ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে আদানি ২০১৯ সাল থেকে অনেকগুলি কৃষি বিপণন সংস্থা তৈরি করেছেন। এই দাবিটি একেবারেই মিথ্যে। একটি ছবিতে সংস্থার এক জন ডিরক্টর অমিত মালিককে দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে একটি তারিখ উল্লেখ করে দাবি করা হয়েছে যে এই দিনই মালিককে এই সব সংস্থার ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এই ছবিতেই ওই মিথ্যে দাবি করা হয়েছে। ছবিতে কোনও সংস্থার ইনকর্পোরেশনের তারিখ দেওয়া হয়নি।
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে মালিকের নিয়োগের তারিখের সঙ্গে কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের তথ্যে যে তারিখ দেওয়া হয়েছে তা মিলে যায় এবং কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের তথ্য থেকে আরও জানা যায় যে এইসব সংস্থার কোনওটাই ২০১৯ সালে তৈরি করা হয়নি। এগুলি ২০১৮ সালে বা তার আগে তৈরি হয়েছে। আদানি লজিস্টিক সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেড ২০০৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল।
যে ছবির কথা উপরে বলা হয়েছে সেটি নীচে দেখতে পাবেন। এতে আদানি গ্রুপের অধীনস্থ নয়টি সংস্থার 'নিয়োগের তারিখের' তলায় ২০১৯ সালের বিভিন্ন তারিখ সমেত দেখা যাচ্ছে।
মিথ্যে দাবির সঙ্গে আসল যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে
টুইটারে এই ছবির সঙ্গে যে দাবি করা হয়েছে তা নীচে দেখতে পাবেন। যিনি দাবি করেছেন তিনি নিজেকে কংগ্রেস সমর্থক বলে দাবি করেছেন। কেন আদানি গ্রুপ ২০১৯ সালে এতগুলি কৃষিপণ্য বিপণন সংস্থা তৈরি করেছে, তিনি টুইটে সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এ রকম একটি টুইট প্রায় ৮০০০ বার রিটুইট করা হয়েছে এবং ৭৭০০বার লাইক করা হয়েছে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন-বিরোধী কৃষক বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে এই দাবি শেয়ার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সেপ্টেম্বরে তাঁর সম্মতি দেওয়ার পর এই বিলগুলি আইনে পরিণত হয়েছে। সরকার দাবি করছে এই আইনের ফলে কৃষকরা আরও বড় বাজার পাবেন, দরদাম করার সুযোগ পাবেন এবং তার ফলে তাঁদের পণ্যের ভালো দাম পাবেন। অন্য দিকে কৃষকরা মনে করছেন বড় কর্পোরেট সংস্থার হাতে তাঁরা শোষিত হতে পারেন এবং সরকার পরে তাঁদের সাহায্য করা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ার বহু ব্যবহারকারী এবং বিরোধী পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে যে সরকার আদানি এবং আম্বানি গোষ্ঠীর সুবিধার্থে কাজ করছে এবং তাদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন আইন তৈরি করছে। দীর্ঘ দিন ধরেই এই অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই এই সাম্প্রতিক পোস্টটি করা হয়েছে। আদানি গ্রুপ জানিয়েছে যে তারা কৃষকদের কাছ থেকে কোনও কৃষিপণ্য কেনে না, এমনকি এগুলির মালিকানাও তাদের নয়। বরং ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া কৃষকদের কাছ থেকে যা কেনে, তারা শুধুমাত্র তা জমা রাখার কাজ করে। আগেই বুম মোগায় আদানি লজিস্টিকের ফসল জমা করার যে ব্যবস্থা রয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তথ্য যাচাই
ওই দাবির সঙ্গে যে ছবি দেওয়া হয়েছে তা ভালো করে লক্ষ্য করলে দুটি ব্যপার দেখা যাবে। প্রথমত, 'ডিআইএন' বা ডিরেক্টর আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার লেখা একটি কলাম দেখা যাচ্ছে । এটি ইস্যু করেছে এমসিএ এবং হোল্ডারের নাম রয়েছে অমিত মালিক। দ্বিতীয়ত, এতে পদ এবং নিয়োগের তারিখ দেখা যাচ্ছে।
বুম এরপর এমসিএ'র মাস্টার ডিরেক্টরি অব ডিরেক্টরস খুঁজে দেখে যা এখানে (http://www.mca.gov.in/mcafoportal/viewDirectorMasterData.do) দেখতে পাওয়া যাবে। সেখানে ০৮৩৯৭২৪৫ (ছবিতে যে ডিআইএন নাম্বার দেওয়া হয়েছে) নম্বারটি দেওয়াতে ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে সেই একই তথ্য দেখতে পাওয়া যায়। যেহেতু এইসব তথ্য জন সাধারণণের দেখার জন্য রয়েছে তাই যেকোনো কর্পোরেশন ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট এটি দেখতে পাবে। এতে মালিক কবে থেকে ডিরেক্টর হয়েছেন তা দেখা যাবে কিন্তু ইনকর্পোরেশনের তারিখ দেখতে পাওয়া যাবে না।
এমসিএ'র ওয়েবসাইটে অমিত মালিকের ডিরেক্টরশিপ লিঙ্ক
এই দশটি সংস্থার কর্পোরেট আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (সিআইএন) হাইপার লিঙ্ক করে দেওয়া হয়েছে যেমনটি আমরা উপরে দেখতে পাচ্ছি। প্রতিটি সংস্থার তথ্য দেখলে বোঝা যাবে তাদের ইনকর্পোরেশনের তারিখ আলাদা। কোনোটাই ২০১৯ সালের নয় ২০১৮ সালের বা তার আগের। নীচে এই সংস্থাগুলির ইনকর্পোরেশনের তারিখ এক সঙ্গে দেখা যাবে।
এই দশটি কোম্পানির ইনকর্পোরেশনের তারিখ