সুরা ব্যবসায়ী বিজয় মাল্যর ঋণ কী ভাবে বিপুল আকার ধারণ করলো? নীরব মোদী কী ভাবে ব্যাঙ্ক থেকে এত ধার পেলেন? রামলিঙ্গ রাজু কী ভাবে অসৎ পথে চলে গেলেন? সুব্রত রায় ভারতের গরিব মানুষদের থেকে টাকা তোলার জন্য কত লোক নিযুক্ত করেছিলেন?
নেটফ্লিক্সের 'ডকুসিরিজ' ব্যাড বয়েজ বিলিয়েনেয়ার্স: ইন্ডিয়া এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত, কিন্তু ভারতীয় দর্শকদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।
বিহারের আরারিয়ার নিম্ন আদালত এবং হায়দরাবাদের একটি দায়রা আদালত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সের আসন্ন 'ডকুসিরিজ' 'ব্যাড বয়েজ বিলিয়েনেয়ার্স: ইন্ডিয়া' দেখানো বন্ধ করে দিল। এই শোতে দেখানো চার জন চরিত্রের দু'জন আদালতে আবেদন পেশ করায় আদালত এই সিদ্ধান্ত নেয়। সত্যমের কর্ণধার রাজু এবং সাহারার শীর্ষকর্তা রায় এই সিরিজে তাঁদের বদনাম করা হয়েছে দাবি করে সিরিজ প্রকাশ করায় স্থগিতাদেশ আদায় করেছেন।
নেটফ্লিক্স নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে কিন্তু তাতে বিশেষ কিছু ফল পায়নি।
সুপ্রিম কোর্ট নেটফ্লিক্সকে বলে, "নিম্ন আদালত রায় দেওয়া হয়ে যাওয়ার পর আবেদন করার জন্য এটা সঠিক জায়গা নয়।" এই পরিস্থিতিতে ওই ডকুসিরিজ দেখানোর জন্য ওই রাজ্যের উচ্চতর আদালতে আবেদন করতে হবে।
অনলাইন শোয়ের উপর নিয়ম আরোপ করা
অনলাইনে দেখানো বিষয়ের উপর নিষেদ্ধাজ্ঞা জারি করার আবেদন নিয়ে দেশে কম পক্ষে দুটি হাই কোর্টে আবেদন জমা পড়েছে। এলাহাবাদ ও মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট এখনও কোনও আদেশ জারি করেনি। দিল্লি এবং কর্নাটক হাই কোর্ট এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এই সব অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যে ধরনের বিষয় দেখানো হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়মাবলি তৈরি করার জন্য কর্নাটক হাই কোর্ট কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
দিল্লি হাই কোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন জমা পড়ে এবং এই স্ট্রিমিং সার্ভিসের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টে রায় এখনও আসেনি বলে বম্বে হাই কোর্ট এই বিষয়ে একটি আবেদন স্থগিত রেখেছে।
নেটফ্লিক্সের এই শো বন্ধ করার নির্দেশ আসার পর ভারতে অনলাইন কনটেন্টের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ বিষয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
স্বনিয়ন্ত্রণ না কি সেন্সরশিপ?
এ বছরের শুরুর দিকে ফেব্রুয়ারি মাসে তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রক শীর্ষ আদালতকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে, অনলাইনে যে কনটেন্ট দেখানো হয় তা নিয়ন্ত্রণ করার বা ইন্টারনেটে কোনও কনটেন্ট আপলোড করার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কোনও এক্তিয়ার নেই।
জাস্টিস ফর রাইটস নামে একটি অসরকারি সংস্থার আনা আবেদনের উত্তরে তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রক এই হলফনামা দেয়। এই আবেদনের ভিত্তিতেই স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটের উপর নিয়ন্ত্রণ জারির আদেশ দেওয়া হয়।
প্রকাশ জাভড়েকরের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রক জানায়, "প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় যেমন তথ্য প্রযুক্তি আইন এবং নিয়মাবলির সঙ্গে সঙ্গে স্ব-আরোপিত বিধিনিষেধ আছে, এই সব গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে তেমনই প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার।"
নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম ভিডিও, হটস্টারের মত অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করার জন্য জাস্টিস ফর রাইটস ফাউন্ডেশন (জেএফআর) নামের অসরকারি সংস্থার আনা আবেদন দিল্লি হাই কোর্ট খারিজ করে দেয়। তার পর তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানায় এবং তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রক এই কথা জানায়।
এই বাদানুবাদে যে সব ওয়েবসিরিজ সমস্যায় পড়েছে
নেটফ্লিক্স অরিজিন্যাল গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কার্গিল গার্ল সমস্যায় পড়েছে। বিমানবাহিনীকে নেতিবাচক ভাবে দেখানো হয়েছে, তাই এই শোয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার দাবি নিয়ে জেএফআর এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দিল্লি হাই কোর্টে দুটি আলাদা আবেদন করে। দিল্লি হাই কোর্ট এই আবেদন
খারিজ করে দেয় এবং জানায়, "সশস্ত্র বাহিনীর জোর অনেক বেশি, তারা নিজেরাই নিজেদের খ্যাতি রক্ষা করতে পারবে।" আদালত জানায়, ছবিটি নিয়ে যদি বিমানবাহিনীর কোনও আপত্তি থাকে, তা হলে তাদেরই সেই আপত্তির কথা জানাতে হবে।
বেঞ্চ
বলে, " একটা বই বা সিনেমার ব্যপারে এত স্পর্শকাতরতা কেন? আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলি কি এতই দুর্বল?"
