ভুয়ো গ্রাফিকে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একটি কাল্পনিক মন্তব্য সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। গ্রাফিকে বলা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নাকি বলেছেন, "তফশিলি জাতি ও উপজাতি সমাজের ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে আসে কেবল বৃত্তির টাকার জন্য; পড়াশোনা করতে আসেনা।" বিভ্রান্তিকর এই গ্রাফিকে তফশিলি জাতি ও উপজাতি ছাত্রীছাত্রীদের অপমানজনক কথা বলার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাম মন্দির নির্মাণ হলে আত্মহত্যা করবেন এই মন্তব্য করেননি কপিল সিবাল
তথ্য যাচাই
বুম তফশিলি জাতি এবং উপজাতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই ধরণের কোনও মন্তব্য গণমাধ্যমে খুঁজে পায়নি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফেসবুক ও টুইটার প্রোফাইলেও এই ধরণের কোনও অবমাননাকর বক্তব্য খুঁজে পায়নি বুম। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের রজবদলে তিনি মহাসচিবের দায়িত্বেই থাকছেন।
বানানে অসঙ্গতি
বুম গ্রাফিকের বানান দেখে প্রথমেই গ্রাফকটি ভুয়ো বলে সন্দেহ করে। 'ছেলেমেয়েরা' ও 'পড়াশোনা' এই শব্দের বনানগুলি ভেঙে লেখা হয়েছে। বাস্তবে এগুলি ভেঙে লেখা হয়না। 'স্টাইপেন্ডের' প্রকৃত বানানকে ত্রুটিপূর্ণভাবে 'ণ্ড' লেখা হয়েছে।
তফশিলি জাতি ও উপজাতি সুরক্ষা
২০০৩ সালে ভারতের সংবিধানের ৮৯ তম সংশোধনীর মাধ্যমে ৩৩৮ ধারার সঙ্গে ৩৩৮-এ ধারা যুক্ত করে ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউল কাস্টেস (এনসিএসসি) ও ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউল ট্রাইবস (এলসিএসটি) নামে দুটি পৃথক কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যা ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়।
জাতীয় তফশিলি জাতি কমিশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দপ্তর রয়েছে ভুবনশ্বরে। ন্যাশনাল কমিশন ফর সিডিউল ট্রাইবের ৩৩৮ এ ধারার ৮ নম্বর নিয়ম অনুযায়ী কমিশন দেওয়ানী কোর্টের সমতুল্য নানা বিষয়ের তদন্তের স্বার্থে তলব করতে পারে।
একই ভাবে তফশিলি জাতির অধিকার ও অন্যান্য বিষয়ে পরামর্শ ও তদন্তের এক্তিয়ার রয়েছে এনসিএসসি কমিশনের।
২০১৫ সালের তফশিলি জাতি ও উপজাতি নির্যাতন সুরক্ষা আইন অনুযায়ী এই সম্প্রদায়ভুক্ত কোনও জীবিত ও মৃত ব্যক্তির জাতিগত নাম তুলে লিখিত বা মৌখিক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য পেশ বা অঙ্গভঙ্গি করা অপরাধ।
ভাইরাল হওয়া বক্তব্যটি সত্যি হলে এনসিএসসি ও এলসিএসটি কমিশন শিক্ষামন্ত্রীকে তলব করতো বা ব্যাখ্যা চাইতো। গ্রাফিকের বক্তব্যটি ভুয়ো হওয়ায় এই ধরণের কোনও খবরও গণমাধ্যমে নেই।
রাজ্য কমিশন গঠনের ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৯ সালের অগস্টের বিধানসভা অধিবেশনে জাতীয় কমিশনের আদলে একটি পৃথক রাজ্য তফশিলি জাতি ও উপজাতি কমিশন গঠনের জন্য বিল পাশ করে। ২৯ অগস্ট এই বিল পাঠানো হয় রাজভবনে। রাজ্যপাল জগদীপ ধানখড় সংবিধানের ১৬৬(৩) ধারা অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতাবলে এই বিলের ব্যাপারে ব্যাখ্যা চান ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। বিলটি নিয়ে আলোচনার জন্য ১৩ জানুয়ারি বিবৃতি দিয়ে বিধানসভার সদস্যদের আমন্ত্রন জানান রাজ্যপাল। ২১ জানুয়ারি বিরোধী দলের নেতারা উপস্থিত হন সেই আমন্ত্রণে।
While discussion on WB State Commission for SC and ST Bill, 2019 was over the discussion as regards WB (Prevention of Lynching) Bill, 2019 remained inconclusive and would resume after Jan 26. The meeting lasted over 100 minutes.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) January 21, 2020
এই বিল পাশ হয়ে রাজ্য তফশিলি জাতি ও উপজাতি কমিশন গঠন কার্যকর হয়ছে কিনা বুমের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
এপ্রিল মাসে রাজ্যপাল সহ একাধিক বিজেপি নেতার ভুয়ো মন্তব্যের গ্রাফিক ভাইরাল হয়েছিল। বুম সেসময় ভুয়ো খবরটি খণ্ডন করে।