ভারত-চিন সীমান্ত সম্প্রতিক সংঘর্ষে নিহত কর্নেল সন্তোষ বাবু'র একটি ছবির সামনে একটা বাচ্চা মেয়ে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে যে মেয়েটি নিহত কর্নেলেরই কন্যা।
কর্নেল সন্তোষ বাবু ছিলেন ১৬ নম্বর বিহার রেজিমেন্টের কমান্ডারl পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক সংঘর্ষে হত ২০ জন ভারতীয় সেনার মধ্যে তিনিও ছিলেন।
আইইএনএস-এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী গত দেড় বছর ধরে তিনি চিন-ভারত সীমান্তে কর্তব্যে নিযুক্ত ছিলেন এবং তাঁর পরিবার আশা করছিল, শীঘ্রই তিনি হায়দরাবাদে বদলি হয়ে যাবেন। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপের দরুন বদলিটা পিছিয়ে যায়।
নিহত কর্নেলের স্ত্রী, বাবা-মা, ৮-৯বছরের একটি মেয়ে এবং ৪ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ওই মেয়েটির নাম করেই ভুয়ো ছবিটি প্রচার হয়েছে। বুধবার রাতে তাঁর মরদেহ হায়দরাবাদে নিয়ে আসা হলে পদস্থ সরকারি অফিসার ও সেনা অফিসাররা তা গ্রহণ করতে হাকিমপেট বিমানঘাঁটিতে উপস্থিত ছিলেন।
কর্নেলের ছবির সামনে শ্রদ্ধা জানাবার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ের ছবি ভাইরাল হতে শুরু করে ১৭ জুন। অসংখ্য বার ছবির মেয়েটিকে নিহত কর্নেলের কন্যা বলে পরিচয় দিয়ে ছবিটি শেয়ার হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের মিডিয়া উপদেষ্টা এবং ভরতের জাতীয় যুব পরিষদের সভাপতি অমরপ্রসাদ রেড্ডি পর্যন্ত এটি শেয়ার করেছেন। তাঁর টুইটের আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে l
ফেসবুকে একই ক্যাপশন দিয়ে অনেকেই ছবিটি শেয়ার করেছেনl সে রকমই একটি পোস্টের আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে।
এমনকী অনেক সংবাদ-প্রতিবেদনও ছাপা হয়, যাতে ছবির মেয়েটিকে নিহত কর্নেলের কন্যা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ফেমিনা পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই মর্মে, যার আর্কাইভ বয়ান এখানে দেখা যেতে পারে।
'নিউজ নাউ' নামে একটি অনলাইন প্রকাশনাও একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার আর্কাইভ বয়ান এখানে দেখতে পারেন।
'ইন্ডিয়া ডট কম'-ও মেয়েটির একই পরিচয় দিয়ে অনুরূপ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার আর্কাইভ সংস্করণ এখানে দেখা যাবে।
'ডেকান ক্রনিকল'-এও একই ধরনের প্রতিবেদনে মেয়েটিকে কর্নেল সন্তোষের কন্যা বলে প্রচার করা হয়, যার আর্কাইভ বয়ান এখানে দেখতে পারেন।
তথ্য যাচাই
বুম টুইটারে একাধিক মূল শব্দ বসিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে, সেখানে এবিভিপি-র একটি টুইটে বিষয়টা সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা রয়েছে, যার আর্কাইভ বয়ানটি এখানে দেখা যেতে পারেl (এবিভিপি হলো আরএসএস-এর ছাত্র-সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থঈ পরিষদের সংক্ষিপ্ত নাম)।
সেখানে বলা হয়েছে:"আমরা লক্ষ করেছি, অনেক ব্যক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ টুইট হ্যান্ডেলে এই ছবির মেয়েটিকে শহিদ কর্নেল সন্তোষ বাবুর কন্যা বলে প্রচার করা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে নয়, স্রেফ ভুলক্রমে l আমরা তাঁদের আবেগকে সম্মান করি, কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট করে দিতে চাই যে ছবির মেয়েটি কর্নাটকের এক এবিভিপি কার্যকতার ছোট বোন l"
১৭ জুন, ২টো ৪৭ মিনিটে প্রকাশিত মূল ছবিটির ক্যাপশনেও এবিভিপি-র এই বক্তব্যটিই প্রচারিত হয়েছিল, যার আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানেl
আইএএনএস প্রকাশিত রিপোর্টটি খতিয়ে দেখলেই স্পষ্ট হয়, সেখানে নিহত কর্নেল সন্তোষ বাবু-র মেয়েকে ৯ বছর বয়সের বলে উল্লেখ করা হয়। ভাইরাল হওয়া ছবিটি দেখলেই বোঝা যায়, তার বয়স ৯ বছরের বেশ কমই। তা ছাড়া বুম যে রিপোর্টার প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন, তাঁর সঙ্গেও যাচাই করে জেনেছে, মেয়েটির বয়েস ৯ বছর হয়নি।
ভাইরাল হওয়া কর্নেল সন্তোষের একটি পারিবারিক ছবিতেও দেখা যাচ্ছে, ভুয়ো-ক্যাপশন-দিয়ে-ভাইরাল আলোচ্য পোস্টটির ছবির চুলনায় তাঁর কন্যার বয়েস বেশি। যে-প্রতিবেদক ছবিটি ব্যবহার করেছেন, তাঁর কাছে বুম যাচাই করেছে যে, এটিই কর্নেল সন্তোষের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সহ পারিবারিক ছবি।