হৃদয়স্পর্শী এক ভিডিওতে একটি বাচ্চা ছেলেকে রোগী সমেত একটি স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। ঘটনাটি ঘটে উত্তরপ্রদেশের এক হাসপাতালে। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় সেটিকে চালানো হচ্ছে এই মিথ্যে দাবি করে যে, দৃশ্যটি পশ্চিমবঙ্গের একটি হাসপাতালের।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে বাচ্চাটি তার মাকে স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে, যাতে শুয়ে আছেন ছেলেটির দাদু। কিন্তু ভিডিওটির বর্ণনায় পশ্চিমবঙ্গের কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবার প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছে। ২১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা
৪৭,০০০ ছাড়ায়।
১৭ সেকেন্ডের ওই ফুটেজের সঙ্গে বাংলায় লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "গণতন্ত্র আজ বিপন্ন তাই বাংলায় এরকম দৃশ্য প্রকাশ পায়।"
উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়াতে এক হাসপাতালে বাচ্চার স্ট্রেচার ঠেলার ভিডিওর স্ক্রিনশট
পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির নেত্রী ফাল্গুনী পাত্র
তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে একই বক্তব্য সমেত ভিডিওটি শেয়ার করেন। পরে অবশ্য সেটি ডিলিট করে দেওয়া হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট নীচে দেওয়া হল।
ইউপি-র ছেলেটির স্ট্রেচার ঠেলা সম্পর্কে ফাল্গুনী পাত্রর ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ছড়ালো নরেন্দ্র মোদী ও আমিত শাহের সম্পাদিত ছবি
তথ্য যাচাই
বুম নিশ্চিত হয় যে, ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের। ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যায় যে, ভাইরাল ফুটেজটির ওপরের ডান কোণে জায়গাটির নাম হিসেবে লেখা আছে দেওরিয়া, ইউপি।
ইউপি-র দেওরিয়া জেলা হাসপাতালে ৬ বছরের বাচ্চা স্ট্রেচার ঠেলছে, সেই ভিডিওর স্ক্রিনগ্র্যাব
আমরা ভিডিওটির কয়েকটি প্রধান ফ্রেম বেছে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। দেখা যায়, ওই ঘটনা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি
সংবাদ প্রতিবেদনে ভিডিওটি ব্যবহার করা হয়।
'ইন্ডিয়া টুডে'র রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটে উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলা হাসপাতালে। সেখানে একটি ৬ বছরের ছেলে তার মায়ের সঙ্গে তার দাদুর স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে যাওয়ার সময় ভিডিওটি তোলা হয়। পরিবারের সদস্যদেরই স্ট্রেচার ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। কারণ, এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওয়ার্ডবয় ৩০ টাকা চেয়েছিল। হাসপাতালের সারজিক্যাল বা শল্যচিকিৎসা বিভাগের ওই ওয়ার্ডবয়কে পরে সাসপেন্ড করা হয়।
ভিডিওটি নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে ও দেওরিয়ার জেলা শাসক অমিত কিশোরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। উনি হাসপাতালে যান এবং ঘটনাটির তদন্তের নির্দেশ দেন।
'টাইমস অফ ইন্ডিয়া'র খবর অনুযায়ী, রোগীটি এসেছিলেন
উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলার গৌরা গ্রাম থেকে। ঘটনাটি ঘটার দু'দিন আগে উনি আঘাত পান এবং হাসপাতালের সারজিক্যাল ওয়ার্ডে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তাঁর মেয়ে ও ৬ বছরের নাতি তাঁর দেখাশোনা করছিলেন। ড্রেসিং করার জন্য রোগীকে নিয়ে স্ট্রেচারে করে যাওয়া-আসা করার জন্য ওই ওয়ার্ড কর্মীটি প্রতিবার ৩০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু রোগীর মেয়ে সেই টাকা দিতে রাজি হন না।
অমিত কিশোর একটি তদন্তের নির্দেশ দিয়ে দেওরিয়ার চিফ মেডিক্যাল অফিসারকে সেই কাজ পরিচালনা করার ভার দেন। তিনি আরও জানান যে, ওয়ার্ডবয়টিকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে।