দাঙ্গা কবলিত দিল্লির কিছু অংশে পীড়িতদের মধ্যে ত্রণসামগ্রী বিলি করার একটি ছবিকে ভুয়ো ব্যাখ্যা সহ শেয়ার করা হচ্ছে যে, এটি শাহিন বাগে আন্দোলনরত মহিলাদের টাকা দিয়ে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে উস্কানি দেওয়ার ছবি।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ১০ লক্ষেরও বেশি লোক ৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপটি দেখে ফেলেছে, যাতে দেখা যাচ্ছে, একটা সরু গলির মধ্যে সার দিয়ে দাঁড়ানো মহিলা ও শিশুরা হাত পেতে টাকা নিচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির কয়েকটি স্থানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে গত সপ্তাহে ভয়ংকর হিংসাত্মক দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেধেছিল, যাতে অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়।
কানাডীয় টুইটার প্রাভাবক তারেক ফাতাহ ভাইরাল ভিডিওর একটি অংশ টুইট করে মন্তব্য করেন: "দিল্লির শাহিন বাগের এই ভিডিওটি নিজে থেকেই যা বলার বলে দেয়।"
This video from #ShaheenBagh in Delhi speaks for itself. pic.twitter.com/qBOsJutGfF
— Tarek Fatah (@TarekFatah) February 29, 2020
বুম আগে তারেক ফাতাহের শেয়ার করা ভুয়ো তথ্য খণ্ডন করেছে। পড়ুন এখানে ও এখানে।
এই একই ভিডিও রিটুইট করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান অমিত মালব্য।
রিয়ালিটি শো মারফত লোকের মনোরঞ্জন করা রাহুল মহাজনও একই ধরনের ব্যাখ্যা সহ ভিডিওটি শেয়ার করেন: "যে ৫০০ টাকা পেলেই কিছু না বুঝেই জাতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-আন্দোলন করে, সে ৫০০০ টাকা পেলে যে এই দেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দেবে, এতে আর আশ্চর্য কী?"
500 रुपए लेकर जो मुद्दे की जानकारी के बिना देश के ख़िलाफ़ धरने पर बैठ सकता है, वो 5000 लेकर देश जलाने का काम करे तो अचरज किस बात का है। pic.twitter.com/t9tARLjOGD
— Rahul Mahajan (@TheRahulMahajan) February 29, 2020
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
Live from Shaheen Bagh
— Kashmiri Pandits News कोशूर न्यूज़ चैनल (@kpnewschannel) February 29, 2020
500 500 500 500 500 pic.twitter.com/DF2EUWJOv6
ফেসবুকেও ভিডিওটি হয়েছে
ফেসবুকেও ভিডিওটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল করা হয়েছে, যাতে শাহিন বাগে আন্দোলনরত মহিলাদের প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছে।
ভিডিওটি এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না, তবে তার আর্কাইভ বয়ান দেখতে পারেন এখানে।
তথ্য যাচাই
শাহিন বাগ অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে ২ মার্চ চেন্নাই-এর সমাজকর্মী চন্দ্র মোহনের একটি ক্লিপ শেয়ার করা হয়েছে, যেখানে তাঁকে এই ভুয়ো ভিডিও ফুটেজগুলির পর্দাফাঁস করতে দেখা যাচ্ছে।
