২০২০ সালে ভুয়ো খবরের হাতে মারা পড়েও জীবিত আছেন যে খ্যাতনামা মানুষরা
২০২০ সালে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের মৃত্যু হল। কিন্তু অনেক জীবিত প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বের মৃত্যু হয়েছে বলে ভুয়ো খবরও ছড়িয়েছে।
২০২০ সাল কতটা কঠিন ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গায়ক এস পি বালসুব্রমনিয়ম থেকে অভিনেতা ইরফান খান, ঋষি কাপুর, সুশান্ত সিং রাজপুতের মতো বহু বিখ্যাত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ তাঁদের মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছে। আবার অন্য দিকে আমরা দেখেছি, ক্রিকেটার কপিল দেব, অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ মারা গেছেন বা হেমা মালিনী খুব অসুস্থ বলে ভুয়ো খবরও রটেছে।
২০২০ সালে ৫ জন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে যে গুজব ভাইরাল হয়েছে বুম সে সম্পর্কে বিশদে জানাচ্ছে:
১। নাসিরুদ্দিন শাহ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন
২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে ইরফান খান এবং ঋষি কাপুর এই দুই বিখ্যাত বলিউড অভিনেতার মৃত্যু হয়। ২৯ এবং ৩০ এপ্রিল পর পর দুদিনে তাঁরা দুজন মারা যান। তাঁদের মৃত্যুর শোক সামলাতে না সামলাতে নাসিরুদ্দিন শাহ হাসপাতালে ভর্তি বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
ভাইরাল হওয়া মেসেজে দাবি করা হয় যে, অনেক দিন ধরেই শাহ অসুস্থ এবং ৩০ এপ্রিল তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভারত সমাচার, যাদের প্রায় ২ লাখ ফলোয়ার রয়েছে, প্রথম টুইট করে জানায় যে, শাহকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুম শাহের দীর্ঘ দিনের সেক্রেটারি জয়রাজ পাটিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে, এই প্রবীন অভিনেতা ভাল আছেন এবং লকডাউনের কারণে তিনি পুনে ও কারজাতের মধ্যে অবস্থিত তাঁর ফার্ম হাউসে আটকে রয়েছেন। শাহ এবং তাঁর ছেলে ভিভান শাহ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই খবর ভুয়ো বলে জানিয়ে দেন।
২। হেমা মালিনীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে
অমিতাভ বচ্চন এবং তাঁর পরিবার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই গুজব ছড়ায় যে, হেমা মালিনী হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা্র জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এই গুজবের সঙ্গে হেমা মালিনীর ২০১৫ সালের একটি অ্যাক্সিডেন্টের সময়কার ছবি দেওয়া হয় এবং সঙ্গে দাবি করা হয় যে, অভিনেতা ধর্মেন্দ্র ও তাঁদের কন্যা এষা এবং অহনা তাঁদের মায়ের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
বুম স্বয়ং হেমা মালিনীর সঙ্গে কথা বলে এবং তিনি জানান যে তিনি একদম ভাল আছেন।
অভিনেত্রী ইনস্টাগ্রামে তাঁর এবং পরিবারের ভিডিও আপলোড করেন ও তাঁর ভক্তদের টুইট করে জানান যে তিনি একদম ভাল আছেন।
৩। হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে কপিল দেবের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে গুজব ছড়ায়
২৩ অক্টোবর কপিল দেবের একটি হার্ট অ্যাটাক হয় এবং তার পর সফল ভাবে তাঁর অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টিও হয়। এর কিছু দিন পরেই ফেসবুকে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। তিনি মৃত ধরে নিয়ে তাঁর বহু ভক্ত এই খ্যাতনামা ক্রিকেটারকে শেষ বিদায়ও জানান।
বুম এই গুজবের তথ্য যাচাই করে এবং একটি ভিডিও দেখতে পায় যেটি কপিল দেব নিজে টুইট করেছেন এবং যাতে তিনি সকলকে জানিয়েছেন যে, তিনি আগের চেয়ে ভাল আছেন এবং দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই প্রাক্তন অধিনায়ক ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে তাঁর দলের সতীর্থদের অভিনন্দন জানান এবং সবাইকে তাঁদের শুভেচ্ছার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এখানে আরও পড়ুন।
৪। মুলায়ম সিং যাদবের মৃত্যু বিষয়ক গুজব
উত্তরপ্রদেশের আওরিয়ার বিধান পরিষদের এক সদস্যের মৃত্যু নিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হইচই হল। কারণ, তাঁর নাম মুলায়ম সিং যাদব।
তাঁর মৃত্যুতে গুজব ছড়ায় যে, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের মৃত্যু হয়েছে। এই গুজব আরও বড় আকার ধারণ করে যখন উইকিপিডিয়ায় সমাজবাদী পার্টির প্রধানের পেজে সংশোধন করার আগে দুবার আপডেট দেওয়া হয়। যে এমএলসি মারা যান, তিনিও সমাজবাদী পার্টির সদস্য। ওই দলের সরকারি পেজ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। কিন্তু সেখানে প্রয়াত ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি তার ফলে বিভ্রান্তি বাড়ে এবং গুজব আরও বেশি ভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র অনুরাগ ভাদুড়িয়ার সঙ্গে কথা বলে বুম এই গুজবের তথ্য যাচাই করে। তিনি জানান যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব বেঁচে আছেন, এবং ৯২ বছরের এমএলসি— যাঁর নামও মুখ্যমন্ত্রীর নামে— তাঁর মৃত্যুতে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
বিশদে জানতে এখানে দেখুন।
৫। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গেছেন দাবি করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ৯ ডিসেম্বর এই বামপন্থী নেতা অসুস্থ হওয়ার পর এই পোস্টটি ভাইরাল হয়।
পোস্টটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে দেখে মনে হয় যে, এই পোস্টের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। পোস্টের সঙ্গে থাকা বাংলা ভাষায় লেখা টেক্সটে লেখা হয়, "আমাদের সকলের প্রিয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর তাঁর বাড়িতে নেই, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।" পোস্টটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, তাতে খুব ছোট করে লেখা তিনি তাঁর বাড়িতে আর নেই এবং তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে কথাগুলি প্রায় পড়া যাচ্ছে না।
এই সিপিআইএম নেতাকে ৫ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এখানে বুমের তথ্য যাচাই পড়ুন।