সংবাদসংস্থা ইন্দো এশিয়ান নিউজ সার্ভিস (IANS) হায়দরাবাদে (Hyderabad) এক মহিলার সম্পর্কের জেরে মহিলার আত্মীয়দের হাতে একজন দলিতের (Dalit killing) হত্যাকে, ভিন্ন ধর্মে (inter faith relations) সম্পর্কের বিরুদ্ধে ‘সম্মান রক্ষার্থে’ হত্যা (honor killing) বলে খবর প্রকাশ করে।
দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট অপইন্ডিয়া হিন্দি, হিন্দু পোস্ট ও ইংরেজি দৈনিক ফ্রি প্রেস জার্নাল আইএএনএস-এর খবরের ওপর ভিত্তি করে ওই একই দাবি করে।
কিন্তু বুম স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে যে, ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার কোনও সম্পর্ক নেই। মৃত দেভারাকোন্ডা হরিশ ছিলেন একজন দলিত। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয় ওবিসি সম্প্রদায়ের এক মহিলার।
৩ মার্চ, ২০২৩ প্রকাশিত আইএএনএস-এর রিপোর্টে বলা হয়, “হায়দরাবাদের অদূরে, ভিন্ন ধর্মে বিয়ের জন্য এক যুবককে হত্যা করা হয়। সন্দেহ করা হচ্ছে, সম্মান রক্ষার্থেই এই হত্যা।”
অন্যান্য সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরাও ওই ঘটনা সম্পর্কে টুইট করে দাবি করেন যে, মুসলমান মেয়েকে বিয়ে করার জন্য এক হিন্দু ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।
টুইটটি দেখুন এখানে।
এরই মধ্যে, দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইট অপইন্ডিয়া হিন্দি ও হিন্দু পোস্টেও একই সাম্প্রদায়িক দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। হিন্দু পোস্ট অবশ্য লেখাটি পরে সংস্করণ করে নেয়।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে দাবিটি মিথ্যে। কারণ, ভিন্ন জাতের মধ্যে বিয়ে হওয়াকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে, ভিন্ন ধর্মের কারণে নয়।
২৮ বছর বয়সী দলিত যুবক দেভারাকোন্ডা হরিশ কুমার তাঁর বান্ধবী মনীশাকে (২৫) পালিয়ে বিয়ে করেন। মনীশা ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত। সেই জন্য দেভারাকোন্ডাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১ মার্চ, ২০২৩, হায়দরাবাদের পেটবাশীরাবাদ-এ মনীশার ভাই ও তার বন্ধুরা তাঁকে খুন করে।
কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে, আমরা তেলঙ্গানা হায়দরাবাদের ওই ঘটনা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি রিপোর্ট দেখতে পাই।
৪ মার্চ, ২০২৩ নিউজ মিনিট প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, “বাল্মীকি মেহতার সম্প্রদায়ের মেয়েকে, মালা সম্প্রদায়ভুক্ত ২৮ বছর বয়সী দলিত যুবক পালিয়ে বিয়ে করলে, তাঁকে হায়দরাবাদে কুপিয়ে মারা হয়। বাল্মীকি মেহতার হল একটি তফশিলি জাতি। পেটবাশীরাবাদ-এ দেভারাকোন্ডা হরিশ কুমার যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁকে আক্রমণ করে কুপিয়ে মারা হয়।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, “১ মার্চ, মনীশার ভাই জানতে পারে দুলাপল্লীর এক মন্দিরে ওই দম্পতি বিয়ে করছে। মনীশার ভাই, যাকে দীনদয়াল বলে শনাক্ত করা হয়েছে, ও তার বন্ধুরা মোটর সাইকেলে ওই দম্পতির পিছু নেয়। ওরা তাদের পথ আটকায় এবং হরিশকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করে। হরিশের মাথায় ও বুকে ছুরির আঘাত লাগে। ঘটনাস্থলেই উনি মারা যান।”
৬ মার্চ, ২০২৩-এ প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্টও দেখতে পাই আমরা। তাতে বলা হয় যে, সাইবারসিটি পুলিশ রবিবার এক বিবৃতিতে জানায় যে, ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ১১ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর পর, এই বিষয়ে আরও জানতে, বুম পেটবাশীরাবাদ থানার অফিসার গৌরী প্রশান্ত’র সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের নিশ্চিত করে জানান, ওই ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই।
তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনায় কোনও মুসলমান নেই। তারা একই ধর্মের। মৃত ব্যক্তি একজন তফশিলি জাতি এবং অভিযুক্তের বোন হলেন ওবিসি।”
পুলিশের যে বিবৃতিতে অভিযুক্তদের নাম রয়েছে, প্রশান্ত সেটিও আমাদের দেন।
ওই বিবৃতি অনুযায়ী, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের নাম হল: দীনদয়াল (২২), ত্রিমুখে নরেশ (২০), পেটলাচেরুভু ভেঙ্কটেশ গৌড় (২০), কালিভবানীওয়ালে রোহিত সিংহ (২০), ব্যান্ড ভেঙ্কট (এখনও পলাতক), গদ্দাম অক্ষয় কুমার (২২), পারওয়ারি অনিকেত (২১), কোয়ালকার মনীশ (২৩), বুরে সাইনাথ (২১), মাতঙ্গী রাজেন্দ্র কুমার (২৫), গৌটি নবনীতা (৩০)।