একটি ভিডিওতে, ফ্রান্সের নিস শহরে, একটি পুলিশ স্টেশনের বাইরে এক মহিলাকে গুলি ছুঁড়তে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে এই মিথ্যে দাবি সমেত যে, সেটি নিস-এ একটি সাম্প্রতিক হামলার ভিডিও। ওই ঘটনায় তিন জন মারা যান। এবং ফরাসি কর্তৃপক্ষ ঘটনাটিকে 'ইসলামি সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ' বলে চিহ্নিত করেন। বুম দেখে, ভিডিওটি নিস শহরেই অন্য একটি ঘটনার ওপর তোলা। সেটি অগস্টে ঘটে ছিল। ওই ঘটনায়, একটি সুপারমার্কেটের সামনে এক মহিলা শূন্যে গুলি ছোঁড়েন এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই গ্রেফতার হন।
ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে, নত্রে দাম ব্যাসিলিকায় ছুরি-হামলার পর আক্রমণকারীকে গ্রেফতার করছে পুলিশ।
ফ্রান্সে একজন শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে বলার সময় নবী মহম্মদের ওপর আঁকা একটি কার্টুন দেখান। সেটি নাকি আপত্তিকর ছিল। সেই কারণে, তাঁর শিরশ্ছেদ করে এক ইসলমি চরমপন্থী। সেই স্তম্ভিত-করা ঘটনার পর থেকে, ফ্রান্স সংক্রান্ত নানা মিথ্যে খবর ছড়ানো হচ্ছে। এটি সেগুলির একটি। ওই ঘটনার পর ইসলামি উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় সারা বিশ্বে। ওই আক্রমণের প্রতিবাদ করেন বহু মানুষ। অন্য দিকে, ফ্রান্স ও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ হয় নানা জায়গায়। মাকরঁ ঘটনাটিকে "ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের" আক্রমণ বলে বর্ণনা করেছেন।
ফ্রান্সের নানা স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিস-এর আক্রমণটি হল সাম্প্রতিকতম। বলা হচ্ছে, ছুরি হাতে এক ব্যক্তি নত্রে দাম ব্যাসিলিকায় ঢুকে তিন জনকে ছুরি মারে ও তাদের মাথা কেটে দেয়।
ক্যাপশনে বলা হয়, "ফ্রান্সের নিস-এ এক মহিলার মাথা কেটে ফেলা সহ তিনজনকে হত্যা করার, পর আততায়ীকে ধরাশায়ী করতে দেখা যাচ্ছে ভিডিওটিতে।"
একই পোস্ট টুইটারেও শেয়ার করা হয়।
তথ্য যাচাই
আমরা ভিডিওটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তার ফলে, কিছু সংবাদ প্রতিবেদন সামনে আসে। সেগুলিতে, ২০ অগস্ট নিস শহরের প্লেস সিয়াটোন পুলিশ স্টেশনের কাছে, এক মহিলার শূন্যে গুলি ছোঁড়ার ঘটনা সম্পর্কে লেখা হয়।
'স্টেফানেলারু'-তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে (স্ক্রিনশট ওপরে) একই ভিডিও থেকে ছবি ব্যবহার করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নিস-এর প্লেস সিয়াটোন পুলিশ স্টেশনের কাছে, এক ৫০ বছরের মহিলা শূন্যে গুলি ছোঁড়েন। মিডিয়া রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, পুলিশ তাঁকে বাগে এনে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় । পুলিশ জানায়, তাঁরা ওই মহিলার মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করাবেন। তাঁদের ধারণা, মানসিক অস্থিরতার কারণেই মহিলা ওই রকম আচরণ করে বসেন।
কোনও প্রতিবেদনেই কোনও হতাহতের বা কেউ জখম হওয়ার উল্লেখ ছিল না। সব ক'টিতেই বলা হয়, মহিলা শূন্যে গুলি ছুঁড়ে ছিলেন। রিপোর্টগুলি
এখানে,
এখানে ও
এখানে পড়া যাবে।
আমরা আরও দেখি যে, একজন স্থানীয় ব্যক্তি ওই একই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেছেন। একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনেও সেটির উল্লেখ আছে।
নিস-এর মেয়র খ্রিস্টিয়ান এস্ট্রোসিস-এর একটি টুইটও আমাদের নজরে আসে। তাতে উনি পুলিশ কর্মীদের সাহস ও অভিজ্ঞতার প্রশংসা করেন।
তাছাড়া, নিস-এ সাম্প্রতিক ঘটনাটি থেকে অগস্টের ঘটনাটি সব দিক থেকেই আলাদা। বলা হচ্ছে, ২৯ অক্টোবর, একটি লোক নিস-এর নত্রে দাম ব্যাসিলিকায় তিন ব্যক্তিকে খুন করে। তার মধ্যে চার্চের এক ধর্মীয় কর্মীও ছিলেন। পুলিশের কথা অনুযায়ী, তৃতীয় ব্যক্তিটি কাছেই একটি কাফেতে আশ্রয় নিলে, আততায়ী তাঁকে সেখানে ঢুকে হত্যা করে। পুলিশ আক্রমণকারীকে ব্রাহিম অওসসাউই বলে শনাক্ত করে। পুলিশ প্রথমে তাকে গুলি করে ও পরে গ্রেফতার করে। আরও পড়ুন
এখানে।
ফ্রান্সে হিংসা ও হামলা সংক্রান্ত একাধিক মিথ্যে খবর বুম ইতিমধ্যেই খণ্ডন করেছে।