মঙ্গলবার কংগ্রেস পার্টি ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য তাদের ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করেছে। তাতে অনেক বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে ন্যূনতম আয় গ্যারান্টি স্কিম বা ‘ন্যায়’ সহ কৃষির জন্য আলাদা বাজেট।
কংগ্রেস ম্যানিফেস্টোর পাঁচটি প্রস্তাব, যেগুলি তারা ক্ষমতায় এলে বাস্তবায়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলির ওপর আলোকপাত করছে বুম।
১) Nyuntam Aay Yojana (NYAY) বা ন্যুনতম আয় যোজনা বা ‘ন্যায়’
বহু আলোচিত ন্যায় প্রকল্প, যেটি কংগ্রেস এক সপ্তাহ আগে ঘোষণা করে, সেটি স্থান পেয়েছে পার্টির ম্যানিফেস্টোয়। ‘কোনও ভারতীয় পরিবার বাদ পড়বে না’ — এটাই হল ওই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
(“2030 সালের মধ্যে চরম দারিদ্র দূর করার জন্য, কংগ্রেস ন্যূনতম আয় যোজনা বা ‘ন্যায়’ চালু করবে, যার ফলে ভারতের দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবার বছরে ৭২,০০০ টাকা উপার্জন করতে পারবে”।)
কংগ্রেস আশা করছে তারা এই প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি পরিবারকে আনতে পারবে, যারা ভারতের ২০ শতাংশ দরিদ্রতম পরিবারগুলির মধ্যে পড়ে। ওই পরিবারগুলির প্রতিটিকে বছরে ৭২,০০০ টাকা সরাসরি দেওয়া হবে।
২) চাকরির ওপর ফোকাস
কংগ্রেস ম্যানিফেস্টোর প্রথম অংশ জুড়ে আছে ‘চাকরি’। এই বিষয়েই তারা বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে চলেছে। অভিযোগ, তাদের শাসনকালে চাকরি সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি সরকার।
• মার্চ ২০২০’র মধ্যেই ৪ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারের আর নানা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পুরণ করা হবে
• স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পঞ্চায়েতে আর পৌরসভা খাতে রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় অর্থ দেওয়ার পূর্ব শর্তই হবে ওই দুই সেক্টর আর স্থানীয় সংস্থাগুলিতে আনুমানিক ২০ লক্ষ শূন্য পদ পুরণ করতে হবে
• প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পৌরসভা মিলিয়ে ১০ লক্ষ ‘সেবা মিত্র’ পদ সৃষ্টি করতে হবে
• ১ কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করার জন্য চালু করা হবে ‘ওয়াটারবডি রেস্টরেশন মিশন’ ও ‘ওয়েস্টল্যান্ড রিজেনারেশন মিশন’ বা ‘জলাভূমি পুনরুদ্ধার অভিযান’ ও ‘পতিত জমি পুনরুজ্জীবন অভিযান’
৩) কৃষকদের ঋণখেলাপিকে ফৌজদারি অপরাধের বদলে সিভিল অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে
কংগ্রেস কেবল কৃষকদের ‘ঋণ মকুব’ (কর্জ মাফ) করার প্রতিশ্রুতিই দেয় নি বরং ‘ঋণ মুক্তি’র (কর্জ মুক্তি) কথাও বলেছে। ম্যানিফেস্টোয় বলা হয়েছে ন্যায্য দাম, উৎপাদন ব্যয় কমানো, এবং প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে এই লক্ষে পৌঁছতে চায় কংগ্রেস।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতিতে কংগ্রেস বলেছে যে, কোনও কৃষক যদি ঋণ ফেরত না দিতে পারে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হবে না। যা করা হবে তা সিভিল কেস।
৪) এফএসপিএ-র সংশোধন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা আইন অপসারণ, মানহানিকে ফৌজদারি অপরাদের বদলে সিভিল অপরাধ হিসেবে গণ্য করা
(“সব আইন, নিয়ম আর বিধানের পুনর্মূল্যায়ন করবে কংগ্রেস। যেগুলি সময়োপযোগী নয়, বা অন্যায্য বা মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করে, সেগুলি বাতিল করা হবে”)
‘আইনের পুনর্মূল্যায়ন’ অনুচ্ছেদে কংগ্রেস বলেছে যে, তারা সেই সব ফৌজদারি আইন যেগুলি মূলত সিভিল অপরাধের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, সেগুলি বদলে ফেলা হবে।
• ‘মানহানি’, যা ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৯ ধারার আওতায় আসে, সেটিকে সিভিল অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে
• আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট, ১৯৫৮, সংশোধন করা হবে, যাতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর ক্ষমতা আর মানবাধিকারের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য আনা যায় এবং কোনও ব্যক্তিকে জোর করে নিরুদ্দেশ করে দেওয়া, যৌন নির্যাতন, এবং অত্যাচারের ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষাবাহিনীর যে রক্ষাকবচ আছে তা নাকচ করা যায়।
• ভারতীয় দন্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহিতা সংক্রান্ত ১২৪এ ধারা বাতিল করা।
৫) নীতি আয়োগ বাতিল
ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস নীতি আয়োগ বাতিল করে দেবে, কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গাঁন্ধীর এই ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই ওই প্রস্তাব কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টোয় ‘সুশাসন — গুড গাভারনেন্স থ্রু ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবল ইনিস্টিটিউশন’ বা স্বাধীন ও দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুশাসন অনুচ্ছেদে স্থান পায়।
7বিজেপি সরকার ২০১৫ সালে প্ল্যানিং কমিশনের জায়গায় নীতি আয়োগ স্থাপন করে। প্ল্যানিং কমিশন গঠিত হয় মার্চ ১৫, ১৯৫০ সালে, আর তার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।