Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available

Explore

HomeNo Image is Available
AuthorsNo Image is Available
Contact UsNo Image is Available
MethodologyNo Image is Available
Correction PolicyNo Image is Available

Languages & Countries :






More about them

ফ্যাক্ট চেকNo Image is Available
বিশ্লেষণNo Image is Available
ফাস্ট চেকNo Image is Available
আইনNo Image is Available
বিশ্লেষণ

নানা ভাষা, নানা মতে বাঙালির মাতৃভাষা কি বাংলাদেশি?

‘বাংলা’ নামের কোনও ভাষা আছে কিনা জানতে ভাষাতত্ত্ববিদ ও অধ্যাপকদের সাথে কথা বলল বুম।

By -  Srijit Das |

6 Aug 2025 4:15 PM IST

'বাংলাদেশি ভাষা'র অনুবাদক চেয়ে দিল্লি পুলিশের এক চিঠি বিতর্কে সম্প্রতি বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য দাবি করেন, 'বাংলা' বলে আসলে কোনও ভাষাই নেই যার মধ্যে সব প্রকারের উপভাষা থাকতে পারে। মালব্য বলেন, 'বাঙালি' কথাটি জাতিগত ঐক্য বোঝায়, ভাষাগত নয়।

গোটা বিতর্কের সূত্রপাত, দিল্লির লোধি কলোনি থানার লেখা এক চিঠিকে ঘিরে, যা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেসিডেন্ট কমিশনারের দফতর, বঙ্গ ভবনের উদ্দেশ্যে লেখা হয়। ওই চিঠিতে বাংলাকে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলে উল্লেখ করায় তীব্র প্রতিবাদ জানান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

গত কয়েকদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণে বহু অভিবাসী সমস্যার মুখে পড়েছেন - এমন নানা ঘটনার খবর উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। অন্যদিকে, রাজনীতির আঙিনার বাইরেও, বাংলাকে 'বাংলাদেশি ভাষা' বলার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন কলাকুশলী থেকে বাংলার সাধারণ মানুষজন। প্রশ্ন ওঠে, কেবলমাত্র বাংলা ভাষা বলার কারণেই কি কাউকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা সম্ভব? তাছাড়া, বিজেপি আইটি সেলের প্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলা বলে সত্যিই কি কোনও ভাষা নেই?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষার অধ্যাপক ও ভাষাতত্ত্ববিদের সাথে কথা বলে সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজল বুম।

বাংলা বাঙালির ভাষা

বাংলা ভাষা নিয়ে অমিত মালব্যর মন্তব্য প্রসঙ্গে বুম যোগাযোগ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জয়দীপ ঘোষের সাথে। মালব্যর দাবি খণ্ডন করে জয়দীপ জানান, "প্রথমতঃ, বাংলা সরকারিভাবে স্বীকৃত একটি ভাষা। পৃথিবীর সব ভাষারই এমন নানা ধরণ, রূপ, বৈচিত্র্য থাকে যাকে ডায়ালেক্ট বলা হয়। কোচবিহার কিংবা চট্টগ্রাম, পুরুলিয়া কিংবা ঢাকার বাংলা ভাষার যে পার্থক্য তা ওই ডায়ালেক্টের পার্থক্য মাত্র। ফলে কলকাতার মানুষ বাংলা বলেন, ঢাকার মানুষও বাংলাই বলেন। এদের ভিন্ন-ভিন্ন ভাষা-নামে ডাকা সম্পূর্ণ অন্যায্য ও অন্যায়।"

জয়দীপ বলেন, "নতুন কোনও ভাষা তখনই জন্মায় যখন এই ডায়ালেক্ট এতটাই বদলে যায় যে তাকে ভূতপূর্ব ভাষার ছাতার তলায় রাখা যায় না। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে আমরা এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, বাংলার ক্ষেত্রে এই বদল এতদূর অবধি হয়নি, যার উপর ভিত্তি করে তার নতুন নামকরণ করা যায়। বাংলা ভাষার উৎপত্তি মূলতঃ মাগধী প্রাকৃত থেকে।"

বুম এরপর বাংলা ভাষার ইতিহাস, বিস্তার এবং তার ভিত্তিতে ব্যক্তির নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তোলা সম্ভব কিনা তা জানতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সমীর কর্মকারের সাথে কথা বলে। সমীর জানান, ভাষার ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব বিচার শুধুমাত্র বৈষম্যপ্রবণ নয়, মানবিক দিক থেকেও বিপজ্জনক।

বাংলা ভাষার প্রকারভেদ ও তার বিস্তার

সমীর বলেন, "ভাষার ভিত্তিতে ভারত ও বাংলাদেশের বাংলাভাষীদের মধ্যে আমরা কোন সীমারেখা টানতে পারব না। বাংলা ভাষা কোনও একক, প্রমিত সত্তা হিসেবে নয়, বরং বিভিন্ন ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক সীমানা পার করে তা ভাষাগত এক ধারাবাহিকতা হিসেবে বিদ্যমান। এই অঞ্চলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, বাংলাদেশের কিছু অংশ এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জও পড়ে। প্রতিটি অঞ্চলের বাংলা উপভাষার নিজস্ব উচ্চারণ, শব্দ আর বাক্য গঠনের ধরণ রয়েছে।"

