মধ্যপ্রদেশে এক মহিলার পোড়া মৃতদেহের অত্যন্ত স্পর্শকাতর এক ছবি এই বলে ভাইরাল হয়েছে যে, সেটি হল রাজস্থানের টঙ্ক জেলায় একটি অপরিণত বয়সের মেয়েকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ছবি।
বুম দেখে ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশের ধর জেলায় ঘটেছে। সেখানে টাকাপয়সা নিয়ে বিবাদের জেরে কেশরবাই নামের এক মহিলাকে দু'টি লোক খুন করে তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেয়। বুম ধর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা সাম্প্রদায়িকতার দাবিটি উড়িয়ে দেন। তাঁরা বলেন, দু'জন অভিযুক্তকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গোবিন্দ ও সোহান বলে সনাক্ত করা হয়েছে তাদের।
উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে এক দলিত মেয়েকে গণধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "এই ভয়ঙ্কর ছবিটি রাজস্থানের টঙ্ক জেলার নিওয়াই তেহসিলের। সেখানে ১৩ বছরের পায়েল জৈনকে ওই একই তেহসিলের রিজওয়ান আনসারি ধর্ষণ করে পুড়িয়ে দেয়। রাজস্থান সরকার ও মিডিয়া নীরব কেন?"
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশান: दिल दहलाने वाली यह तस्वीर राजस्थान के टोंक ज़िला निवाई तहसील की हैं,जहाँ १३ वर्षीया पायल जैन को उसी तहसील के रिज़वान अन्सारी ने बलात्कार के बाद ज़िन्दा जला दिया। राजस्थान सरकार और मीडिया चुप हैं,क्यों?)
ফেসবুকে ভাইরাল
ওই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায়, ভাইরাল ছবিটি একই দাবি সমেত সেখানেও শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
'মহিলার দেহ পুড়ে যাওয়া' – এই কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে গুগুল সার্চে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, ওই ঘটনা সম্পর্কে মধ্যপ্রদেশ থেকে করা কিছু সংবাদ প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে।
আমরা দেখি, ঘটনাটি ঘটে মধ্যপ্রদেশের ধর জেলার গন্ধওয়ানীতে। সেখানে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তে, একটি প্রাথমিক স্কুলের পেছন এক মহিলার পোড়া দেহ পাওয়া যায়।
এছাড়া আমরা এশিয়ানেট নিউজ হিন্দি-র একটি ভিডিও দেখতে পাই। সেই রিপোর্টে বলা হয়, পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গোবিন্দ ও সোহন বলে সনাক্ত করেছে। ভিডিও প্রতিবেদনটিতে ভাইরাল ছবিটির মত একই দৃশ্য দেখা যায়। তাতে পুলিশ সুপার আদিত্য প্রতাপ সিংহের বক্তব্যও আছে। উনি বলেন, একটি বিবাদের জেরে অভিযুক্তরা ওই মহিলাকে খুন করেছে বলে অভিযোগ।
দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
বুম পুলিশ সুপার আদিত্য প্রতাপ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উনি সাম্প্রদায়িকতার দাবিটি নাকচ করে দিয়ে বলেন, দু'জন অভিযুক্তদের কেউই মুসলমান নয়। "মৃত ব্যক্তি ও অভিযুক্তরা উভয়েই হিন্দু আদিবাসী। মৃতের নাম কেশরবাই আর অভিযুক্তদের নাম গোবিন্দ ও সোহান। একজন অভিযুক্ত সোহন গ্রেপ্তার হয়েছে। গোবিন্দ এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে," বলেন সিংহ।
ধর্ষণ বা যৌন নিগ্রহের কথাও উড়িয়ে দেন সিংহ। "এটা একটা খুনের ঘটনা। এর মধ্যে সবাই হিন্দু আদিবাসী। কোনও হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক যোগ নেই এই ঘটনায়," জানান সিংহ। উনি আরও বলেন যে, অভিযুক্ত গোবিন্দ সিংহের সঙ্গে মহিলার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ৮০,০০০ টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ চলছিল।
বুম আগেও সম্পর্কহীন ছবিকে ধর্ষণ ও খুনের বলে চালানর চেষ্টাকে খণ্ডন করে। যেমন, পঞ্জাব পুলিশেরএক মহিলাকনস্টেবল রাস্তারদুর্ঘটনায় মারাগেলে, তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে বলে মিথ্যে দাবি করা হয়।
আরও পড়ুন: ফুলবাগান মেট্রো স্টেশনে বাংলা লেখা নেই ভুয়ো দাবি সব ছবি ভাইরাল