সংবাদসংস্থা এএনআইসহ (ANI) বিভিন্ন মূলধারার সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে যে ২০১৯ সালে বালাকোট হামলায় (Balakot Airstrike) ৩০০ জনের মৃত্যুর (Death) ঘটনা প্রাক্তন পাকিস্তানি কূটনীতিক (Pakistan Diplomat) জাফর হিলালি (Zafar Hilaly) স্বীকার করে নিয়েছেন। এই দাবি মিথ্যে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হিলালির পাকিস্তানি চ্যানেল হাম নিউজের (Hum News) সঙ্গে কথোপথনের একটি ভিডিও ক্লিপের (video clip) কথা উল্লেখ করা হয়েছে গণমাধ্যমের রিপোর্টে।
এবিপি আনন্দ, জি ২৪ ঘন্টা সহ প্রথম সারির গণমাধ্যমের পাশাপাশি একাধিক ওয়েবপোর্টাল একই ভ্রান্তির শিকার হয়, তার মধ্যে রয়েছে ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা, দ্য ওয়াল, এইচ টি বাংলা, বাংলা হান্ট, দ্য ইন্ডিয়া নিউজ, দিশা শক্তি নিউজ, বাংলা এক্সপি ডট কম ইত্যাদি।
তথ্য যাচাই
আমরা আজেন্ডা পাকিস্তান উইথ আমির জিয়া নামে একটি অনুষ্ঠানের একটি অংশের সন্ধান পাই, যেটি ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল। সেই ভিডিওর ৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের মাথায় হিলালিকে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে।
জিয়া অনু্ষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেওয়ার সময় জানান, হিলালি করাচি থেকে স্কাইপের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। ভারতের বিমানহানায় সত্যিই পাকিস্তানের অবৈধ জঙ্গি ডেরা ধ্বংস হয়েছে, হিলালি এই দাবিটির বিরোধিতা করেন।
তিনি বলেন, "আমাদের এই জাতীয় কথা স্বীকার করা উচিত নয়। কূটনৈতিক স্তরে কী ভাষায় কথা বলা হবে, আপনি সেই প্রশ্ন তুললেন। প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বললেন, সার্জিকাল স্ট্রাইক কথাটির অর্থ লিমিটেড টার্গেট, বা সীমিত লক্ষ্য। সীমিত কেন? আপনারা হামলা করতে এলে, এবং আপনাদে মতে একটা মাদ্রাসা, তোমাদের লক্ষ্য ছিল একটা মাদ্রাসা (কে আক্রমণ করা)। আপনাদের মতে, সেখানে ৩০০ ছেলে পড়াশোনা করত। আপনাদের সেখানেই আক্রমণ করতে হল। অর্থাৎ, আপনাদের ৩০০ লোককে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল। ৩০০ লোক!"
হিলালি আরও বলেন, "ওরা ওখানে ছিল না। ভুল বলা হয়েছে, ঘটনাটা ঘটেনি, অর্থাৎ যেটা দাঁড়াল তা হল, আমরা (অর্থাৎ ভারতীয় যুদ্ধবিমান) একটা ফুটবল মাঠে হামলা করল। এটা কি আদৌ ন্যায্য? ভারত, আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে এসে আপনারা যেটা করলেন, সেটা যুদ্ধের অংশ। ওনাদের কমপক্ষে ৩০০ লোককে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল। ঘটনাক্রমে ছেলেগুলি সেখানে ছিল না, তাই ওরা ফুটবল মাঠে বোমা ফেলে গেল। আমাদের লক্ষ্য ভিন্ন, হাইকম্যান্ড। সেটাই ন্যায্য লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল, কারণ ওরা সামরিক বাহিনীর অঙ্গ। কিন্তু আমরা আক্রমণ করলাম না। কারণ, আমরা অবচেতনেই স্বীকার করে নিলাম যে সার্জিকাল স্ট্রাইক, লিমিটেড অ্যাকশন (হয়নি)। আর দেখুন দেখুন, কেউ মারা যায়নি। কিছু কাক আর এগারোটা গাছ মারা পড়েছে। এটা কী হচ্ছে?"
কারচুপি ভিডিওতে ওল্টানো স্ক্রিনগ্র্যাব
বুম খেয়াল করে দেখে যে এই কারচুপি ভিডিওটি এডিট করার সময় কিছু গোলমাল করা হয়ছে, এবং অন্যান্য প্যানেলিস্ট ও অ্যাঙ্করের ছবিগুলি পাশাপাশি উল্টে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ভিডিওতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামরিক পোশাক পরিহিত একটি ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে, যা আসল ভিডিওটিতে ছিল না। নিচে দুটি ভিডিওর তুলনা দেখা যাবে।
জাফর হিলালি-র টুইটারে ব্যাখ্যা
একটি টুইটে হিলালি আসল ফুটেজটি শেয়ার করেন এবং স্পষ্ট করে জানান যে বালাকোট (Balakot) বিষয়ে তিনি এমন কোনও দাবি করেননি।
একটি ভুয়ো ভিডিওর ভিত্তিতে খবর করার জন্য হিলালি টাইমস অব ইন্ডিয়ার সমালোচনাও করেন। বুম হিলালির প্রতিক্রিয়া জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তিনি উত্তর দিলেই তা এই প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হবে।
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমানহানা চালায়। ভারতীয় যুদ্ধবিমান কাশ্মীরের বিতর্কিত অংশের ওপর দিয়ে উড়ে একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে হানা দেয়। বলা হয়ে থাকে যে ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুর জবাব দিতেই বালাকোটে হামলা চালানো হয়। ভারতের দাবি, এই হামলায় কয়েকশো জঙ্গি নিহত হয়েছে। পাকিস্তান হতাহতের সংখ্যা সংক্রান্ত ভারতের দাবি অস্বীকার করে।