সোশাল মিডিয়ার পোস্টে ভুয়ো দাবি করা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ঘোষণা করেছেন, সুইজারল্যান্ডের ওষুধ নির্মাতা সংস্থা রোচে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা ইতিমধ্যেই তৈরি করে ফেলেছে এবং শীঘ্রই নাকি কোটি-কোটি টিকা বাজারে ছাড়তে চলেছে।
পোস্টে যে ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়েছে, তাতে শুধু দেখা যাচ্ছে, রোচে-র প্রেসিডেন্ট এবং উত্তর আমেরিকার রোচে ডায়াগনস্টিকস-এর সিইও ম্যাথু সাউস মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ও এবং সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনকে (সিডিসি) ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তাঁর সংস্থাকে রোগ সৃষ্টিকারী কোভিড-১৯ জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়ার জন্য।
এর অর্থ হল, সংস্থাটি করোনাভাইরাসের জীবাণু পরীক্ষা করে দেখার জরুরি অনুমোদন পেয়েছে, তার প্রতিষেধক টিকা তৈরি করার নয়। তা ছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ফেব্রুয়ারি মাসেই হিসাব করে জানিয়েছিল যে, এই প্রতিষেধক তৈরি করতে প্রায় দেড় বছর লেগে যাবে।
আরও পড়ুন: রোদ পোহালে পুড়ে ছাই করোনাভাইরাস, ভাইরাল হল ভুয়ো বার্তা
বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও এই মর্মে প্রাপ্ত একটি বার্তার সত্যতা যাচাইয়ের অনুরোধ পেয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, "ট্রাম্প নাকি ঘোষণা করেছেন, আগামী রবিবারেই কোটি-কোটি প্রতিষেধক টিকা বাজারে এসে যাবে। ব্যস, খেল খতম!"
বার্তাটির সঙ্গে নীচের ভিডিওটাও জুড়ে দেওয়া হয়।
ক্যাপশন সার্চ করে জানা যায় টুইটারেও এই বার্তাটি ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস সংক্রান্ত এই 'অ্যাডভাইজারি' ইউনিসেফের নয়
তথ্য যাচাই
বুম "রোচে করোনাভাইরাস টিকা" এই মূল শব্দগুলি সাজিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে ১৩ মার্চ প্রকাশিত কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পায়, যেখানে রোচে ডায়াগনস্টিক সংস্থার দ্বারা মার্কিন এফডিএ ও সিডিসি-র কাছ থেকে ব্যাপক হারে এবং জরুরি ভিত্তিতে ভাইরাসটি পরীক্ষা করে দেখার বন্দোবস্ত তৈরির অনুমতির কথা বলা হয়েছে, যা এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পরীক্ষা করবে দ্রুত হারে, প্রায় দশ গুণ।
আমরা ওই ১৩ মার্চেই হোয়াইট হাউসের সরকারি ইউটিউব চ্যানেলের আপলোড করা একটি দীর্ঘতর ভিডিওর খোঁজ পাই, যা হোয়াইট হাউসেই আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনের। সেই ভিডিওর মধ্যেই এক জায়গায় হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া ভিডিও অংশটিও রয়েছে, যেখানে রোচে ডায়াগনস্টিক্স-এর সিইও ম্যাথু সাউস ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতেই মার্কিন এফডিএ ও সিডিসি-কে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, তাঁদের সংস্থাকে জরুরি ভিত্তিতে তাদের পরীক্ষাগারের পরিকাঠামো অবাধে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার জন্য।
১৩ মার্চ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রোচে জানায়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু সার্স-কোভ-২ কারও শরীরে লুকিয়ে রয়েছে কিনা, সেটা তার লালারস পরীক্ষা করেই জানা যাবে। আমেরিকা সহ সারা বিশ্বে সহজে প্রাপ্য রোচের কিট ব্যবহার করে হাসপাতাল ও গবেষণাগারগুলি তখন সহজেই রোগের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবে।
সংস্থার তরফে জানানো হয়, এই পরীক্ষা-পদ্ধতিটি এত দিন মার্কিন এফডিএ-র অনুমোদন পায়নি, কেবল সার্স-কোভ-২ এর আরএনএ খুঁজে বের করা এবং সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের লক্ষণ দেখে রোগনির্ণয় করার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ অনুমতি পেয়েছিল। পুরো বিবৃতিটা পড়ুন এখানে।
প্রতিষেধক টিকার ব্যাপারটা তাহলে কী দাঁড়ালো? গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল তেদ্রস আধানম ঘেব্রেইসেস ঘোষণা করেন, প্রথম প্রতিষেধক টিকা নাগালে আসতে ১৮ মাস লেগে যাবে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানাচ্ছে, গবেষকরা সিয়াটলের কাইজার পার্মানেন্টে ওয়াশিংটন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক স্তরের প্রতিষেধকের সম্ভাবনায় উপনীত হয়েছেন এবং তা স্বেচ্ছাসেবকদের উপর প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। আমেরিকার জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থার ডঃ অ্যান্থনি ফাউসি এপি-কে জানান, "যদি এই উদ্যোগ সাফল্যও পায়, তাহলেও করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ব্যবহারের উপযোগী করে বাজারজাত করতে ১২ থেকে ১৮ মাস লেগে যাবে।"
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং মার্কিন প্রশাসন প্রথম থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টিতে গা-ছাড়া মনোভাব দেখানোর দায়ে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন।