সোশাল মিডিয়া পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, 'রাম রূপান্তরযোগ্য বাহক-বন্ড' (কনভারটেবল বেয়ারার বন্ড) হল বিশ্বের সবচেয়ে দামি মুদ্রা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল কান্ট্রি অফ ওয়ার্ল্ড পিস (জিসিডাব্লিউপি) সেটি বিশ্ব উন্নয়নের স্বার্থে প্রচলন করে।
আইনজীবী প্রশান্ত প্যাটেল উমরাও দাবি করেছেন যে, রাম হল নেদারল্যান্ডের টাকা (নেদারল্যান্ডকে উনি হল্যান্ড বলেছেন) এবং সেটি হল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দামি মুদ্রা।
दुनिया की सबसे मजबूत और महँगी करेंसी का नाम "राम" है।
— Prashant Patel Umrao (@ippatel) August 15, 2020
महर्षि महेश योगी ने Holland में आज से लगभग बीस साल पहले "राम" नाम से करेंसी चलाई थी जिसे डच सरकार ने मान्यता भी दी हुई है। ये मुद्रा आज भी चल रही है।
आज 1 राम = 10 यूरो के बराबर है। pic.twitter.com/MHROVJddc5
অনেক সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী একই দাবি করেছেন।
When the bhoomi pujan happened the whole world joined us. Here we have Raam currency which was started by Maharshi Mahesh Yogi 20 years ago in Holland. The most costly currency. Shame on some seculars of our country who are against Sri RAM#RaamCurrency#MaharshiMaheshYogi pic.twitter.com/Rv1LNTUAPk
— Sanatani Thakur (@SanggitaT) August 16, 2020
বন্ডটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডে ছাড়া হয়। ওই দুই দেশে ১ 'রাম'র বিনিময়মূল্য হল যথাক্রমে ১০ মার্কিন ডলার ও ১০ ইয়োরো। যে দাবিটি করা হচ্ছে, তার ভিত্তি হল একটি বিশেষ হিসেব: ১ 'রাম' হল ১০ ইয়োরোর সমান, আর অর্থ বাজারে ১ ইয়োরোর রেফারেন্স রেট হল ৮৮.৭৯ (ফাইন্যানশিয়াল বেঞ্চমার্কস প্রাইভেট লিমিটেড, ১৭ অগস্ট, ১.৩০ পিএম)। তাই ১ 'রাম'র দর হল ৮৮০ (বর্তমান বিনিময়মূল্যের ১০ গুণ), যা সবচেয়ে দামি।
বাস্তবে, কিছু নির্দিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে 'রাম' বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হলেও, ওই দুই দেশে সেটিকে জাতীয় মুদ্রা বা বৈধ টাকা হিসেবে গন্য করা হয় না। সেটি একটি বাহক-বন্ড মাত্র। তবে জিসিডাব্লিউপি বিনিময়-মাধ্যম হিসেবে 'রাম'কে 'স্থানীয় মুদ্রা' বলে থাকে।
মুদ্রার মতই বাহক-বন্ডে থাকে মূল্যের প্রতিশ্রুতি। এবং যেহেতু তাতে মালিকের নাম লেখা থাকে না, তাই বন্ডটি যখন যাঁর কাছে থাকে, তখন তিনিই তার মালিক বিবেচিত হন। বন্ড থেকে সুদ পাওয়া যায়, টাকা থেকে তা মেলে না। তাছাড়া টাকা দিয়ে সহজেই জিনিস কেনা যায়, কিন্তু বন্ড দিয়ে তা সম্ভব হয় না। টাকার কোনও এক্সপায়ারি ডেট বা মেয়াদ থাকে না। কিন্তু বন্ডের ক্ষেত্রে তা থাকে। যদিও 'রাম'র কোনও মেয়াদ বেঁধে দেওয়া নেই।
তাছাড়া 'রাম' থেকে ০.৬ শতাংশ সাধারণ সুদ পাওয়া যায়। তা থেকে আরও প্রমাণ হয় যে, 'রাম' একটি বন্ড, টাকা নয়।
মুদ্রা হল একটি দেশে ব্যবহৃত টাকা। বিনিময় মাধ্যম হল দ্রব্য আর পরিষেবা দেওয়া নেওয়ার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য মাপকাঠি। বৈধ টাকা হল পয়সা বা ব্যাঙ্কের ইস্যু করা নোট (যা সাধারণভাবে একটি দেশের মুদ্রাই হয়ে থাকে)। তবে আর্থিক দায় বা ঋণ মেটানর একাধিক উপায় থাকতে পারে।
'রাম' বন্ডের ওপর ভগবান রামের ছবি থাকে। সেই সঙ্গে হিন্দিতে লেখা থাকে 'বিশ্ব শান্তি রাষ্ট্র' ও 'রাম রাজ্য মুদ্রা'। ব্যাঙ্কের টাকার মতই দেখতে সেটি। ১, ৫ ও ১০, তিন রকম মূল্যের হয় সেগুলি।