মে মাসে বীর দাস অভিনীত হাসমুখ থিক এই ধরনের সমস্যায় পড়ে। আইনজীবী আশুতোষ দুবে এই শোয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আদায় করতে ব্যর্থ হন। তিনি দাবি করেন যে এতে আইনজীবীদের অসম্মান করা হয়েছে। বিচারপতি সঞ্জীব সচদেব
জানিয়ে দেন, "কোনও ব্যক্তিগত ক্ষতি বা কোনও অধিকার খর্বিত হয়নি, যার ফলে তিনি এই শোয়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেতে পারেন।"
এ'রকম স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে দেখানো স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তৈরি কিছু শো আক্রমণের মুখে পড়ে। ২০১৮য় রিলিজ করা স্যাক্রেড গেমস ছিল দেশের প্রথম অরিজিন্যাল সিরিজ। সইফ আলি খান, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি, রাধিকা আপ্টের মত বড় তারকারা এই সিরিজে অভিনয় করেন। বিক্রম চন্দ্রের উপন্যাস থেকে নেওয়া এই গল্প কুকথায় ভর্তি। আট এপিসডের এই শোয়ে যৌনতা, ড্রাগ, নৃশংসতা, নগ্নতা পুরোমাত্রায় দেখানো হয়েছে। এই শোটি রিলিজ করার কয়েক দিন পরেই কংগ্রেস নেতা নিখিল ভাল্লা দিল্লি হাইকোর্টে কয়েকটি আপত্তিকর দৃশ্য সরিয়ে ডেওয়ার জন্য আবেদন করে। সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। সিদ্দিকির চরিত্র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে অসম্মাঞ্জনক শব্দ ব্যবহার করায় ভাল্লা ক্ষুব্ধ হন এবং তাঁর মতে, "বোফর্স মামলা, শাহ বানো মামলা, বাবরি মসজিদ এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো দেশের কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাকে ভুল ভাবে দেখানো হয়েছে।" তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
লায়লা, ঘুল, এবং কমেডিয়ান হাসান মিনহাজের স্ট্যান্ড আপ শো একইরকম
বিক্ষোভের মুখে পড়ে।
শেষ অস্ত্রটি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই
যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সদিচ্ছার ওপরই নির্ভর করতে চায়, কিন্তু ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা আছে যে তারা চাইলে কোনও বিশেষ পরিস্থিতিতে কোনও অনুষ্ঠানের সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে পারে, বিশেষত যেখানে দেশের সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদিও অনলাইন কনটেন্টকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনও সার্বিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের নেই, এবং "বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের বিচারাধীনও নয়", কেন্দ্রীয় সরকার প্রাথমিক ভাবে নির্ভর করতে পারে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯এ ধারাটির ওপর। এই ধারাটি পরিচিত 'কিল সুইচ' নামে, অর্থাৎ সরকারের মতে যদি কোনও ইউআরএল আপত্তিজনক হয়, তবে তা এই ধারাটির মাধ্যমে ব্লক করে দেওয়া যেতে পারে।
আত্মনিয়ন্ত্রণ বলে আসলে কিছু নেই
ভারতে ৩৫-৪০টি স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট আছে। তার মধ্যে মাত্র ন'টি ২০১৯ সালে আত্মনিয়ন্ত্রণ বিধিতে স্বাক্ষর করেছিল। এক বছের মধ্যেই আবার পাঁচটি ওয়েবসাইট
সেই চুক্তি থেকে সরেও আসে।
