গুজরাতের এক কিশোরীকে এক ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার জন্য একদল লোকের নৃশংস ভাবে মারধর করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভাইরাল ভিডিওতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, উত্তরপ্রদেশে নিম্নবর্ণের এক মহিলাকে জনগণের ব্যবহারের কুয়ো থেকে জল নেওয়ার জন্য উচ্চবর্ণের লোকেরা মারধোরকরেছে।
২০২০ সালের মে মাসে যখন এই একই ভিডিও ভাইরাল হয়, বুম তখন গুজরাত পুলিশের সঙ্গে কথা বলে। তারা নিশ্চিত করে জানায় যে, ঘটনাটি ওই রাজ্যের ছোটা উদেপুর জেলায় ঘটে। মেয়েটির দূর সম্পর্কের আত্মীয়সমেত নয় ব্যক্তিকে ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক দলিত তরুণীর গণধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। হাথরসের ঘটনা এখন সংবাদ শিরোনামে রয়েছে। ২০২০ সালের ১৪ সেটেম্বর যখন ওই তরুণী মাঠে পশুর খাবার জোগাড় করছিল, তখন চার জন উচ্চবর্ণের লোক তার উপর অত্যাচার করে, ধর্ষণ করে ও খুন করে বলে অভিযোগ উঠেছে। চার জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক জন লোক মেয়েটির হাত ধরে আছে আর দু'জন তাকে বার বার মারছে। এমনকি তারা লাঠি দিয়েও তাকে মারছে। তাদের ঘিরে বহু লোক দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কেউ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছে না বা যারা মারধর করছে তাদের আটকাচ্ছে না। কিশোরীকে যারা মারধোর করছে তাদের স্থানীয় গুজরাতী ভাষায় কথা বলতেও শোনা গেছে।
ভিডিওটির সঙ্গে থাকা ক্যাপশনের তামিল থেকে বাংলায় অনুবাদ, "উত্তরপ্রদেশ, যেখানে মোদীর আশীর্বাদে প্রশাসন চলে সেখানে কতৃত্বকারী কুকুররা কী রকম অন্যায় করে দেখো! কুয়ো থেকে জল নেওয়ার জন্য এই মহিলার কী ভাবে অপমান করা হচ্ছে।"
(তামিল ক্যাপশন-மோடி ஆசீர்வாதத்தால் ஆட்சி நடக்கும் உத்திரபிரதேசத்தில் யோகியின் யோகிதை ஆட்சியில் தாழ்த்தப்பட்ட பெண் பொதுக் கிணற்றில் குடிநீர் எடுத்ததாக கூறி அந்தப் பெண்ணை பெண்ணென்றும் பாராமல் ஆதிக்க நாய்கள் அவர்கள் செய்யும் அநியாயத்தை பாருங்கள்.)
ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে
একই ক্যাপশন দিয়ে আমরা সার্চ করে দেখতে পাই ভিডিওটি একই মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম তদন্ত করে দেখতে পায় যে ভিডিওটি গুজরাতের ছোটা উদেপুরের। স্থানীয় পুলিশ আগেই নিশ্চিত ভাবে জানিয়েছে যে, যে মেয়েটিকে তার পরিবারের লোকেরা মারধোর করেছে সে নাবালিকা।
এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে যখন এই ভিডিওটি একই দাবি নিয়ে ভাইরাল হয়েছিল তখন বুম ওই ভাইরাল ভিডিওর তথ্য যাচাই করেছিল। বুম তখন গুজরাত পুলিশের সঙ্গে কথা বলে। তারা নিশ্চিত করে জানায় যে, ঘটনাটি ওই রাজ্যের ছোটা উদেপুর জেলায় ঘটে এবং যে মেয়েটিকে তার পরিবারের লোকেরা মারধোর করে সে একজন নাবালিকা।
সেই সময় ছোটা উদেপুরের সুপারিন্টেনডেন্ট অব পুলিশ এম এস ভাবোর বুমকে বলেন যে, ভাইরাল ক্লিপে যে মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছে তার বয়স ১৬ বছর এবং সে বিলোয়াতের বাসিন্দা। যারা তাকে মারধোর করেছে তারা মেয়েটির আত্মীয় পরিজন।
ভাবোর বলেছেন, "মেয়েটি ২০ বছরের এক ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে মধ্যপ্রদেশ চলে যায়। মেয়েটির পরিবার তাদের ধরে ফেলে এবং তাদের গ্রামে ফিরিয়ে আনে। তার পর পরিবারের লোকেরা তাকে প্রকাশ্যে মারধর করে।"
তিনি আরও জানান যে, ২০২০ সালের মে মাসে গুজরাত পুলিশ সতর্ক হয় যখন ভিডিওটি তাদের কাছে ভিডিওটি পৌঁছায়। ভাবোর বলেন, "আমরা প্রথমে মেয়েটিকে রংপুর থানা অঞ্চলের বাসিন্দা বলে চিহ্নিত করি। তার পর তার সঙ্গে কথা বলে যারা তাকে মারধর করেছে তাদের বিরুদ্ধে একটি কেস নথিভুক্ত করি।"
এই ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের এবং কুয়ো থেকে জল নেওয়ার জন্য উচ্চবর্ণের লোকেরা মেয়েটিকে মারধোর করেছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, ছোটে উদেপুরের পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।