"বাঙালিত্ব কেবল ভাষার ছোট ছোট পার্থক্য দিয়ে বোঝানো যায় না। এটা বহু বছরের ইতিহাস, ভাষাগত গঠন আর সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতার ফসল। বাংলার যত উপভাষাই থাকুক, সেগুলোর মধ্যে এক ধরণের গভীর সংযোগ রয়েছে, যেটা একধরনের ঐক্য তৈরি করে," জানান সমীর।

ভাষার পার্থক্যের মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করা যায় কিনার উত্তরে ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক জানান, "ভাষার ধরণে যে পার্থক্য দেখা যায় - যেমন উচ্চারণ, শব্দচয়ন বা বাক্য গঠনের ভিন্নতা - সেগুলো দিয়ে কারোর পরিচয় বা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে শনাক্ত করার চেষ্টা করা উচিত নয়। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর ভাষায় এই ধরনের পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, কারণ সেখানে বহু বছর ধরে মানুষের যাতায়াত, বাণিজ্য, বিবাহ আর সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়েছে।"

সমীর বলেন, "ভাষাগত এই পার্থক্যকে নজরদারির কাজে ব্যবহার করা শুধুমাত্র গবেষণার দিক থেকে ভুল নয়, মানবিক দিক থেকেও খুবই বিপজ্জনক। এতে বৈষম্য তৈরি হতে পারে, আর ভবিষ্যতে এরকম কিছু ঘটলে তা এক ভয়ংকর দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে।"

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপকের বক্তব্য, "আজকের দিনে যদি কারোর আঞ্চলিক ভাষা বা উচ্চারণ দেখে তাকে সন্দেহ করা হয় বা অবৈধ ভাবা হয়, তাহলে সেটা পুরনো ঔপনিবেশিক চিন্তা আবার চালু করার মতো। এটা যেমন যুক্তির দিক থেকে ঠিক নয়, তেমনি নীতিগত দিক থেকেও ভুল। আমাদের মতো একাধিক ভাষা ও সংস্কৃতির সমাজে ভাষাগত পার্থক্য কোনও চিন্তার বিষয় নয়, বরং এটা আমাদের একসাথে থাকার ইতিহাস, অভিজ্ঞতা আর মানিয়ে চলার ক্ষমতার প্রমাণ।"

ইতিহাসে বাংলা ভাষা

সমীর জানান, বাংলা ভাষা অনেক দিনের ধারাবাহিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। বাঙালির মাতৃভাষার গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে তিব্বতি-বর্মী, অস্ট্রোএশিয়াটিক, দ্রাবিড় ও ইন্দো-আর্য ভাষার বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের যোগাযোগ। তাই বাংলা ভাষাকে আলাদা করে বোঝা যায় না, বরং, উপমহাদেশের ভাষাগুলোর মধ্যে আদান-প্রদান, মিল-মিশ আর রূপান্তরের বড় দৃশ্য থেকেই তাকে বোঝা উচিত বলেই অভিমত অধ্যাপকের।

দেশভাগের ক্ষেত্রে ভাষা হিসাবে বাংলা কোনও ভূমিকা পালন করেছিল কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে সমীর বলেন, ব্রিটিশ শাসকেরা যখন অবিভক্ত বাংলা ভাগ করেছিলেন, তখন তারা বাংলার ভেতরে গড়ে ওঠা সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের গুরুত্ব দেননি। তিনি জানান, "১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। ধর্মের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ভাষার ভিত্তিতে নয় - যেটা আসলে মানুষকে বেশি একসাথে বেঁধে রাখতে পারত। বাংলাভাষী মানুষের ইচ্ছাকে এই বিভাজন গুরুত্ব দেয়নি।" 

 "বহু বছর ধরে তারা একসাথে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসভিত্তিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে আসছিল। নতুন করে টানা সীমান্তগুলো এই অঞ্চলের মানুষের মনের ও চিন্তার বন্ধনকে ভাঙতে পারেনি, কারণ আভ্যন্তরীণ অনেক বৈচিত্র্য থাকলেও ভাষা এবং সংস্কৃতির একটা গভীর সংযোগ তখনও রয়ে গিয়েছিল," বলে জানান সমীর।

শুধুমাত্র বাংলাতে নয়, অন্য ভাষায়ও রয়েছে এমন নজির 

বুমের সাথে কথোপকথনে ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক জানান, একই ধরণের উদাহরণ হিন্দি ও উর্দু ভাষার ক্ষেত্রেও দেখা যায়। তিনি বলেন, "হিন্দি ও উর্দু ভাষার লিপি এবং রাজনৈতিক পরিচয় আলাদা হলেও তারা একে অপরের কাছে বোধগম্য, আর ভারত ও পাকিস্তানের নানা সম্প্রদায়কে এখনও জুড়ে রেখেছে। ঠিক তেমনভাবেই, ভারত আর শ্রীলঙ্কায় যে তামিল ভাষা বলা হয়, সেটা ইতিহাস আর সংস্কৃতির একটা গভীর যোগসূত্রের প্রতীক। ভূ-রাজনৈতিক বিভাজন থাকলেও তা টিকে রয়েছে।"


Tags:

Related Stories