একটি ক্লিপে দেখা যাচ্ছে এক বয়স্ক ব্যক্তি তাঁর মেয়েকে নিজের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করতে বারণ করছেন। ক্লিপটি এই সাম্প্রদায়িক বার্তা সমেত ভাইরাল হয়েছে যে, বাবা তাঁর মেয়েকে একজন মুসলমানকে বিয়ে করা থেকে বিরত করতে চাইছেন।
বুম দেখে ভিডিওটি রাজস্থানের পালিতে তৈরি। স্থানীয় পুলিশ জানায়, দম্পতি দেওয়াসি (রাবারি) সম্প্রদায়ের এবং একই ধর্মের অনুসারী। আমরা পাত্রের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, উনি বলেন, তাঁরা ওই মিথ্যে দাবির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাবেন। "ভিডিওতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তিনি আমার ভাইয়ের স্ত্রী। তিনি আমার ভাই লাখারামকে বিয়ে করেছেন।"
রেনি লিন নামের এক টুইটার ব্যবহারকারী ওই ভিডিওটি এই মিথ্যে দাবি সমেত টুইট করেন যে, মহিলা একজন মুসলমানকে বিয়ে করতে চলেছেন। এবং "এর জন্য তাঁর অনুশোচনা হবে, কারণ বিয়ের পর তাঁকে মেরে ফেলা হবে"। টুইটার ব্যবহারকারী রেনি লিনের প্রচুর দক্ষিণপন্থী অনুগামী আছে।
লিন ভিডিওটি এই ক্যাপশন সহ টুইট করেন: "আরও একটি হিন্দু মেয়ে ইসলামের বিয়ের ফাঁদে পড়ল। বাবা তাঁর মাথার পাগড়ি মেয়ের পায়ের কাছে রেখে বিয়ে না করার জন্য অনুনয়-বিনয় করছেন। কিন্তু মেয়ে নাছোড়বান্দা। এবার দেখতে থাকো। বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই সে খুন হয়ে যাবে। কপাল ভাল হলে, সে পালাবে। গ্যারান্টি!"
ফেসবুকে ভাইরাল
ওই ভিডিওটি একই মিথ্যে দাবি সমেত ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে: "প্রেম-জেহাদের পথ থেকে মেয়েকে সরিয়ে আনতে ও তার সম্মান রক্ষা করার জন্য মেয়েকে রাজি করাতে বাবাকে তাঁর পাগড়ি মেয়ের পায়ের কাছে রাখতে হয়। এমন মেয়ে থাকার চেয়ে নিঃসন্তান হওয়া ভাল।"
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন - लव जिहाद की राह चल रही बेटी को समझाने और अपनी इज़्ज़त बचाने के लिए जिस बाप को अपनी ही बेटी के पैरो में पगड़ी रखनी पड़े तो ऐसी बेटी होने से बेहतर बेऔलाद होना ही ठीक है ।)
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভিডিওটি রাজস্থানের পালি জেলার। মহিলাটিকে সানাক্ত করা হয় সীতা আর তার স্বামীকে লাখারাম বলে। তাঁরা দু'জনেই রাজস্থানের দেওয়াসি (রাবারি) সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়েন। আমরা পাত্রের ভাইয়ের সঙ্গেও কথা বলি। তিনি মিথ্যে দাবিটি উড়িয়ে দেন।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, অনেকগুলি ফেসবুক পোস্ট নজরে আসে। তার মেধ্যে আমরা রয়েল রাইকা নামের একটি পেজে একটি ফেসবুক লাইভ দেখতে পাই। তাতে যে বৃদ্ধকে ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, তাঁকে শনাক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে যে, মহিলা একজন মুসলমানকে বিয়ে করছেন দাবিটি মিথ্যে। আরও বলা হয়েছে, পাত্রী ও পাত্রের নাম সীতা ও লাখারাম।
এরপর আমরা পালি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা বলেন পাত্র ও পাত্রী দু'জনে একই কাস্ট বা জাতির। পুলিশ জানায়, মেয়েটির পরিবার চায় নি সে লাখিরামকে বিয়ে করুক। কারণ, তার বিয়ে অন্যত্র ঠিক হয়েছিল। ফলে, ওই দম্পতি পালিয়ে যায় এবং তাদের পরিবার 'মিসিং' ডায়েরি করে।
সাদি পুলিশ স্টেশনের স্টেশন হাউস অফিসার গিরিধর সিং ওই ভিডিও বা বিয়ের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও যোগ থাকার কথা অস্বীকার করেন। "মহিলার নাম সীতা (২০)। ২৯ অগস্ট ২০২০ তারিখে, তাঁর পরিবার তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে ডায়েরি করে। পরে জানা যায়ে যে তিনি তাঁর বন্ধু লাখাররামের (২১) সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছে। প্রেম-জেহাদের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। কারণ, তাঁরা দু'জনে একই সম্প্রদায়ের লোক। মেয়েটি বলে সে লাখারামের সঙ্গে থাকতে চায় এবং তারা ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করে নিয়েছে," সিং বলেন।
পালি জেলার সহকারী পুলিশ সুপারও বলেন ওই ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, পাত্র পাত্রী দু'জনেই হিন্দু এবং দেওয়াসি সম্প্রদায়ভুক্ত।
বুম লাখারামের ভাই রাকেশ দেওয়াসির সঙ্গেও যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, ভিডিওটি পালির পুলিশ সুপারের অফিসে তোলা হয়। "ওই একই দিনে আমার ভাই, লাখারাম, সীতার সঙ্গে কোর্টে বিয়ে করে এসপির অফিসে আসে। সেখানে সীতার বাবা-মা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়ে ছিলেন। এবং ভিডিওটি তোলা হয় যখন তাঁরা আমার ভাইকে বিয়ে না করার জন্য সীতাকে বোঝানর চেষ্টা করছিলেন। তারা কেউই মুসলমান নয়। তারা দু'জনেই দেওয়াসি। তারা এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং আমাদের সঙ্গে পুনায় আছে," বলেন রাকেশ।
প্রেম-জেহাদ সংক্রান্ত মিথ্যে খবর বুম আগেও খণ্ডন করে। সেটিতে ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিদের মধ্যে বিয়ের ছবির সঙ্গে একটি মৃতদেহের ছবিও শেয়ার করা হয় ও মিথ্যে দাবি করা হয় যে, বিয়ের পরেইমেয়েটির মুসলমান বর তাকে খুন করে। তাছাড়া একটি খুন-হওয়া মহিলার ছবি মিথ্যে ধারণা সৃষ্টি করার জন্য একটি ভিন্ন ধর্মের বিয়ের কর্ডের সঙ্গে শেয়ার করা হয়।