আরও পড়ুন: দিল্লির তুঘলকাবাদে আগুন লাগার পুরনো দৃশ্য সাম্প্রদায়িক রঙ সহ ভাইরাল
তথ্য যাচাই
২০০১ সালে জিসিডাব্লিউপি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আয়েওয়া রাজ্যে মহাঋষি ভেডিক সিটিতে (মহাঋষি বৈদিক নগর) অবস্থিত স্টিচিং মহাঋষি গ্লোবাল ফাইন্যান্সিং রিসার্চ সংস্থা, গ্লোবাল পিস কারেন্সি (বিশ্ব শান্তি মুদ্রা) হিসেবে 'রাম' চালু করে।
মহাঋষি ভেডিক সিটি প্রকল্পকে "শহরের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থানীয় ব্যবসা ও সংস্থাগুলির উন্নতির জন্য একটি আদর্শ মুদ্রা" বলে বর্ণনা করা হয়। এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন মহাঋষি মহেশ যোগী। বিটিলস সহ তাঁর অনুগামীর সংখ্যা ছিল ৬০ লক্ষ। তাঁর প্রকল্পের লক্ষ ছিল, বিশ্ব শান্তির জন্য একটি বিশ্বজনীন দেশের মুদ্রা প্রচলন করা।
ওই বন্ড সম্পর্কে আজ আর বিশেষ কিছু শোনা যায় না।
সেটিকে মুদ্রা বলা হলেও, ওই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও সরকারি সূত্ররা বলেছেন যে, ডলার বা ইয়োরোর মত জাতীয় মুদ্রার পরিপূরক একটি জাতীয় মুদ্রা এটি নয়।
১। ডাচ ব্যাঙ্কের বক্তব্য
ডাচ সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের এক মুখপাত্র 'রাম'কে বৈধ বলেই বর্ণনা করেন। ২০০৩ সালে ১,০০,০০০ 'রাম' 'নোট' বাজারে ছাড়া হয়। উনি বলেন, "যতক্ষণ 'রাম' একটি গোষ্ঠীর মধ্যে, সরকারের ছাপানো নোট নয় বলেই চালানো হয়, ততক্ষণ তার ব্যবহারে কোনও বাধা নেই।"
কিন্তু সেই সময় ডাচ সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক এও জানায় যে, সাধারণ মানুষের মনে যাতে কোনও বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়, সে জন্য তারা 'রাম'র ওপর নজর রাখছে। প্রায় ১০০ ডাচ দোকান ও ৩০টি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর 'রাম' বন্ড গ্রহণ করত। ডাচ শহর রোয়েরমন্ড-এ ফোর্টিস ব্যাঙ্কের শাখায় 'রাম' বন্ডের বিনিময়ে ইয়োরো তোলা যেত।
সে বিষয়ে পড়া যাবে এখানে।
২। 'রাম'-এর প্রস্পেক্টাস
নেদারল্যান্ডে 'রাম'র যে প্রস্পেক্টাস বা পরিচয় বিবরণী প্রকাশ করা হয়, তাতে 'রাম ইওরোপ'কে একটি "বেয়ারার ফর্ম" হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। তাছাড়া 'রাম ইওরোপ' থেকে প্রতি ৫ বছর ৩% সুদের (০.৬% সাধারণ সুদ প্রতি বছর) আশ্বাস দেওয়া হয়, যা কোনও মুদ্রার বৈশিষ্ট্য নয়।
২০০৬ সালের প্রস্পেক্টাস এখানে আর ২০০৭ সালের প্রস্পেক্টাস এখানে দেখা যাবে। সেগুলি আছে ডাচ অথরিটি অফ ফাইন্যানশিয়াল মার্কেটস-এর কাছে, যারা সে দেশের অর্থ বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে।
৩। ডলারের সমান্তরাল ব্যবহার
২০০৩ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫টি রাজ্যে 'রাম' বন্ড গ্রহণ করা হত।
মাহাঋষি ভেডিক সিটির "অর্থমন্ত্রী" বলেন, যে সব এক্তিয়ারভুক্ত জায়গায় ডলার সহজে পাওয়া যায় না, সেখানে কৃষি ও দারিদ্র দূরীকরণের কাজ পুরোদমে চালু করতে 'রাম' ব্যবহার করা যায়। পরে, অবস্থার উন্নতি হলে, অন্য প্রতিষ্ঠিত মুদ্রায় 'রাম' বদলে নিয়ে সেটিকে বাজার থেকে তুলে নেওয়া যেতে পারে।
মহাঋষি বৈদিক সিটিতে মার্কিন ডলার ও ক্রেডিট কার্ড সহ 'রাম'ও গ্রহণ করা হত। এক 'রাম'-এর বদলে পাওয়া যেত কম আমেরিকার টাকা।
সে ব্যাপরে পড়ুন এখানে।
আরও পড়ুন: ২০১৫ সালে আঁকা কৃষ্ণের অবমাননাকর ছবিকে সাম্প্রতিক বলে দাবি করা হল