অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরী করার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ নাকি বলেছে যে তারা ভারতের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবে, এইরকম দাবি সহ একটি পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে।।
বুম যাচাই করে দেখেছে যে পোস্টটি ভুয়ো এবং বাংলাদেশর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কোনও কূটনৈতিক মন্তব্য করেনি। বুম দেখে যে বাংলাদেশের বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন 'দ্য হিন্দু'কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে রাম মন্দির বিষয়ে মন্তব্য করলেও ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো কিছু বলেননি।
আজ ৫ অগস্ট অযোধ্যার বিবাদিত স্থানে রাম মান্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে, এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই বি জায়গায় ১৯৯২ সালে ষোড়শ শতাব্দীর একটি মসজিদকে হাজারো লোকের সমাগমে ভেঙ্গে দেওয়া হয়।
এদিকে রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের প্রেক্ষিতেই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশকে জড়িয়ে ফেসবুকে একটি ভুয়ো গ্রাফিক পোস্ট করা হয়েছে। গ্রাফিকের উপরের অংশে রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি, রয়েছে রাম মন্দিরের প্রস্তাবিত রূপের একটি ছবি এবং বাংলায় লেখা রয়েছে, "রাম মন্দির তৈরী হলে সম্পর্ক থাকবে না, ভারতকে হুমকি দিল বাংলাদেশ।"
আর গ্রাফিকের নিচে একটি বাংলা চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যের ছবি দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক পোষ্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "ডায়লগটা বলে যাও।"
বুম যাচাই করে দেখেছে পোস্টটি ভুয়ো ও বাংলাদেশের তরফে এরকম কোনও কূটনৈতিক মন্তব্য করেননি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
বুম রাম মন্দির বিষয়ে বাংলাদেশের কী প্রতিক্রিয়া তা জানার জন্য গুগল সার্চ করে 'দ্য হিন্দু'তে প্রকাশিত হওয়া একটি
প্রতিবেদন খুঁজে পায়। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কিছু বয়ান উল্লেখ করা হয়েছে ভারত বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং রাম মন্দির নির্মাণের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে।
৫ অগস্টে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের শিলান্যাস সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়ায় আব্দুল মোমেন 'দ্য হিন্দুকে' টেলিফোনে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, "ভারত সরকার এবং ভারতীয় সমাজের উচিৎ এমন কোনো কিছুকে প্রতিহত করা যা বাংলাদেশের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে।"
তিনি সেই সাক্ষাৎকারে আরও বলেন যে, "ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে এক ঐতিহাসিক নিবিড় সম্পর্ক। আমরা এই ঘটনাকে (মন্দির প্রতিস্থাপন) আমাদের সম্পর্কে আঘাত আনতে দেবো না কিন্তু আমি অনুনয় করব যে ভারতও যাতে এমন কিছু না করে যাতে আমাদের সুন্দর ও নিবিড় সম্পর্কে বাঁধা আসে। এটি উভয় দেশের জন্যই প্রযোজ্য, আমি বলবো দুটি দেশই যাতে এমনভাবে কাজ করে যাতে এ'রকম বাঁধা বিঘ্ন উপেক্ষা করা যায়।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত ২৫ জুলাই 'দ্য হিন্দুতে'-তে আরেকটি
প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয় যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকাতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের আহ্বানে কোন সাড়া দিচ্ছেন না। এই প্রতিবেদনে ২৪ জুলাই ২০২০ ভোরের কাগজ নামে এক
সংবাদপত্র প্রকাশিত মতামত ভিত্তিক লেখাকে উদ্ধৃত করা হয়। হিন্দুর এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রণকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব হাইকমিশনারকে নিয়ে
ওই প্রতিবেদনকে 'ক্ষতিকর' ও 'সাজানো–মনগড়া' জানিয়ে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক 'অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।'
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৩১ জুলাই ২০২০ লেখা চিঠিতে সে দেশের জনগন ও সরকারকে ইদুজ্জোহা উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বার্তা দেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রিভা গাঙ্গুলি দাস বুধবার ৫ অগস্ট বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪-কে দেওয়া
এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, "অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ হলে কোন সম্প্রদায়ের কারোর উপরেই এর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।"