগুলি পড়তে পারেন।
ইতিমধ্যে যে মেডিকেল কলেজ ড. বনসল এখন কর্মরত, সেখান থেকে তাঁকে কারণ দর্শানোর জন্য একটি নোটিস দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এখানে আরও পড়তে পারেন।
আমরা অনেকগুলি ভিডিও দেখতে পাই যাতে ড. বনসলকে হাথরসের আক্রান্তের বাড়ির উঠোনে দেখা গেছে এবং ওই ভিডিওগুলিতে তাঁকে সালোয়ার কামিজ পরে থাকতে দেখা গেছে।