একটি ছবি দেখিয়ে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, অর্ণব গোস্বামীকে গ্রেফতার করার পর, মুম্বই পুলিশ তাঁকে উল্টো করে ঝুলিয়ে কিল-চড় ও লাথি মারে। বুম দেখে উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার একটি ঘটনার পুরনো ছবি এটি। সেখানে, মোবাইল ফোন চুরির দায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে বেদম মারধোর ও নির্যাতন করে পুলিশ কর্মীরা।
মহারাষ্ট্র পুলিশ, রিপাবলিক টিভির মালিক ও প্রধান সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীকে বুধবার দু'বছরের পুরনো একটি আত্মহত্যার মামলায় গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছিলেন। ২০১৮ তে, ইন্টিরিয়র ডিজাইনার অন্বয় নাইক ও তাঁর মা কুমুদ নাইককে তাঁদের রায়গড়ের আলিবাগ ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সুইসাইড নোটে তাঁরা তাঁদের মৃত্যুর জন্য অর্ণব গোস্বামীকে দায়ী করেন। তাঁরা লিখে যান যে, ওই চরম পদক্ষেপ নিতে তাঁরা বাধ্য হলেন কারণ, তাঁদের কাজের জন্য পাওনা টাকা অর্ণব গোস্বামী মেটাননি। রায়গড় পুলিশ ২০১৮ তে মামলাটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মহারাষ্ট্রে, এনসিপি-কংগ্রেস-শিবসেনা জোট ক্ষমতায় আসার পর, মে ২০১৯-এ, মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখের নির্দেশে, মামলাটি আবার চালু করে পুলিশ।
গোস্বামী ছাড়াও, ফিরোজ শেখ ও নীতীশ সারদা নামের দু'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সুইসাইড নোটে ওই দুই ব্যক্তির নামও লিখে যান অন্বয় নাইক। ওই নোটে, অন্বয় তাঁর পাওনার হিসেবও দিয়ে যান। সুইসাইড নোটের বয়ান অনুযায়ী, রিপাবলিক টিভির কাছে তাঁর পাওনা ছিল ৮৩ লক্ষ টাকা এবং বাকি দুই কম্পানির কাছে যখাক্রমে ৪ কোটি ও ৫৫ লক্ষ টাকা।
আরও পড়ুন: অর্ণব গোস্বামী গ্রেফতার, জেনে নিন গ্রেফতারের কারণ?
ছবিটি টুইটারে শেয়ার করা হয়েছে। আর সঙ্গে দেওয়া লেখায় দাবি করা হয়েছে যে, মুম্বই পুলিশ গোস্বামীকে থানায় নির্যাতন করে। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা গৌরব গোয়েল, 'অর্ণব গোস্বামী' হ্যাসট্যাগ ব্যবহার করে ছবিটি টুইট করেন। আর সেই সঙ্গে বলেন, "এটা যদি সত্যি হয়, তা হলে মাহারাষ্ট্র সরকারের দিন ঘনিয়ে আসবে"।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
গোয়েলের টুইটের জবাবে অনেকেই জানান যে, ছবিটি পুরনো এবং তাতে গোস্বামীকে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও উনি ছবিটি ডিলিট করেননি।
দিল্লির মেহেরৌলির বিজেপি নেতা বীরেন্দ্র বব্বরও ছবিটি শেয়ার করেন ও গোয়েলের মত একই ক্যাপশন লেখেন।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বিভিন্ন বিবরণসহ ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে। কিন্তু সব ক'টিতেই দাবি করা হচ্ছে যে, ছবিতে যে লোকটিকে দেখা যাচ্ছে, তিনি অর্ণব গোস্বামী।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: এটি কুয়েতিদের ফরাসি জিনিস বয়কটের ভিডিও নয়
তথ্য যাচাই
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, জানুয়ারি ২০২০-র একটি ভিডিও বেরিয়ে আসে। তাতে দেখা যায়, মোবাইল চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গেফতার করে, তাকে প্রচণ্ড মারছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এখনকার ভাইরাল ছবিটি ওই ভাইরাল ভিডিওটিরই একটি স্ক্রিনশট।
১০ জানুয়ারি ২০২০-র সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেটিতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে, দেওরা জেলার এক থানায়, এক ব্যক্তিকে প্রচণ্ড মারতে দেখা যাচ্ছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, একজন গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে, সুমিত গোস্বামী নামের এক ব্যক্তিকে ধরে আনার পর, উত্তরপ্রদেশের দেওরা জেলার মদনপুর থানায় ঘটনাটি ঘটে। গ্রামবাসীটি অভিযোগ করেন যে, সুমিত গোস্বামী তাঁর মোবাইল ফোনটি চুরি করেছেন। ওই অভিযোগ পাওয়ার পর মদনপুর থানার পুলিশ গোস্বামীকে ধরে এনে তাকে থানায় অমানুষিক অত্যাচার করে।
নীচে নিউজ-১৮-এর প্রতিবেদনের একটি স্ক্রিনশট দেওয়া হল। তাতে কোথাকার পুলিশ এ কাজটি করেছে এবং খবরের তারিখটায় লাল দাগ দিয়ে সেগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। প্রথমসারির সব সংবাদ মাধ্যমেই খবরটি বেরয়।পড়ুন এখানে, এখানে ও এখানে।
আমরা কিছু সাংবাদিকের টুইটও দেখতে পাই। ভিডিওটি ভাইরাল হলে, ঘটনাটির বিবরণ দিয়ে, তাঁরাও ওই একই ছবি শেয়ার করেন। ওই ঘটনার ফলে পুলিশ অফিসাররা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন এবং তিন পুলিশ কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়।
ভিডিওটি বেশ বীভৎস। পাঠকরা নিজের বিবেচনায় দেখবেন।
তাছাড়া রিপাবলিক টিভি একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেছে যে, অর্ণব গোস্বামীকে গ্রেফতার করতে যে পুলিশের দল তাঁর বাড়িতে যান, সেই দলের সদস্যরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে নিগ্রহ করে।
রায়গড় পুলিশ গোস্বামীকে বুধবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় গ্রেফতার করে। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে রিপাবলিক টিভি দাবি করে যে, প্রয়াত অন্বয় নাইকের স্ত্রী অক্ষতা ও মেয়ে অদন্যা মিথ্যে তথ্য দিচ্ছেন। বিবৃতিটিতে বলা হয়, চ্যানেলটি তাঁদের বকেয়া পাওনার ৯০ শতাংশই মিটিয়ে দিয়েছে। চ্যানেলটি একটি আবেদন পত্রে সকলকে গোস্বামীর গ্রেফতারির প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গোস্বামীকে গ্রেফতার করা আসলে রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা স্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করারই সমতুল্য।
আরও পড়ুন: ভুয়ো পোস্টের দাবি ফরাসি পণ্য বয়কটের ফলে ফ্রান্সে অর্থনৈতিক সঙ্কট