সোশাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে যে বিচারপতি মুরলীধরকে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা গেছে। কিন্তু দাবিটি মিথ্যে। ছবিতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন প্রাক্তন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারাল ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কে সি কৌশিক।
বিচারপতি মুরলীধরকে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে পাঞ্জাব হাইকোর্টে বদলি করা নিয়ে এখন চলছে রাজনৈতিক বাদানুবাদ। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া সত্ত্বেও হিংসা বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য দিল্লি পুলিশকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি মুরলীধর।
ফেসবুক পোস্টে দুটি ছবি দেওয়া হয়েছে—একটি বিচারপতি মুরলীধরের ও অন্যটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী কে সি কৌশিকের। সেই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে ছবি দু'টি একই ব্যক্তির।
বীরেন্দ্র পাল নামের এক ব্যক্তির করা ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে ওই দু'টি ছবি একই ব্যক্তির বলে দাবি করা হয়। পোস্টটি এখন তুলে নেওয়া হয়েছে।
হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয়: "ওপরের ছবিতে বিচারপতি মুরলিধর আর নীচের ছবিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে আইনজীবী মুরলীধরণ। এখন বুঝতে পারছেন তো?"
(হিন্দি ক্যাপশন: ऊपर के चित्र में जज मुरलीधरण है, और नीचे के चित्र में सोनिया गाँधी जी का चुनाव फॉर्म भरवाते वकील मुरलीधरण है| अब समझे?)
ডিলিট করা পোস্টটির স্ক্রিনশট নীচে দেওয়া হল।
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পায় ওই বিভ্রান্তিকর পোস্টের দ্বিতীয় ছবিটি ২০১৯ সালের, সেসময় উত্তরপ্রদেশের রায় বেরিলিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে সোনিয়া গান্ধী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
রায় বেরিলি কালেক্টরেটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়, সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ছিলেন রহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রা, রবার্ট ভদ্রা ও আইনজীবী কে সি কৌশিক যাঁকে বিচারপতি এস মুরলিধর বলে চালান হয়েছে।
ওই মনোনয়ন দাখিল সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ও এখানে ক্লিক করুন।
বুম খুঁজে পায় একটি ভিডিও যা 'এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল'(এএনআই) গত বছর ইউটিউবে আপলোড করে। তাতে রাহুল গান্ধীর নাগরিকত্ব নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল, সে সম্পর্কে আইনজীবী কৌশিককে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে দেখা যায়।
ভিডিওটির ভূমিকায় বলা হয়, "আমেঠি, ইউপি, এপ্রিল ২২ (এএনআই): রাহুল গান্ধীর মনোনয়ন পেশ করা নিয়ে যে বিরোধীতা করা হচ্ছিল, সে সম্পর্কে রাহুল গান্ধীর আইনজীবী কে সি কৌশিক বলেন, 'রাহুল গান্ধীর জন্ম ভারতে এবং ওনার পাসপোর্টও ভারতীয়। তাঁর নাগরিকত্ব সম্পর্কে কোনও প্রশ্নই নেই। তাঁর পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, ইনকাম ট্যাক্স সবই ভারতীয়।"
ছবি দু'টিকে পাশাপাশি রেখে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাঁরা একই ব্যক্তি নন।
বিচারপতি এস মুরলীধর সম্প্রতি খবরের শিরোনামে এসেছেন। কিছু রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে দাঙ্গা শুরুর আগে তাঁরা প্রোরচনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন। ওই নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিবদ্ধ না করার জন্য বিচারপতি মুরলিধর দিল্লি পুলিশের তীব্র সমালচনা করেন। তাঁর সেই বিরুপ মন্তব্যের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তাঁকে দিল্লি হাইকোর্ট থেকে পাঞ্জাব হাইকোর্টে বদলি করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। আইনজীবীরা ও বিরোধী দলগুলি সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। সরকার অবশ্য দাবি করে যে, ওই বদলি একান্তই রুটিন ব্যাপার এবং তা নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। তাঁর বদলি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতত্বে উচ্চতম আদালতের কলেজিয়াম ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তে অনুমোদন করেছিল। সে সম্পর্কে আরও পড়তে ক্লিক করুন এখানে।