সেখানে চন্দ্র মোহন একটি সরু গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, যেটাকে তিনি পুরানা মুস্তফাবাদ এলাকার গলি রূপে শনাক্ত করেছেন। ভিডিও ক্লিপটিতে তিনি জানাচ্ছেন, এই ত্রাণসামগ্রী বিলি দিল্লির বাবু নগরের ৯ নং গলির এ ব্লকে শুরু করা হয়। তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে: "শিব বিহারের অনেক লোক যাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা এখানে এসে বসবাস করছে। এখানকার বাসিন্দারা তাঁদের জন্য নিজেদের হৃদয় এবং বাড়ির দরজা দুই-ই হাট করে খুলে দিয়েছেন, যাতে তারা এখানে নিরাপদে বাস করতে পারে।" তিনি এরপর টাকা বিলি করা কালো জামা পরা এক ব্যক্তিকে শাহজাদ মালিক বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, যখন ত্রাণসামগ্রী সব ফুরিয়ে যায়, তখন এই শাহজাদই নগদ ৭০ হাজার টাকা দুর্গতদের মধ্যে বিলি করেন।
#ShaheenBaghTruth
— Shaheen Bagh Official (@Shaheenbaghoff1) March 2, 2020
The #fake video which claimed women of #ShaheenBagh are paid debunked! The video actually shows the huge generosity of people in Babu Nagar towards those who have lost their homes in Shiv Vihar. We salute Shehzad bhai and his team #DelhiPogrom #DelhiRelief pic.twitter.com/3vQklBmGKh
মোহন ভিডিওটি ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন ভিডিওটি।
বুম চন্দ্র মোহনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান: "আমি চেন্নাইয়ের একজন সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মী। ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ করতে আমি ৫ দিন আগে দিল্লিতে এসেছি। আমরা প্রথম চাঁদবাগ থেকেই কাজ শুরু করি। তবে শিব বিহার এবং মুস্তফাবাদেও দাঙ্গা-কবলিত মানুষরা রয়েছেন। তাই শুধু সেখান থেকেই ত্রাণসামগ্রী বিলি করায় একটু সমস্যা হচ্ছিল, তাই চাঁদবাগ থেকে আমরা বিলি-কেন্দ্রটা মুস্তফাবাদে সরিয়ে আনি। অনেকেই আমার কাছে জানতে চাইছিল, এই ভাইরাল ভিডিওটার সত্যিটা কী? আমি এখানে পৌঁছনর পর এখানকার লোকেরা বললো, ভিডিওটি এই জায়গাতেই তোলা এবং ত্রাণে নিযুক্ত শাহজাদকেও তারাই চিনিয়ে দিল। আমি পরে তার সঙ্গেও যোগাযোগ করি।"
আমরা শাহজাদ মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করি এবং তিনি জানান, ভিডিওয় দেখা টাকা বিলি করা ব্যক্তিটি তিনিই। "দাঙ্গায় সর্বস্ব খোয়ানো মানুষরা এখানে এসে আশ্রয় খুঁজেছেন। আমরা প্রথমে ত্রাণসামগ্রীই বিলি করছিলাম। কিন্ত যখন সব ফুরিয়ে গেল, তখন আমরা নগদ টাকা বিলি করতে শুরু করি। আশপাশের দোকানপাটও সব বন্ধই ছিল। তাই আমরা প্রত্যেক মহিলাকে ৫০০ টাকা করে ত্রাণসাহায্য দিই, সব মিলিয়ে মোট ৭০ হাজার টাকা।"
শাহজাদ বুমকে জানান, ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যটি ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ৩টে নাগাদ তোলা হয়। ওই দিনেই হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার হওয়া ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশটও তিনি আমাদের দেখান।
তিনি আমাদের আরও জানান, মূল ভিডিওটি ২ মিনিটের, সেটিকে অভিসন্ধিমূলক ভাবে কাটছাঁট করে ৩০ সেকেন্ডে নামানো হয়েছে এবং ভুয়ো ব্যাখ্যা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শাহজাদ মূল ভিডিওটাও বুমের সঙ্গে শেয়ার করেন।
আমরা চন্দ্র মোহনের তোলা ভিডিও এবং ভাইরাল হওয়া ফুটেজটির তুলনা করে দেখেছি, দুটি একই জায়গার ছবি। দুটি ফুটেজেই সেই একই ইঁটের দেওয়াল এবং রাস্তায় পড়ে থাকা পরিত্যক্ত হেলমেট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
শাহিন বাগের প্রতিবাদকে ভুয়ো তথ্য দিয়ে বিকৃত করা হচ্ছে