উর্দি-পরা পুলিশ একজনকে বেত্রাঘাত করছে – এমনই এক সাদা-কালো ছবি এই বলে ভাইরাল হয়েছে যে, স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিংকে চাবুক মারছে এক ইংরেজ পুলিশ অফিসার।
বুম ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, ২০১৯-এ 'বাইলাইন টাইমস'-এ প্রকাশিত একটি লেখা নজরে আসে। তাতে ওই একই ছবি ছাপা হয়। এবং সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, 'অমৃতসরের হত্যাকাণ্ডের পর, ভারতীয়দের বেত্রাঘাত করা হয়।'
লেখাটিতে অমৃতসর হত্যাকাণ্ড বলতে জালিয়ানওয়ালা বাগের ঘটনার কথাই বলা হয়। ১৩ এপ্রিল ১৯১৯ তারিখে, পাঞ্জাবের অমৃতসরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে। অস্থায়ী ব্রিগেডিয়ার-জেনারেল রেজিনল্ড ডায়ার সে দিন ইংরেজ সেনা বাহিনীর ভারতীয় সেপাইদের নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানর নির্দেশ দেন। বৈশাখী উৎসব উপলক্ষে বহু মানুষ সেদিন অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগে সমবেত হয়ে ছিলেন।
এর পর, 'ইন্ডিয়ানস', 'ফ্লগড', 'অমৃতসর', '১৯১৯' ও 'ম্যাসাকার' – এই কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে সার্চ করা হয়। তার ফলে আরও কিছু লেখা বেরিয়ে আসে। দেখা যায়, সেগুলিতেও ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
১৭ এপ্রিল ২০১৯-এ, জালিয়ানওয়ালা বাগের শহিদদের স্মরণে 'দ্য ক্ল্যারিয়ন'-এ প্রকাশিত লেখাতেও ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, '১৯১৯-এ সাবেক পঞ্জাবে বেত্রাঘাতের দৃশ্য'।
'সবরঙ ইন্ডিয়া' ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি লেখায় ওই একই ছবি একই ক্যাপশন সহ ব্যবহার করা হয়।
ওই ক্যাপশনগুলির ভিত্তিতে যদি আমরা ধরে নিই যে, ছবিটি ১৯১৯ সালের, তাহলে দেখা যাচ্ছে সেই সময় ভগৎ সিংয়ের বয়স ছিল ১২ বছর।
এর পর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর চমন লাল-এর সম্পাদিত বই 'ভগৎ সিং রিডার' পড়ে দেখি আমরা। 'ভগৎ সিং আর্কাইভ অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার, দিল্লি আর্কাইভস'এর সাম্মানিক পরামর্শদাতাও প্রফেসর চমন লাল।
ওই বইটি বেশ বৃহৎ আকারের। তাতে সংগৃহীত আছে ভগৎ সিংয়ের সমস্ত লেখা, যার মধ্যে পড়ে তাঁর চিঠি, টেলিগ্রাম, নানা নোটিস ও তাঁর জেলে বসে লেখা নোটবই।
ওই বইতে রয়েছে ভগৎ সিংয়ের চারটি ছবি। এবং তাতে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, ওই তরুণ বিপ্লবীর মাত্র ওই চারটি ছবিই পাওয়া যায়।
ছবিগুলি নীচে দেখুন।
স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিংয়ের ওই চারটি ছবিই সবচেয়ে বেশি শেয়ার করা হয়।
ভাইরাল ছবিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তাঁকে স্বাধীনভাবে বুম সনাক্ত করতে পারেনি।