ভিক্টর ট্যাঙ্গো এন্টারটেনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা-নির্দেশক বৈভব মোদী বললেন, আত্মনিয়ন্ত্রণ বলে আসলে কিছু হয় না। "প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত কনটেন্ট দেখা অপরাধ নয়। যেখানে দর্শক নিজেদের কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চান না, সেখানে আমাদের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের কথা বলে কী লাভ?" প্রশ্ন করলেন বৈভব। তাঁর নির্মিত ওয়েব কনটেন্টের মধ্যে আছে ইটস নট দ্যাট সিম্পল (ভুট), বেকাবু (অল্ট বালাজি), দ্য স্টোরি (জি ফাইভ) ইত্যাদি। এইচবিও-তে গেম অব থ্রোনস-এ যে প্রকাশ্য যৌনতার দৃশ্য রয়েছে, তার কথা উল্লেখ করে মোদী বললেন, "আপনি কানপুর বা লখনউ-এর কোনও পানওয়ালার কাছে যান, কুড়ি টাকায় পুরো সিরিজ দিয়ে দেবে— হিন্দিতে ডাব করা।"
"দর্শক সব রকম কনটেন্ট দেখতে চায়। যে মুহূর্তে কোনও একটি কনটেন্ট নিষিদ্ধ ঘোষিত হবে, তাঁরা সেটা দেখার অন্য রাস্তা বার করে ফেলবেন— ইউটিউব, টরেন্টের মতো জায়গায় দেখে নেবেন," বললেন মোদী। নাটক থেকে টেলিভিশন হয়ে ওয়েব সিরিজ, ভারতে বিনোদনের দুনিয়ার বহু পরিবর্তনের সাক্ষী মোদী বললেন, এই রকম কোনও নীতি তৈরি করারও কোনও অর্থ হয় না। "আইন বা নীতি প্রণীত হয়ে যত দিনে ব্যবহারিক স্তরে আসে, তত দিনে তার আর কোনও তাৎপর্য থাকে না। আজ বিনোদনের দুনিয়া এমন একটা স্তরে পৌঁছেছে যে, কোনও আইন তৈরি হয়ে আসার আগেই সেই দুনিয়া ততখানি বদলে যেতে পারে যাতে সেই আইনের আর কোনও গুরুত্ব না থাকে।"
অন্য চলচ্চিত্রনির্মাতা ও কনটেন্ট প্রোডিউসাররা জানালেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি এমনিতেও তাঁদের কনটেন্টের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। এই বিধি যেহেতু চরিত্রে একটি গাইডলাইনের মতো, কিছু চলচ্চিত্রনির্মাতা জানালেন, "প্রত্যেকটি প্ল্যাটফর্মেরই নিজস্ব নিয়মকানুন রয়েছে।"
ফিল্মমেকার ভব্য বোকারিয়া জানালেন, প্রচুর যৌনতার দৃশ্য রয়েছে, বা ছোট শহরকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে, এমন কনটেন্টে একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের কোনও আপত্তি নেই। বোকারিয়া হোয়াইট ম্যাটার নামে একটি হটস্টার অরিজিনাল সিরিজ তৈরি করেছেন। তিনি জানালেন, "এই চ্যানেলগুলি (স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম) বেসরকারি, এবং তাদের নিজস্ব দর্শক রয়েছে।" তিনি আরও বললেন, "অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য ছবি তৈরি করার সময় অনেক বেশি স্বাধীনতা পাওয়া যায়। গণ্ডিটাকে প্রসারিত করা যায়, তবে লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করা যায় না।"
লাস্ট স্টোরিজ-এর সহনির্মাতা আশি দুয়া জানালেন, ওয়েবে যদি সেন্সরের নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়, তবে এই প্ল্যাটফর্মগুলির আর কোনও আকর্ষণ থাকবে না। "ওয়েবের জন্য কোনও ছবি তৈরি করার সময় আপনি শুধু ভারতের সিনেমা বা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করছেন না, আপনার লড়াই গোটা দুনিয়ার কনটেন্টের সঙ্গে। যদি আপনার কনটেন্ট দর্শকের পছন্দ না হয়, তাঁরা স্রেফ বন্ধ করে দেবেন," দুয়া বললেন।
মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত দ্য ফ্যামিলি ম্যান ২-এর প্রযোজক সুপর্ণ ভর্মা জানালেন, "এখন যতটা শিল্পের স্বাধীনতা পাওয়া যায়, তা আগে কখনও ছিল না। এখন সব ধরনের কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের, প্রত্যেক ধরনের কনটেন্টের নিজস্ব দর্শক আছে। তার ফলে, দর্শকরা নিজেদের পছন্দের অনুষ্ঠানই বেছে নেন।"
আমাজন প্রাইম ভিডিও-র সিরিজ মির্জাপুরের প্রাইমারি ডিরেক্টর গুরমিত সিং বললেন, অনলাইন কনটেন্ট এখন অতিমাত্রায় ব্যক্তিমুখী। দর্শকরা সচেতন, এবং তাঁরা নিজেদের পছন্দ অনুসারেই অনুষ্ঠান দেখেন। "তাঁরা পর্দায় হিংস্রতা দেখলও জানেন যে ব্যক্তিজীবনে সেই হিংস্রতার অনুকরণ করতে নেই," বললেন গুরমিত।
