একটি বিশেষ আদালত সমাজকর্মী গোষ্ঠী ইউনাইটেড এগেইনস্ট হেট (ইউএএইচ)এর-র সদস্য উমর খালিদকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজত দিয়েছে। দিল্লি পুলিশ রবিবার গভীর রাতে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত করার অভিযোগে উমরকে গ্রেফতার করে এফআইআর ৫৯/২০-র অভিযোগের ভিত্তিতে। ওই দাঙ্গায় ৫৩ জন নিহত হয় এবং বহু মানুষ আহত হয়।
অতিরিক্ত দায়রা আদালতের বিচারপতি অমিতাভ রাওয়াত বলেন: "মামলার চরিত্র এবং অভিযুক্তের ভূমিকা বিবেচনা করে—বিশেষত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন-বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও সংঠনের সমর্থনে তাঁর ভূমিকার কথা ভেবে (যা শেষ পর্যন্ত দাঙ্গায় পরিণত হয়)—আমি মনে করছি, সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের স্বার্থে তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া দরকার।"
উমরকে গ্রেফতার করার আগের দিনই দাঙ্গায় আহত ১৭ বছরের এক কিশোরের মৃত্যুর আগে দেওয়া বিবৃতির ভিত্তিতে অভিযোগ করা হয় যে সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বনন্দ, স্বরাজ অভিযান দলের নেতা যোগেন্দ্র যাদব এবং তথ্যচিত্র পরিচালক রাহুল রায় নাকি সিএএ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের উত্তেজিত করতে যে কোনও উপায় অবলম্বনের এবং যত চরম পন্থা সম্ভব অনুসরণ করার জন্য উস্কানি দেন এবং সিএএ-কে মুসলিম-বিরোধী আইন আখ্যা দিয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা প্রচারের ষড়যন্ত্র করেন।
বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি অমিত প্রসাদ আদালতকে জানান, দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী বিশেষ সেল উমর খালিদের কাছে মোট ১১ লক্ষ পৃষ্ঠায় বিবৃত বিভিন্ন তথ্য বিষয়ে জেরা করতে চায়। উমর খালিদের উকিল ত্রিদিব পাইস অবশ্য অভিযোগ করেন, '১০ দিনের হেফাজত চেয়ে দিল্লি পুলিশ নাগরিকের স্বাধীনতার প্রতিই চরম ঔদাসীন্য দেখাচ্ছে'। বিচারক অমিত রাওয়াতকে তিনি জানান, "পুলিশ আমার মক্কেলকে ইতিমধ্যেই ১৫ ঘন্টা ধরে জেরা করেছে। তা ছাড়া দাঙ্গা যে সময় ঘটে, সে সময় উমর দিল্লিতেই ছিলেন না।''
পাইস আরও বলেন, "এটা এমন একটা মামলা যেখানে বহু মানুষ বলেছেন, তাঁদের চাপ দিয়ে জোর করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারকে তাঁরা এই মর্মে চিঠিও পাঠিয়েছেন।"
পাইস আরও বলেন, 'পুলিশ এই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগই দিচ্ছে না, যে কোনও বিষয়কেই স্পর্শকাতর আখ্যা দিয়ে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণকে শ্রেণিবদ্ধ করে গোপন রাখছে।' এর জবাবে প্রসাদ জানান, 'ইউএপিএ-র অধীন এই ধরনের মামলায় সব ধরনের তথ্য উন্মোচন করা যায় না।'
আরও পড়ুন: রিয়া চক্রবর্তীর গ্রেফতারি: ক্যানাবিস ও ভারতে তার আইনি অবস্থান
দিল্লি দাঙ্গা "একটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র"
উমর খালিদকে ১৯৬৭ সালের ইউএপিএ আইনে দাঙ্গা করা, ষড়যন্ত্র, খুন এবং দেশদ্রোহের দায়ে ১৮৬০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং ১৯৫৯ সালের অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নেতা উমর খালিদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর দাখিল করে ৬ মার্চ একজন খোঁচড় বা ইনফর্মারের গোপন সাক্ষ্যের ভিত্তিতে। এর কিছু কালের মধ্যেই বিশেষ সেল ষড়যন্ত্রের দিকটা তুলে ধরতে তদন্তের ভার নিজের হাতে তুলে নেয়।
এফআইআর-এ বলা হয়, দিল্লির দাঙ্গা একটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার পরিকল্পনা করেন উমর এবং তাঁর সহযোগী দানিশ। এর পরের কয়েক সপ্তাহ ধরে কংগ্রেস বিধায়ক ইসরা জাহান, আরজেডি নেতা মীরান হায়দার, "পিঁজরা তোড়" সংগঠনের দেবাঙ্গনা কলিতা ও নাতাশা নারওয়াল, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাফুরা জারগার ও গুলফিসা ফতিমাকেও একই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার দায়ে গ্রেফতার করা হয়।
এফআইআর-এ বলা হয়েছে, উমর দু জায়গায় প্রকাশ্য বক্তৃতায় নাগরিকদের রাস্তায় বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ জানাতে এবং পথ-অবরোধ করতে উস্কানি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময়, যাতে ভারতে মুসলিমরা কী ভাবে নিগৃহীত হচ্ছে, সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচার করা যায়।
বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সৃষ্টি করতে সযত্নে দাঙ্গা লাগানো হয়
দিল্লি পুলিশ ৭৫১টি এফআইআর দায়ের করেছে এবং তিনটি আলাদা-আলাদা দল দাঙ্গার তদন্ত চালাচ্ছে। দিল্লি হাইকোর্টের কাছে পেশ করা এক জবাবে পুলিশ জানিয়েছে, বিশেষ তদন্ত দল (অপরাধ শাখা) ৫৯টি মামলা, স্থানীয় পুলিশ ৬৯১টি মামলা এবং বিশেষ সেল ১টি মামলার তদন্ত চালাচ্ছে।
১৩ জুলাই পেশ করা জবাবে পুলিশ আরও জানিয়েছে, ''দাঙ্গাটি ছিল খুব পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা একটা ষড়যন্ত্র, যা আইনসম্মতভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের বার্তা প্রচার করে দেশে একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন কার্যকর করতে চাইছিল।"
আম আদমি পার্টির কাউন্সিলর তাহির হুসেনের একটি জবানবন্দি অনুযায়ী তিনি ৮ জানুয়ারি উমর খালিদ এবং ইউএএইচ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা খালিদ সইফির সঙ্গে সাক্ষাত্ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের সময়েই দাঙ্গা শুরু করার নীল নকশা তৈরি করেন। এই তাহির হুসেনই আবার দাঙ্গার সময় গোয়েন্দা ব্যুরোর অফিসার অঙ্কিত শর্মার খুনে মূল অভিযুক্ত।
বুম এখানে উমর খালিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি সবিস্তারে ব্যাখ্যা করলো।
আরও পড়ুন: নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোনয়ন: আপনি যা জানবেন