পাকিস্তানের (Pakistan) প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের (Imran Khan) জেলেবন্দী অবস্থায় মৃত্যু (dead) হয়েছে দাবি করে একটি ভুয়ো নথি ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে।
পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের উল্লেখ সহ ভাইরাল চিঠি ইমরান খানের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে জানায় জাতি সঙ্ঘ তার মৃত্যুর তদন্ত করছে।
প্রাক্তন ক্রিকেটর ও রাজনীতিবিদ ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি পাকিস্তানি আদালতে তার বিচার হওয়ার পর, ২৩ অগাস্ট, ২০২৩ থেকে জেলবন্দী রয়েছেন। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইসলামের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে রাওয়ালপিন্ডির আদাইলাতে জেল খাটছেন। পিটিআইয়ের সদস্যরা ইমরান খানের মুক্তির বিষয়ে ক্রমাগত পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে চলেছে। ভারতের অপারেশন সিঁদুরের পরিপ্রেক্ষিতে পিটিআই খানের মুক্তির জন্য জোর বাড়িয়েছে।
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ বুমকে নিশ্চিত করেছে ভাইরাল নথিটি ভুয়ো। এছাড়াও, আমরা নথিতে একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করি যেমন তারিখের অনুপস্থিতি, ভুল বানান ইত্যাদি যা ইঙ্গিত দেয় ভাইরাল দাবিটি সমর্থন করতে এই ভুয়ো নথি তৈরি করা হয়েছে।
পাকিস্তান সরকারের লোগো ও শিরোনামে ইংরেজিতে "প্রেস রিলিজ" সহ নথিতে লেখা হয়েছে, "আমরা দুঃখের সঙ্গে নিশ্চিত করছি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন মারা গেছেন। ঘটনাটি কোন পরিস্থিতিতে ঘটেছে তা বর্তমানে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।" (অনূদিত)
নথিটির উপরে তারিখ দেওয়া না থাকলেও শেষে তারিখের জায়গায় ১০ মে, ২০২৫ লেখা দেখা যায়।
এই নথিটি ফেসবুক, হোয়াটস্যাপের মতো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
আমরা প্রথমে ইমরান খানের মৃত্যু সম্পর্কে পাকিস্তান সরকারের বিদেশ মন্ত্রক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে অনুসন্ধান করে দেখি। কিন্তু, কোথাও এবিষয়ে কোনও সরকারি ঘোষণা খুঁজে পাইনি।
আমরা আন্তর্জাতিক বা পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভাইরাল দাবিটিকে সমর্থন করে এমন কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি। ইমরান খান যিনি পাকিস্তানের ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন অধিনায়কও ছিলেন তার মৃত্যুর খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হওয়ার কথা। কিন্তু, বুম এমন কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি।
এরপর আমরা নথিটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বেশ কিছু অসঙ্গতির মধ্যে সঠিক তারিখ ও স্বাক্ষরের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করি যার উল্লেখ সরকারি কোনও নথিতে আবশ্যক।
আমরা আরও লক্ষ্য করি চিঠিটির শুরুতে তারিখের জায়াগায় কেবল ২০২৫ সাল উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো মাস বা দিন লেখা নেই। এ ছাড়াও, সেখানে 'isetively' এবং 'reaffirm' মতো কিছু শব্দের বানানও ভুল রয়েছে।
আমরা পাকিস্তানের জিও ফ্যাক্ট চেকের সঙ্গে যোগাযোগ করি যারা বুমের তরফ থেকে বিদেশ মন্ত্রী শাফকাত আলি খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি নিশ্চিত করেছেন নথিটি ভুয়ো।
পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নথিটিকে ভুয়ো বলে অভিহিত করে মানুষের উদ্দেশ্যে বলেছে এধরণের বিভ্রান্তিকর দাবি বিশ্বাস না করতে।
বুম এর আগে রাওয়ালপিন্ডির জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের (জিএইচকিউ) আরেকটি নথি পেয়েছিল যেখানে দাবি করা হয় বন্দি থাকাকালীন ইমরান খান যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। আমরা তখন বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং সকলেই এই ধরনের ঘটনা অস্বীকার করে বলে এমন ঘটনা যদি সত্য হত তাহলে তার রাজনৈতিক অনুগামীরা তা নিয়ে শোরগোল ফেলে দিত।