ভারত সরকারের চিনা অ্যাপ বন্ধ করার খবর পরিবেশন করতে গিয়ে বাংলা গণমাধ্যম জি ২৪ ঘন্টা ২৯ জুন "পেজ ওয়ান" অনুষ্ঠানে পাবজি অ্যাপ বন্ধ করার ভুল খবর সম্প্রচার করেছে। চিনের সাথে গালওয়ানে ভারতের সেনা সংঘর্ষের পর কূটনৈতিক কৌশল হিসেবে এমন অমনীয় অবস্থান নিয়েছে ভারত সরকার। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার কথা মাথায় রেখে ২৯ জুন ৫৯ টি অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ওই সরকারী নির্দেশে যে ৫৯ টি অ্যাপ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেই তালিকায় "প্লেয়ারআননোন্স ব্যাটেলগ্রাউন্ডস" বা পাবজির নাম নেই।
জি ২৪ ঘন্টা পাবজি বন্ধ করার খবর সম্প্রচার করলে নেটিজেনদের অনেকেই খবরটি নিয়ে বিভ্রান্ত হয়। ফেসবুকে জি ২৬ ঘন্টার বুলেটিনের দৃশ্যের ছবি শেয়ার করে অনেকে। এরকম একটি ফেসবুক পোস্টে ক্যাপশন লেখা হয়, " দেখে নাও এবারো যদি ফেক নিউজ বলে মনে হয় এখুনি রাত ১২:১৯ এ ছবি তুলে দেখিয়ে দিলাম পারলে নিউজে দেখে নিন।"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ওই বুলেটিনে লেখা হয়েছিল, "বন্ধ করে দেওয়া হল টিকটক, বন্ধ করে দেওয়া হল পাবজি।"
ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে বুম 'জি ২৪ ঘন্টা' চ্যানেলের ২৯ জুন ইউটিউবে আপলোড করা নিউজ বুলেটিন খুঁজে দেখে। ইউটিউবে আপলোড করা ওই ভিডিওর শিরোনাম লেখা হয়, "BAN হল TIKTOK, SHARE IT, UC BROWSER-সহ ৫৯টি CHINESE APPS | PAGE ONE | APP BAN"
৫ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড সময়ে ভিডিওটিতে পাবজি বন্ধ করার খবরটি দেখা যাবে। ভিডিওটি ইউটিউবে দেখা যাবে এখানে।
জি ২৪ ঘন্টার ওই ভিডিওটি নীচে দেওয়া হল।
বুম যাচাই করে দেখে জি ২৪ ঘন্টা সম্প্রচারিত পাবজি বন্ধের খবরটি সঠিক নয়। গত ২৯ জুন ভারতের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের তরফে যে ৫৯ টি মোবাইল অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেই তালিকায় পাবজি গেমের নাম নেই।
বিজ্ঞপ্তিতে নেই পাবজি অ্যাপের নাম।
"প্লেয়ারআননোন্স ব্যাটেলগ্রাউন্ডস" বা পাবজি একটি জনপ্রিয় ভার্চুয়াল যুদ্ধের ডিজিটাল গেম। এই গেমটির উইন্ডজ, ম্যাক, এন্ড্রোয়েড, আইওএস, এক্সবক্স এবং প্লে-স্টেশনে বিভিন্ন ভার্সন রয়েছে। একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ৩ কোটি ৩০ লক্ষ পাবজি ব্যবহারকারীর অর্ধেকই ভারতীয়।
ব্যবহারকারীর মাধ্যম ও অবস্থানের উপরে নির্ভর করে এই গেমের প্রকাশনের নাম আলাদা আলাদা দেখা যায়। কোন মাধ্যমে অ্যাপটি খোলা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে সেটির মালিক হিসাবে দক্ষিণ কোরীয় পিইউবিজি কর্পোরেশনের নাম থাকছে, নাকি চিনা টেনসেন্ট সংস্থার নাম থাকছে। ব্যক্তিগত কম্পিউটার, এক্সবক্স এবং প্লে-স্টেশনের মতো প্ল্যাটফর্মে এই গেমটির প্রকাশক হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়ার পিইউবিজি কর্পোরেশনের নামই রয়েছে।
এই গেমটির নির্মাতা হল পিইউবিজি কর্পোরেশন, যেটি ক্র্যাফটন গেম ইউনিয়নের (আগে যার নাম ছিল ব্লু হোল) একটি সংস্থা। সংস্থাটির সদর-দফতর সিওলে এবং এটি দক্ষিণ কোরীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই গেমটির পরিসেবার শর্তাবলীতে লেখা আছে, "গেমটি দক্ষিণ কোরিয়ার স্বত্ব আইন, অন্যান্য নানা আন্তর্জাতিক স্বত্ব আইন, কোরীয় ট্রেডমার্ক আই এবং অন্যান্য আইন দ্বারা সুরক্ষিত।" বিস্তারিত পড়ুন
এখানে।
বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য গেমটির প্রাথমিক সংস্করণও পিইউবিজি কর্পোরেশনেরই তৈরি করা:
এছাড়াও পাবজি যার হাতে তৈরি সেই ব্রেনডন গ্রিনি সিএনবিসি-কে এক
সাক্ষাৎকারে বলেন ক্রাফটন গেম দক্ষিণ কোরীয়।
ভারতীয় প্লে স্টোরে এই গেমটির প্রকাশক হিসাবে চিনা টেনসেন্ট গেমস-এর নাম দেওয়া আছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানাটি চিনের নয়, সিঙ্গাপুরের। গুগল প্লে স্টোরে টেনসেন্ট গেমস নথিভুক্ত হয়েছে যে ঠিকানায়, সেটি সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল প্লাজা। ভারতীয় প্লে-স্টোরের লিংকটি দেওয়া হল এখানে।
২০১৭ সালে কোরীয় অ্যাপ পিইউবিজির উপর চিনে নানা নিয়ন্ত্রণ জারি হওয়ায় সংস্থাটি চিনের অভ্যন্তরে মোবাইল সহ অন্যান্য সব প্ল্যাটফর্মেই চিনা টেনসেন্ট সংস্থাকে এর স্বত্ত্ব হস্তান্তরিত করে দেয়। ২০১৯ সালে টেনসেন্ট কর্পোরেশন
চিনের ভিতর এই গেমটি চালানোর স্বত্ত্ব ছেড়ে দেয়, যেহেতু তারা চিনা সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স বা অনুমতি সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। তার পরিবর্তে তারা আরও বেশি চিনা গন্ধ রয়েছে, এ রকম একটি বিকল্প গেম নিয়ে হাজির হয়, যার নাম এলিট ফোর্স ফর পিস (হেল্পিং জিংইয়াঙ), যেটা পিইউবিজি-র প্রায় হুবহু নকল।
ভরতের অ্যাপ ব্যানের প্রতিক্রিয়া চিন
বলেছে এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার নীতির পরিপন্থী।