কাজাখস্তানে জটিল চর্ম রোগ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত এক ব্যক্তির ওপর তোলা একটি ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপ ও ভারতের সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি একজন যোগী যিনি ৩০০ বছর ধরে ধ্যানস্থ অবস্থায় রয়েছেন। একটি মন্দিরের খনন কাজ চালানোর সময় তাঁকে জীবিত পাওয়া যায়।
ভিডিওটিতে রয়েছে পুঙ্খনাপুঙ্খ দৃশ্য। তাতে মাটি আর রক্তমাখা এক ভগ্নদশার মানুষকে দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে তিনি। শরীরের নানা স্থানে ঘা। জল গড়াচ্ছে সেগুলি থেকে। তাঁর বয়স বা তিনি কোন দেশের মানুষ তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে কোনও এক বিদেশি ভাষায় তাঁর নাম জিজ্ঞেস করা হলে, উনি বলেন, 'আলেকজান্ডার'।
ভারতে ওই ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে এই বলে যে, ওই ব্যক্তি একজন যোগী। ৩০০ বছর ধরে ধ্যান করছিলেন উনি। তামিলনাডুর ভাল্লিয়ুরে তাঁকে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "তামিলনাডুর ভাল্লিয়ুরে, ৩০০ বছর আগে 'জীব সমাধিতে' চলে গিয়েছিলেন সিদ্ধার (যোগী)। তাঁর বর্তমান জীবনের দর্শন পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভাল্লিয়ুর মন্দিরে মাটি খোঁড়ার সময় তাঁকে জীবিত পাওয়া যায়। সিদ্ধার যোগাসনে বসে আছেন। ওঁ নমঃ শিবায়।"
এই বার্তাটি বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করা হচ্ছে। সেটির সত্যতা যাচাই করার জন্য বুমের হেল্পলাইনেও (৭৭০০৯০৬১১১) আসে সেটি।
সোশাল মিডিয়ার সর্বত্র ওই একই ক্যাপশন ব্যবহার করা হচ্ছে।
(সতর্কতা: বীভৎস দৃশ্য)
নীচে ভিডিওটির স্ক্রিনশট দেওয়া আছে। ফেসবুকে ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। পোস্টটি কাটছাঁট করে সংস্করণ করা আছে এখানে।
টুইটারে একই ধরণের পোস্ট দেখা যাবে এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
অন্য একটি টুইটে ওই একই দাবি করা হয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে ব্যাপারটি সম্পর্কে সন্দেহও প্রকাশ করেছেন টুইটারকারী।
(সতর্কতা: বীভৎস দৃশ্য)
টুইটারে ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন ও আর্কাইভ সংস্করণ দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
যে 'জীব সমাধির' কথা পোস্টগুলিতে বলা হচ্ছে, সেটি ধ্যানের একটি অবস্থা। হিন্দু যোগীরা এমন গভীরভাবে ধ্যানমগ্ন হন যে তা সমাধিস্ত হওয়ারই সমতুল্য বলে মনে করা হয়। খুব উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান অর্জনের উপায় সেটি এবং প্রবল আত্মিক শক্তির পরিচায়ক।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টারের সাহায্যে পাখি উদ্ধারের এই দুঃসাহসিক ভিডিওটি সুরাতের নয়
তথ্য যাচাই
বুম দেখে যে, ভিডিওটি আগেও অন্য ধরনের মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছিল। তার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে সেটির সত্যতা যাচাইও হয়। রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, ভিডিওটি সম্পর্কে যে সব মিথ্যে দাবি করা হয়েছে এ পর্যন্ত, সেগুলি সামনে আসে। কঠিন চর্মরোগে আক্রান্ত আলেকজান্ডারের শারীরিক অবস্থার ভিডিও তোলেন কাজাখস্তানের আকটোবে মেডিক্যাল সেন্টারের একজন শল্যচিকিৎসক। আসল ভিডিওটি তোলা হয় জুন ২০১৯-এ। ওই ডাক্তার ভিডিওটি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করেন। তারপরই সেটি নানা মিথ্যে বিবরণ সমেত সোশাল মিডিয়ায় ছড়াতে থাকে।
এক সময় রাশিয়ায় দাবি করা হয় যে, ওই ব্যক্তি সাইবেরিয়ায় একটি ভালুকের আস্তানায় আটকে পড়ে কোনওক্রমে এক মাস কাটাতে সক্ষম হন। তারপর শিকারি কুকুররা তাঁকে উদ্ধার করে। 'দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট'-এর মত সংবাদ মাধ্যম খবরটি নস্যাৎ করে। আরও একটি গল্পও ছড়িয়ে ছিল। সেখানে এই ব্যক্তির ছবির সঙ্গে আরও কিছু ছবি জুড়ে একটি মন্তাজ তৈরি করা হয়। সঙ্গে দেওয়া ধারাভাষ্যে বলা হয় যে, রাশিয়ার সোচি শহরের একটি সমাধি থেকে 'আলেকজান্ডার' উঠে এসেছেন।
বেশির ভাগ মিথ্যে দাবিগুলির উৎস ইউটিউব ও 'ইএডেইলি' নামের একটি সংবাদ সংস্থা। খবরটি ব্রিটেন ও ইয়োরোপেও ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ সংস্থাটি অবশ্য দু'দিন পরে অন্য একটি প্রতিবেদনে তাদের ভুল স্বীকার করে। বলা হয়, ধারাভাষ্যে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তা রাশিয়ান নয়, বরং তা কাজাখস্তানের ভাষা।
ভারতে শেয়ার করার সময়, বলা হচ্ছে যে, এক যোগী যোগাসনে বসে আছেন। যোগবিদ্যায় ৮৪ ভঙ্গিমার আসন আছে। শায়িত অবস্থায়ও আসন হয়। কিন্তু যে ভাবে হাসপাতালে শুয়ে আছেন ব্যক্তিটি তার সঙ্গে কোনও আসনেরই মিল পাওয়া যায় না।
জুলাই ২০১৯'এ আকতোবে মেডিক্যাল সেন্টারের ডিরেক্টর রুস্তম ইসেইয়েভ-এর সঙ্গে কথা বলে সংবাদ সংস্থা এএফপি। উনি জানান যে, ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তিনি তাঁর চিকিৎসাধীন। এবং ওই ব্যক্তিকে আদৌ কোনও ভালুক আক্রমণ করেনি। ইসেইয়েভ বলেন ব্যক্তিটির নাম আলেকজান্ডার পি। উনি সোরিয়াসিস রোগে ভুগছেন। "উনি ১৫ দিন আগে আমদের কাছে আসেন। আমরা তাঁর চিকিৎসা করি। অবস্থার উন্নতি হলে, আমরা তাঁকে ছেড়ে দিই। উনি কাজাখস্তানের নাগরিক এবং আকতোবের বাসিন্দা," ইসেইয়েভ এএফপিকে একথা বলেন।
আরও পড়ুন: না, ট্রাম্পের গুজরাট সফরের জন্য রাস্তার হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে না