ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ও জার্মানির মধ্যে কথাবার্তা আড়ি পেতে গুপ্তচর বৃত্তির জন্য আমেরিকার (USA) তৎকালীন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) (NSA) তৈরি বার্লিনের (Berlin) অচল আড়ি পাতা কেন্দ্রের (spy station) অ্যান্টেনার ভাইরাল হওয়া ছবিকে বলা হল, সেটি তুরস্কের (Turkey) এক মসজিদ।
ছবিটি দেখায় দূর থেকে ভগ্নপ্রায় অ্যান্টেনার বাইরের আচ্ছাদনের অংশ যা এনএসএ-এর গুপ্তচরবৃত্তি অংশ হিসেবে আড়ি পাততে তৈরি করা হয়েছিল বার্লিনের ২৬০ ফুট উঁচু পাহাড় টুফেলসবার্গ-এ।
ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ের এই কারিগরি নির্মানকে ভুলভাবে চিহ্নিত করে ফেসবুক পোস্টে হিন্দিতে লেখা হয়েছে, ''এটি হল তুরস্কের একটি মসজিদ। বাকি নক্সা দেখে ধারণা করা যায় ক্ষমতা। যেন ভুল ধারণা করবেন না, লাল কেল্লা, তাজমহল, কুতুব মিনার হিন্দুরা তৈরি করেছিল।''
(মূল হিন্দিতে পোস্ট: ये है टर्की की मस्जिद, बाकी डिज़ाईन से अंदाजा लगा सकते हैं इनकी औकात का, कोई भी इस गलतफहमी में ना रहे कि लालकिला, ताजमहल, कुतुबमीनार, इन्हीं महान जादूगरों ने बनाया होगा)
নিচে দেখুন ছবিটি।
২০২০ সাল থেকে ছবিটি ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হয়ে আসছে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: রাহুল গাঁধীর 'গোপন পরিবার' বিষয়ে খারিজ করা দাবি জিইয়ে উঠল
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির রিভার্স সার্চ করলে ২০১৩ সালে ও তারও আগে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পায়, ওই প্রতিবেদনগুলিতে একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
আমার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টর্সের ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ছবিটি দেখতে পায়। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে এনডিটিভি-তে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে একই ছবি ব্যবহৃত হতে দেখি।
ওপরের প্রতিবেদনগুলির সূত্র ধরে বুম রয়টর্সের পিকচার আর্কাইভ-এ ছবিটিকে খুঁজে পায়। ৫ নভেম্বর ২০১৩ ছবিটি তুলেছিলেন ফাব্রিজিও বেনসজ (Fabrizio Bensch)।
ছবিটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, "ছবিটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ''৫ নভেম্বর ২০১৩, তৎকালীন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সী (এনএসএ)-এর আড়ি পাতা কেন্দ্রের অ্যান্টেনাগুলি দেখা যাচ্ছে বার্লিনের টুফেলসবার্গ পাহাড়, বা শয়তানের পর্বতে। জার্মানির বিদেশ মন্ত্রক মঙ্গলবার জানায়, মন্ত্রণালয় ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এবং একটি রিপোর্টের ব্যাপারে আলোচনা করতে যে ব্রিটেন বার্লিনে গুপ্তচর কেন্দ্র চালাচ্ছে রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ের ছাদে উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্র বসিয়ে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইন্ডিপেন্ডেন্ট খবর প্রকাশ করেছে, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা নথি দেখায় যে ব্রিটেনের নজরদারি সংস্থা একটি নেটওয়ার্ক চালাচ্ছে বান্দেনস্ট্যাগ এবং জার্মান চ্যেন্সেলরের কার্যালয়ের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। রয়টর্স/ ফাব্রিজিও বেনসজ''
জার্মানির সরকারি গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে এই গুপ্তচর সংস্থার ইতিহাস সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা ঠান্ডা যুদ্ধের সময় পূর্ব জার্মানির আধিকারিকদের সোভিয়েত রেডিওতে বার্তালাপের নজরদারিতে এটি তৈরি করে। কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে প্রধানত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংস স্তূপ দিয়ে মানুষের হাতে তৈরি পাহাড়ের উপর।
এনএসএ-এর এই আড়ি পাতা কেন্দ্রটির আরও বিভিন্ন ছবি রয়টর্সের আর্কাইভে দেখা যাবে এখানে।
ব্লুমবার্গের বিশেষ প্রতিবেদনেও বর্তমানে অচল এই গুপ্তচর সংস্থারটির ব্যাপারে বলা হয়েছে যা ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে গুপচরবৃত্তির আস্তানা হয়েছিল।