অপসৃত কনটেন্ট
এমি-বিজয়ী স্যাটায়ার শো লাস্ট উইক টুনাইট উইথ জন অলিভার-এর একটি পর্ব হটস্টার
আপলোড করেনি। সেই পর্বে অলিভার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিষয়ে সমালোচনা করেছিলেন— তিনি ২০০২ সালে গুজরাতের দাঙ্গার সময় যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, 'ক্ষীণ ক্ষমাপ্রার্থনা' করেছিলেন, সে বিষয়ে— এবং, ভারতে নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোন ও ডিমনিটাইজেশনের প্রসঙ্গও এই অনুষ্ঠানটিতে এসেছিল।
অনুষ্ঠানে অলিভার মোদীকে বিভেদ সৃষ্টিকারী আখ্যা দেন এবং বলেন যে ডিমনিটাইজেশন আসলে একটি চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। ২০ মিনিটের এই এপিসোডে অলিভার আরও বলেন যে মোদী ও বিজেপি "ভারতের ইতিহাসের একটা বড় অংশকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন", এবং তিনি নয়া নাগরিকত্ব আইনকে "ভারতের কোটি কোটি মুসলমানকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার" এবং 'মারাত্মক ধুর্ত' চাল বলেন।
২০১৯ সালে আমাজন প্রাইম টি লিওনি অভিনীত ম্যাডাম সেক্রেটারি-র পঞ্চম সিজনের প্রিমিয়ার এপিসোডটি
সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। ই প্লুরিবাস ইউনুম শীর্ষক এই এপিসোডটিতে দেখানো হয়েছিল, লিওনি অভিনীতি সেক্রেটারি এলিজাবেথ ম্যাকর্ড চরিত্রটি ভারত ও পাকিস্তানকে একটি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সই করাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই এপিসোডেই আরও দেখানো হয়েছিল যে মুসলমানদের আক্রমণ করা উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার অত্যন্ত গা-ছাড়া মনোভাব নিয়েছে। এই বর্ণনাটি আপত্তিকর ঠেকাতেই এপিসোডটিকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
প্রথম
এনভায়রনমেন্টাল সোশ্যাল গভর্ন্যান্স রিপোর্টে নেটফ্লিক্স জানিয়েছে, সম্প্রচার শুরু করার পর তারা বিভিন্ন দেশে, সে দেশের সরকারের অনুরোধ বা নির্দেশ মেনে, মোট ন'টি শো বা সিনেমার সম্প্রচার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
"২০১৫ সালে আমরা নিউজিল্যান্ডের ফিল্ম ও ভিডিও লেবেলিং সংস্থার লিখিত নির্দেশ অনুসারে সে দেশের সার্ভিস থেকে দ্য ব্রিজ-কে সরিয়ে নিই। সে দেশে এই সিনেমাটি 'আপত্তিকর' হিসেবে চিহ্নিত," নেটফ্লিক্সের রিপোর্ট জানিয়েছে।
২০১৭ সালে ভিয়েতনামের সার্ভিস থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় স্ট্যানলি কুব্রিকের ১৯৮৭ সালের সিনেমা ফুল মেটাল জ্যাকেট-কে। সেই একই বছর জার্মানির সার্ভিস থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় দ্য নাইট অব দ্য লিভিং ডেড ছবিটি।
২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরের সার্ভিস থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় কোকেন অন হাই, দ্য লিজেন্ড অব ৪২০, এবং ডিসজয়েন্টেড, এই তিনটি ছবিকে।
২০১৯ সালে হাসান মিনহাজের সিরিজ প্যাট্রিয়ট অ্যাক্ট থেকে 'সৌদি আরবিয়া' নামক এপিসোডটি সৌদি আবরের সার্ভিস থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সে বছরই সিঙ্গাপুরের সরকার দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অব ক্রাইস্ট আর দ্য লাস্ট হ্যাংওভার নামের ছবিদুটি সে দেশের সার্ভিস থেকে সরাতে বাধ্য করে।
এখন থেকে নেটফ্লিক্স প্রতি বছর জানাবে, কোন দেশের সার্ভিস থেকে কোন অনুষ্ঠানটি সরিয়ে নেওয়া হল।