অভিনেতা অক্ষয় কুমারের একটি পুরনো ভিডিওর একটা ছোট্ট অংশ (যাতে তিনি পাকিস্তান বিষয়ে কথা বলছেন) সোশাল মিডিয়ায় তুলে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হচ্ছে, তিনি ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় নিহত শহিদ জওয়ানদের প্রতি অসংবেদী, সহানুভূতিহীন ।
২৩ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি দীর্ঘতর একটি ভিডিওর অংশমাত্র, যেটি ২০১৫ সালে তাঁর চলচ্চিত্র বেবি-র প্রিমিয়ারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তোলা । কুমারকে সেখানে ব্যাখ্যা করতে শোনা যাচ্ছে, কেন সন্ত্রাসবাদকে কেবল এককভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা যায় না ।
ভিডিওটি পাকিস্তানে ভাইরাল হয়েছে এই বিবরণী সহ যে, অবশেষে একটি যুক্তিপূর্ণ ভারতীয় কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে । বস্তুত একটি পাকিস্তানি সংবাদ-চ্যানেল ভিডিওটির উপর একটি আস্ত বুলেটিনই প্রচার করেছে ।
ভিডিওটির আর্কাইভ লিংক এখানে দেখুন ।
তথ্য যাচাই
২০১৫ সালে তাঁর ফিল্ম বেবি-র প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের এই ভিডিওটি বেশ দীর্ঘ । এর ৫ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের মাথায় অক্ষয় কুমারকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে । একজন সাংবাদিক তাঁকে বলছেন—“আপনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ কোনও একটা বিশেষ দেশের ব্যাপার নয় । কিন্তু যখনই সন্ত্রাসবাদের কথা উঠছে, তখনই তাতে পাকিস্তানের নামও উঠে আসছে…”।
জবাবে অক্ষয় কুমার বলছেন—“ব্যাপারটা মোটেই সে রকম নয় l সন্ত্রাসবাদ কোনও একটি দেশে হয় না । এটা একটা প্রবণতা । তার পরেই তিনি ব্যাখ্যা করেন, এটা যেমন ভারতেও আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছে, অস্ট্রেলিয়াতে আছে, ফ্রান্সে আছে, তেমনই পেশোয়ারেও আছে । কোনও দেশ নয়, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর লোকেরা সন্ত্রাসবাদ ছড়ায় ।”
তখন এক সাংবাদিককে বলতে শোনা যাচ্ছে—“আপনি বলছেন সন্ত্রাসবাদ কোনও দেশের ব্যাপার নয়, এটা সর্বত্রই রয়েছে । তাই কি পাকিস্তান এই ছবিটি নিষিদ্ধ করেছে?” অক্ষয় কুমার প্রশ্নটির সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান । তিনি বলেন—“এর উত্তর ওঁরাই দিতে পারবেন । আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না । আমার এ বিষয়ে কোনও ধারণাও নেই । সত্যি বলতে কি, আমি এটাও জানি না যে ছবিটি সেখানে আদৌ নিষিদ্ধ হয়েছে, কি হয়নি ।” বেবি ছবিটি অবশ্য নিষিদ্ধ হয়েছিল পাকিস্তানের সেন্সর বোর্ড সেটিকে মুক্তির ছাড়পত্র না দেওয়ায় ।
পরে অবশ্য সন্ত্রাসবাদকে কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন—“আমরা যদি এটা নিয়ে আলোচনা করি, তাহলে মানুষের চেতনা বাড়ে । লোকে তখন জানতে পারে । আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ছবিটি দেখেছে । আডবাণীজিও দেখেছেন । প্রতিটি ভারতীয়েরই এই ছবিটা দেখা অবশ্যকর্তব্য এবং ছবিটা ঠিক সময়েই মুক্তি পাচ্ছে ।”
পুরো ভিডিওটি নীচে দেখুনঃ
কুমারের বক্তব্যের প্রশংসায় পাক নেটিজেনরা
পুলওয়ামার জঙ্গি হানাদারির পর দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানে ওই ভিডিওর কাটছাঁট করা ২২ সেকেন্ডের ফুটেজটি ভিন্ন-ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে । বেশ কয়েকজন ভারতীয় কুমারকে পাকিস্তানপন্থী বলে শনাক্ত করেছেন এবং পুলওয়ামার হামলার পরেও ভারতের তরফে কোনও পাল্টা জঙ্গি প্রতিক্রিয়ার কথা অস্বীকার করেছেন । অন্য দিকে পাকিস্তানের অনেকেই ঘটনার পর ভারতে পাকিস্তানের প্রতি যে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে, তার পটভূমিতে কুমারের বক্তব্যকে একমাত্র যুক্তির কণ্ঠস্বর বলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ।
কাটছাঁট করা ভিডিওটি পোস্ট করার সময় তাঁরা অক্ষয় কুমারকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন । কেউ-কেউ তো তাঁর এই বক্তব্যের পর স্বদেশে তাঁর নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন । ওঁদের করা পোস্টের ক্যাপশনগুলি হলুদ রঙে দাগানো রয়েছেঃ
নীচে পাকিস্তানের করাচির স্পেশাল ব্রাঞ্চ-এর পুলিশ প্রশিক্ষক মেহের খান দুরানির পোস্টটি দেখা যেতে পারেঃ
ভারতীয়দের অবশ্য অভিমত, কুমারের বক্তব্যটি তাঁর কুরুচির পরিচায়কঃ