বিধ্বংসী আগুনে জ্বলতে থাকা উরি এলাকার অন্তত তিনটি বাড়ির ছবির ভিডিও ভুয়ো ক্যাপশন দিয়ে শেয়ার করে বলা হচ্ছে, এগুলি কাশ্মীরের বান্দিপোরা এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর লাগিয়ে দেওয়া আগুনের ছবি।
বুম খুঁজে বের করেছে, ২০১৮ সালে উরিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটির রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল এবং সেই ঘটনার সঙ্গেও সে সময় সেনাবাহিনীর কোনও সম্পর্ক ছিল না।
সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-এ ধারা রদ করে ভারত সরকার যখন জম্মু-কাশ্মীরের মানচিত্র নতুন করে আঁকছে, তখনই এই ভুয়ো ভিডিওটি বাজারে ছাড়া হলো।
আরও পড়ুন: ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা রদ হলো: জম্মু-কাশ্মীরের জন্য এর তাৎপর্য কী?
গত কয়েকদিন ধরেই ইন্টারনেট ও টেলিফোন পরিষেবা রাজ্যে বন্ধ রয়েছে এবং চার জনের বেশি এক জায়গায় জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারাও বলবত্ হয়েছে। "ভারত অধিকৃত কাশ্মীরকে মুক্ত করো" এই শিরোনামের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটি নীচে দেখতে পারেন এবং পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাড়িগুলি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে এবং নেপথ্যে "ইয়া আল্লা" বলে কাতর আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা: ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের বান্দিপোরায় কাশ্মীরিদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে আর বিশ্ব তা চুপ করে দেখছে।
ফেসবুকে আরও অনেক পেজে ভিডিওটি একই ক্যাপশন সহ শেয়ার হয়েছে।
তথ্য যাচাই
ফেসবুকের মূল পোস্টটির মন্তব্য অংশে খোঁজ চালিয়ে বুম দেখেছে, অনেকের উত্তরেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভিডিওটি পুরনো। যেহেতু গত কয়েকদিন ধরেই ইন্টারনেট পরিষেবা কাশ্মীর উপত্যকায় বন্ধ রাখা হয়েছে, তাই ভিডিওটির সত্যতা নিয়েও অনেকের মন্তব্যে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
"কাশ্মীরে আগুনে ভস্মীভূত বাড়ি"—এই শব্দগুলি বসিয়ে ইন্টারনেটে খোঁজ করে বুম ওই ভিডিওটি পায়নি। তবে একই ধরনের একটি ভিডিও পেয়েছে, যেটিকে কাশ্মীরের উরি'র ঘটনা বলে জানানো হয়েছে। এরপর আমরা আমাদের সন্ধান উরিতে কেন্দ্রীভূত করি এবং ভিন্ন কোণ থেকে তোলা একই ঘটনার ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
২০১৮ সালের ২৭ মার্চ ভিডিওটি আপলোড করে এটিভি জানাচ্ছে, এই দুর্ভাগ্যজনক অগ্নিকাণ্ডটি ঘটে উরি'র লাচিপোরা এলাকায়।
ইউটিউবে লোড হওয়া ভিডিওটি জানাচ্ছে, "২০১৮ সালের ২৭ মার্চ, মঙ্গলবার, উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলার উরি অঞ্চলের লাচিপোরা গ্রামে এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে চারটি বসতবাড়ি পুড়ে খাক হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় আগুন নেভানের জন্য কোনও দমকলের ব্যবস্থা নেই।"
ফেসবুকে পোস্ট হওয়া ভিডিও এবং ইউ-টিউবে আপলোড হওয়া ভিডিও, দুটিই ২০১৮ সালের, কেননা দুটিতেই নেপথ্য থেকে কাতর 'ইয়া আল্লা' আর্তি ভেসে আসতে শোনা যাচ্ছে।
বুম ওই একই অগ্নিকাণ্ডের ছবি সহ বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছে। প্রতিবেদনগুলি পড়তে পারেন এখানে, এখানে ও এখানে।
কাশ্মীর অবজার্ভার সংবাদপত্র জানাচ্ছে, আগুন প্রথম লেগেছিল গোয়ালঘরে, সেখান থেকে বসতবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। সম্ভবত সে জন্যই রিপোর্টে অন্তত ২০টি পালিত পশুরও আগুনে ঝলসে মরার খবর আছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টের ভিডিও থেকে বুমও একটি স্ক্রিনশট নেয়। দেখা যায়— ইউটিউবে আপলোড হওয়া ভিডিও আর ফেসবুকের ভিডিওটি হুবহু এক।
ভিডিওটি ২০১৮ সাল থেকেই অনলাইনে রয়েছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান ঘটনাবলীর কোনও রকম সংশ্রব নেই।
ভিডিওটি ২০১৮ সাল থেকেই অনলাইনে রয়েছে এবং এই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের বর্তমান ঘটনাবলীর কোনও রকম সংশ্রব নেই।
আরও পড়ুন: বিহারে মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপর পুলিসের লাঠিচার্জের ২০১৫ সালের ভিডিও কাশ্মীরের ঘটনা বলে শেয়ার করা হল