২০১৫ সালে অতি বৃষ্টির (Heavy Rain) জেরে বন্যায় চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান খ্যাত নদীয়া জেলার মায়াপুরে (Mayapur) অবস্থিত ইসকন মন্দির (ISKON) চত্বর ও উপাসনাস্থলের অংশ ডুবে যাওয়ার একগুচ্ছ ছবি সোশাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে।
বুম মায়াপুরের বাসিন্দা পেশায় পর্যটন গাইড সংকীর্তনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে ছবিগুলি পুরনো।
সপ্তাহজুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ডিভিসির মাইথন, পাঞ্চেত ও তেনুঘাট জলাধার থেকে প্রায় ২ লাখ কিউসেক জল ছাড়ার ফলে হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমান, বীরভূম এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ৩ অগস্ট ২০২১ আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, নদীয়া জেলার নবদ্বীপ, মায়াপুর, শান্তিপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় গঙ্গার জলস্তর বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। সেচ দফতর সূত্রে খবর, নদী পাড় সংলগ্ন কিছু জায়গা জলমগ্ন হয়েছে। জেলা জুড়ে নদীবাঁধগুলি উপর সেচ দফতর এবং প্রশাসনের তরফে নজর রাখা হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতেই ছবিগুলি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করার ফলে নেটিজেনরা ছবিগুলিকে সাম্প্রতিক বলে ভুল করছেন।
সোশাল মিডিয়া পোস্টে মায়াপুর মন্দির প্রাঙ্গনের ৯ টি জলমগ্ন ছবি শেয়ার করা হয়েছে। নৌকা চড়ে এবং কোমড় অবধি জলে ডুবে অনুগামীদের উপাসনা করতে দেখা যায়। ছবিগুলি শেয়ার করে ফেসবুকে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "মায়াপুর ইসকন মন্দির।"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকরভাবে ছড়াল ২০১৬ সালে পাঞ্জাবে ডোবা রাস্তায় চা চক্রের ছবি
তথ্য যাচাই
বুম মায়াপুরের বাসিন্দা পেশায় পর্যটন গাইড সংকীর্তন-এর সঙ্গে কথা বললে তিনি বুমকে নিশ্চিত করেন পুরনো ছবি ভাইরাল করা হয়েছে। তিনি বুমকে বলেন "এখন কোথাও এরকম কোনও পরিস্থিতি নেই। মায়াপুর কেন আশেপাশের নবদ্বীপের মন্দির জলে ডুবে যাওয়ার কোনও নাম ও নিশান নেই। প্রতিবছর একটু বৃষ্টি হলেই এই ছবিগুলি ভাইরাল হয়।"
২০১৫ সালে বন্যার ছবি
বুম 'মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে বন্যা' দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখতে পায় ছবিগুলি ২০১৫ সালের অগস্ট মাসের। নদীয়া জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে মায়াপুরের ইসকন মন্দির প্রাঙ্গন ও উপাসনাস্থল জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
বুম ২০১৫ সালের অগস্ট মাসের একাধিক ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পায়। ওই পোস্টগুলিতে ২০১৫ সালে শ্রী মায়াপুর ধাম প্লাবিত হওয়ার ব্যাপারে ছবি সহ ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। একরকম তিনটি ফেসবুক পোস্ট দেখা যাবে এখানে, এখানে ও এখানে।
আমরা মায়াপুর ডটকম ওয়েবসাইট-এ ২ অগস্ট ২০১৫ প্রকাশিত এক লেখায় বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ সাহায্যের ব্যাপারে আবেদন দেখতে দেখতে পাই। সেখানেই রয়েছে ভাইরাল হওয়া দুটি ছবি (দ্বিতীয় ও তৃতীয়)। ওই ওয়েবসাইটের অন্যান্য ছবিতেও মায়াপুর এলাকার অন্যান্য জলমগ্ন অঞ্চলের ছবি দেখা যায়।
বুম মায়াপুর ইসকন যাত্রা (Mayapur Iskcon Yatra) নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের অগস্ট মাসের একটি পোস্ট দেখতে পায়। ওই ফেসবুক পোস্টে ভাইরাল ছবিগুলি ব্যবহার করে ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয় ছবিগুলি ২০১৫ সালের। ওই পোস্টের ক্যাপশন লেখা হয় "ইসকন মায়াপুর মন্দির। ২০১৫ বন্যার ছবি। শ্রী ধাম মায়াপুর।"
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে উদ্ধৃত করে ৩ অগস্ট ২০১৫ দ্য ইকোনমিক টাইমস ও রেডইফ নিউজ ইসকন মন্দিরের মহাপ্রসাদ বিতরণ কক্ষের বাইরের ছবি ছাপে। ভক্ত অনুগামীদের নৌকায় চড়ে যেতে দেখা যায়। তৎকালীন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় রেডইফ নিউজকে বলেন অতিবৃষ্টির পর নতুন করে জল ছাড়ায় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
বৈষ্ণব সন্ন্যাসী ও ধর্মগুরু এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক শ্রী শ্রী চৈত্যদেব মহাপ্রভুর জন্মস্থান হিসেবে মায়াপুর ধাম খ্যাত। ১৯৬৬ সালে গৌড়ীয় বৈষ্ণব ও ভগবদগীতা ও ভগবত পুরাণ প্রভৃতি হিন্দু শাস্ত্রীয় মতাদর্শকে ভিত্তি করে করে স্বামী প্রভুপদ নিউইয়র্কে ইসকানের (International Society for Krishna Consciousness) স্থাপন করেন।
আরও পড়ুন: জলমগ্ন কাপড়ের শোরুমের ছবিটি মুম্বইয়ের নয়