একটি লোককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ – এমনই এক ভিডিও মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে, উনি একজন বিজেপি নেতা, যিনি কৃষক আন্দোলনকে বদনাম করার জন্য "পাকিস্তান জিন্দাবাদ" স্লোগান দিচ্ছিলেন।
ভিডিওটি এই মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে যে, ওই ব্যক্তি হলেন বিজেপি নেতা উমেশ সিং। পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দেওয়ার জন্য কৃষকরা তাঁকে পেটায়। হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "কৃষকরা বিজেপি নেতা উমেশ সিংকে মারধোর করেন। উনি কৃষকদের প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দিয়ে, সেখানে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দিচ্ছিলেন।"
(হিন্দিতে লেখা আসল ক্যাপশন: किसान आंदोलन में शामिल होकर पाकिस्तान जिन्दाबाद के नारे लगाते "भाजपा नेता #उमेश_सिंह" को किसानों ने पकड़कर #जूतों से मारा)
তথ্য যাচাই
৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি আমরা ভাল করে দেখি। কিন্তু কোনও স্লোগান শোনা যায় না বা 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দিতেও দেখা যায় না কাউকে। ভিডিওটিতে কেবল দেখা যায়, একটি লোককে এক দল লোক পেটাচ্ছে এবং এক পুলিশ কর্মী তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওই দলের একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "বনাও ইসকো নেতা, নেতা বনাও ইসকো", অর্থাৎ, 'একে নেতা বানাও'।
আমরা দেখি যে, ভাইরাল ভিডিওটিতে 'ভারত সমাচার'-এর লোগো রয়েছে। জানা যায়, সেটি একটি স্থানীয় চ্যানেল। ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০তে ওই ভিডিওটি টুইট করেছিল ওই চ্যানেল। তাতে ওই মার-খাওয়া লোকটিকে অরুণ বলে শনাক্ত করা হয় এবং বলা হয় যে, সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য কৃষকরা তাঁকে মারে।
ওই টুইটে গাজিয়াবাদ পুলিশের নামও ট্যাগ বা জুড়ে দেওয়া ছিল। সেই সূত্র ধরে আমরা গাজিয়াবাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা জানান যে, গাজিয়াবাদের খোডায় ঘটনাটি ঘটে।
খোডার স্টেশনহাউস অফিসার মোহম্মদ আসলাম বলেন যে, ওই ব্যক্তি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। এবং পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগানও দেওয়া হয়নি সেখানে। উনি বলেন, ১৪ ডিসেম্বর দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। লোকটিকে তিনি অরুণ কুমার বলে শনাক্ত করেন। উনি আরও জানান যে, অরুণ কুমার শাহরনপুরের বাসিন্দা, যিনি একজন সমর্থক হিসেবে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন।
আসলাম বলেন, "লোকটি স্থানীয় চ্যানেলের রিপোর্টারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই সময় রিপাবলিক ভারত-এর রিপোর্টারকে দেখতে পেয়ে উনি তাঁদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেন। তার ফলে, সাংবাদিকরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এবং তাঁরাও পাল্টা মন্তব্য করলে, মারপিট শুরু হয়ে যায়। আশেপাশে যে কৃষকরা ছিলেন, তাঁরা লোকটির ওপর রেগে যান। কারণ, তাঁদের ধারণা হয় যে, তিনি তাঁদের আন্দোলন বানচাল করতে চাইছেন। রিপাবলিক ভারতের রিপোর্টার সেখানে কর্মরত পুলিশকে ডেকে লোকটিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন। তাঁকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর দায়ের না হওয়ায়, তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়্।"
আসলাম আরও জানান যে, লোকটি গাজিপুরে তাঁর নিজস্ব সিকিউরিটি এজেন্সি চালান এবং কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই। "পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেওয়া হয়েছিল বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা মিথ্যে।"
এরপর উমেশ সিং নামে কোনও বিজেপি নেতা আছেন কিনা, তা দেখতে আমরা 'মাইনেতা'য় সার্চ করি। দেখা যায়, ওই নামে বিজেপির কোনও নেতা নেই। নির্বাচন লড়েন যে নেতারা, তাঁদের সম্পর্কে তথ্য দেয় 'মাইনেতা' ওয়েবসাইট। সেখানে তাঁদের অপরাধ ও অর্থ সংক্রান্ত তথ্যও পাওয়া যায়।
তবে প্রহৃত অরুণ কুমার বিজেপিতে আছেন কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে, আমরা ওই নাম দিয়েও মাইনেতায় সার্চ করি। দেখা যায়, ওই নামে একজন আছেন বিজেপিতে, কিন্তু তিনি থাকেন হিমাচল প্রদেশে। গাজিয়াবাদ পুলিশের কথা অনুযায়ী, অরুণ কুমার সাহারানপুরের মানুষ। কিন্তু এখন থাকেন গাজিপুরে। ওই দুই শহরই হল উত্তরপ্রদেশে।
কৃষকদের সম্পর্কে ভুল খবরগুলি দেখতে বুমের থ্রেড দেখুন।